শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই ছাড়ল নির্বাচনি ট্রেন

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৪ পিএম

শেয়ার করুন:

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই ছাড়ল নির্বাচনী ট্রেন
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা হলেও ভোটের মাঠের চিত্র এবার পুরোপুরি ভিন্ন। টানা ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের পতনের পর এবার নতুন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হচ্ছে নির্বাচন। রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের আপাতত ভোটে ফেরার সুযোগ নেই। তবে দলটির পলাতক নেতারা নির্বাচন প্রতিহতের কথা বলছেন। অন্যদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও কিছুটা অবনতির কারণে উদ্বেগ আছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।

অবশ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনও সেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের অবর্তমানে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে রাজনীতির ভেতরে-বাইরে।


বিজ্ঞাপন


যদিও সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তফসিল ঘোষণার সময় দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের অঙ্গীকার হচ্ছে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান। যা জাতি হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে। বিশ্বদরবারে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনারা একই প্রত্যাশা ধারণ করেন এবং একই অঙ্গীকারে অঙ্গীকারাবদ্ধ।’

এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এতদিন দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানানো হলেও সার্বিক পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগও শোনা গেছে নেতাদের কণ্ঠে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জামায়াতের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।

অন্যদিকে নির্বাচনী জনসংযোগকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রার্থীরা প্রচারণায় নেমে বাধার মুখে পড়ছেন। কোথাও হামলা, কোথাও গুলি, আর কোথাও খুনের ঘটনাও ঘটছে। এছাড়াও গত বছরের ৫ আগস্ট একযোগে থানা–ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া বিপুল অস্ত্রের বড় অংশ এখনো উদ্ধার না হওয়ায় নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


এর বাইরেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর মুক্তিপ্রাপ্ত তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততায় নতুন করে সহিংসতার খবরও মিলছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি নাসির উদ্দিন। প্রশ্ন উঠেছে- বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কমিশন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোট করতে কতটা সক্ষম হবে?

যদিও বিশ্লেষকদের মতে, তফসিল ঘোষণার হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো আসনকেন্দ্রিক প্রচারে আনুষ্ঠানিকভাবে নামতে শুরু করবে। এতে মাঠে কর্মী সমর্থকদের উপস্থিতিও বাড়বে, যা কিছুটা হলেও পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হবে। তবে সাম্প্রতিক সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সরকারকে আরো কঠোর নজরদারি রাখতে হবে।

তাদের মতে, ভোটের আগে বা ভোটের দিন যেকোনো সময় বড় ধরনের সহিংসতার ঝুঁকি রয়েই গেছে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ আসনগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগ নির্বাচন থেকে ছিটকে গেছে। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যে নির্বাচনে বাধা তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া ভোট হলে তা প্রতিহত করা হবে। ইতোমধ্যে দেশব্যাপী যুবলীগের পক্ষ থেকে কয়েকদিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসতে আসতে কর্মসূচিও বাড়াতে পারে আওয়ামী লীগ। এতে সহিংসতা-নাশকতার ঝুঁকিও বাড়তে পারে। যদিও ইসি জানিয়েছে, কেউ নির্বাচনে বাধা দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচনের বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে-যা বিরোধী রাজনীতিতে সমন্বয়হীনতা তৈরি করেছে। গত বছরের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের দল এনসিপি শেষ মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত জোট থেকে সরে গিয়ে আলাদা জোট গঠন করেছে। জাতীয় পার্টিও নিজস্ব জোট তৈরি করছে, যদিও তাদের নিয়ে এনসিপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দলের আপত্তি রয়েছে। ফলে নির্বাচনে কে কোন শিবিরে থাকবে-তা এখনো পুরোপুরি অনিশ্চিত।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ইসি সচিবালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘তফসিল ঘোষণা হওয়ায় পরিস্থিতি ভালো হবে আশা করি। তবে বর্তমান পর্যায়ও আরো ভালো হওয়া দরকার ছিল। প্রচারণায় বাধার ঘটনা আবার ঘটলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠবে। সংশ্লিষ্টদের এদিকে বেশি নজর রাখতে হবে।’

তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে রাজনৈতিক দল

সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিলকে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য নতুন অধ্যায় হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তফসিলের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশ একটি কাঙিক্ষত গণতন্ত্রের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। যে গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে এ দেশের জনগণ জীবন বাজি রেখে  লড়াই-সংগ্রাম করেছে।

মির্জা ফখরুল আশা প্রকাশ করে বলেন, আগামী নির্বাচনে গণতন্ত্র প্রিয় সব দল অংশ নেবে। একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এবং সেই নির্বাচনটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কখনোই কোনো শঙ্কা ছিল না। বিএনপি বরাবরই বলে এসেছে নির্বাচনই সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ। সেই পথে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়ায় ঘোষিত তফসিলকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।

ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে রাজধানীতে মিছিল করেছে জামায়াত। দলটির নেতাকর্মীরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছে।

ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপিও।

সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।

বিইউ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর