শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ১২ ফেব্রুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ১২ ফেব্রুয়ারি
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা ছয়টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে এ ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।


বিজ্ঞাপন


ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর তিন দিন পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ১৬ মাসের মাথায় জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করল ইসি।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত, তা বাছাই হবে ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি। আপিলের শেষ তারিখ ১১ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২০ জানুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি। তার তিন সপ্তাহ পর হবে ভোটগ্রহণ।

চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি। ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ করতে হয়। অর্থাৎ ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাতটা পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ থাকবে।

১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট চলবে।


বিজ্ঞাপন


গণঅভ্যুত্থানের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসে অন্তর্বর্তী সরকার। শুরুতে বিএনপিসহ কিছু দল গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল।

গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ১৩ জুন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

লন্ডন বৈঠকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে দুজন একমত হন। এরপর থেকে সরকার বারবার বলে আসছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন হবে। ইসিও সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়। এর মধ্যে গত ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। আজ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ দুটি ভোটের দিনক্ষণ জানালেন সিইসি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ করার রেওয়াজ আছে। সে অনুযায়ী গতকাল দুপুরে সিইসির নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

বঙ্গভবন থেকে ফিরে নির্বাচন ভবনে ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি যেমন—ভোটার তালিকা, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের ব্যবস্থাপনা, প্রবাসী ভোটারদের ভোট, ভোট গণনার পদ্ধতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছেন সিইসি। ইসির প্রস্তুতিতে রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল। বিরোধী দলগুলোর বর্জনে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত একতরফা সাজানো সে নির্বাচন ছিল বিতর্কিত। এর আগে একাদশ ও দশম সংসদ নির্বাচনও ছিল ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ২১ নভেম্বর এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। আগামী নির্বাচনই হবে এই কমিশনের অধীনে প্রথম কোনো নির্বাচন। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হচ্ছে। দুটি ভোটের সময় ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ইসি।

সময় ব্যবস্থাপনার জন্য এবার ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনী নির্বাচনী পরিবেশ যাতে নিশ্চিত হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর