সোমবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মা-মেয়েকে হত্যায় বিশেষ চায়না ছুরি, বিচ্ছিন্ন করা হয় ল্যান্ড ফোন সংযোগ

একে সালমান
প্রকাশিত: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২৯ পিএম

শেয়ার করুন:

মা-মেয়েকে হত্যায় বিশেষ চায়না ছুরি, বিচ্ছিন্ন করা হয় ল্যান্ড ফোন সংযোগ
মা-মেয়েকে হত্যায় বিশেষ চায়না ছুরি, বিচ্ছিন্ন করা হয় ল্যান্ড ফোন সংযোগ। ছবি: কোলাজ
  • প্রতিদিন বোরকা পরে কাজে আসতেন গৃহকর্মী
  • ঠান্ডা মাথায় হত্যার পর বাথরুমে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে যায় ঘাতক
  • হত্যার ৪ দিন আগে শুরু করে বুয়ার কাজ

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা–মেয়েকে হত্যা করতে বিশেষ চায়না ছুরি ব্যবহার করেছে ঘাতক গৃহকর্মী। হত্যার সময় কেউ যেন ফোনে যোগাযোগ করতে না পারে, সে জন্য অভ্যন্তরীণ ল্যান্ডফোন সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। মা–মেয়েকে হত্যার পর বাথরুমে গিয়ে গোসল করে বের হয়ে আসে ঘাতক গৃহকর্মী। এরপর মেয়ের স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে চলে যায়।


বিজ্ঞাপন


সোমবার (৮ ডিসেম্বর) এমন ঘটনার পর নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনায় নিহত মা মালাইলা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা বিনতে আজিজ (১৫)—দুজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে দুটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, হত্যাকারী বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়েছে—এমন আলামতও পাওয়া গেছে।

সিসিটিভি ফুটেজে যা দেখা গেছে

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নাফিসার বাবা সকাল ৭টায় স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে বাসায় ঢোকে গৃহকর্মী আয়েশা। ঠিক দুই ঘণ্টা পর সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে মেয়ের স্কুলড্রেস পরে, কাঁধে স্কুলব্যাগ নিয়ে মুখে মাস্ক লাগিয়ে বের হয়ে যায়। বের হয়েই বাসার সামনে একটি অটোরিকশা নিয়ে উল্টো পথে চলে যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নাফিসার বাবা বাসায় ফেরেন।


বিজ্ঞাপন


বাথরুম থেকে উদ্ধার হলো বিশেষ ছুরি

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বাসা তল্লাশিতে বাথরুম থেকে একটি চাইনিজ সুইচ গিয়ার ও একটি ধারালো অস্ত্র পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই ছুরিগুলো দিয়ে মা–মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিক ধারণা, মাকে হত্যার পর মেয়ে দৌড়ে ইন্টারকমে সিকিউরিটি গার্ডকে ফোন দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ইন্টারকমের লাইন কাটা থাকায় যোগাযোগ করতে পারেনি। খুব ঠান্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে গৃহকর্মী। পরে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে নির্দ্বিধায় বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

পরিবারের বক্তব্য

নাফিসার বাবা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাসায় একজন কাজের মহিলা দরকার ছিল। আমরা বাড়ির দারোয়ানকে বলেছিলাম—কেউ কাজ চাইতে এলে যেন বাসায় পাঠায়। চার দিন আগে বোরকা পরা একটি মেয়ে কাজের জন্য এলে দারোয়ান তাকে আমাদের কাছে পাঠায়। স্ত্রী কথা বলে তাকে কাজে রাখে। তবে মেয়েটির বিস্তারিত কোনো তথ্য আমাদের কাছে ছিল না।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্ত্রীর কাছ থেকে শুনেছি, মেয়েটির নাম আয়েশা। গ্রামের বাড়ি রংপুর। জেনেভা ক্যাম্পে চাচা–চাচির সঙ্গে থাকে। বাবা–মা আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার পর সে চাচা–চাচির সঙ্গেই থাকে। তার শরীরেও পোড়ার ক্ষত রয়েছে—সেটি স্ত্রীকে দেখিয়েছে।’

পুলিশের বক্তব্য

তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পর বাসায় ধস্তাধস্তির আলামত পাওয়া গেছে। মেঝে ও দেয়ালে রক্তের দাগ রয়েছে। আলমারি ও ভ্যানিটি ব্যাগ তছনছ অবস্থায়। মনে হচ্ছে কিছু খোয়া যেতে পারে। তবে তেমন কিছু নেওয়া হয়নি—শুধু নিহত মহিলার মোবাইল ফোনটি নিয়ে গেছে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে এবং হত্যাকারী বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়েছে—এমন প্রমাণও মিলেছে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাড়ে ১১টার দিকে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পরে দুজনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

আশপাশের বাসিন্দাদের বক্তব্য

স্থানীয়দের ভাষ্য, হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনে তারা বাইরে বেরিয়ে আসেন। পরে জানতে পারেন, এক গৃহকর্মী মা–মেয়েকে হত্যা করে পালিয়ে গেছে।

একেএস/এআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর