জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের নারীরা বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলশানে এক সেমিনারে এ কথা বলেন তিনি।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে লবণাক্ততা বৃদ্ধি, পানি সংকট, ভূমি ক্ষয় এবং খাদ্য অনিরাপত্তা সরাসরি নারীদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই পরিস্থিতিতে লবণসহিষ্ণু খাদ্যপণ্য সংরক্ষণ, পরিবেশবান্ধব উপকরণ তৈরি এবং পরিবারের আয় টিকিয়ে রাখতে বিকল্প আয়ের পথ সৃষ্টি করতে হবে।’
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তারা যখন শক্তিশালী হন, তখন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বাড়ে, শিশুদের শিক্ষা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত হয়। নারী উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তর, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্থানীয় আঞ্চলিক উন্নয়নের প্রধান শক্তি।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘নারী যখন স্বাবলম্বী হন, তখন একটি পরিবার, একটি সমাজ এবং শেষ পর্যন্ত একটি জাতি এগিয়ে যায়। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে, বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় নারী উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সামাজিক বাধা, সীমাবদ্ধতা ও আর্থিক সংকট মোকাবিলা করেও নিজস্ব পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং মূল্য সংযোজনমূলক কাজে যুক্ত হচ্ছেন— যা জাতীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে।’
তিনি বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে বাজারে প্রবেশাধিকার, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, আর্থিক সহায়তা এবং নীতিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম স্থানীয় পণ্যের পরিচিতি, বিপণন এবং গ্রাহক গঠনে বড় ভূমিকা রাখছে। অনেক নারী উদ্যোক্তা ঘরে বসেই হস্তশিল্প, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যপণ্য, পোশাক, প্রসাধনী এবং স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্য উৎপাদন করে সফলতা অর্জন করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘জামদানি, নকশীকাঁথা, মাটির সামগ্রী, স্থানীয় খাদ্যপণ্যের মতো ঐতিহ্যকে ব্র্যান্ডিং করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় করা সম্ভব এবং এতে নারী নেতৃত্ব সবচেয়ে সম্ভাবনাময়। নারী উদ্যোক্তাদের নীতি সহায়তা, বাজার সম্প্রসারণ, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, মূল্যগত ন্যায্যতা ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘নারী ও তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রধান চালিকা শক্তি। রাষ্ট্রীয় কাঠামো, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সমাজ— সবাইকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন— বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল পিএলসির (বিএসসিপিএলসি) চেয়ারম্যান আব্দুন নাসের খান, সিনিয়র আইনজীবী সারা হোসেন ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) মহাসচিব শেখ মোহাম্মদ মেহেদী আহসানসহ প্রমুখ।
এসএইচ/এফএ

