দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত ও ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) ও বাংলাদেশ সেফ অ্যাগ্রো ফুড ইফোর্টস (বিএসএএফই)।
আজ শনিবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটের তুলা উন্নয়ন ভবনে আয়োজিত এক জাতীয় সেমিনারে এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ভোক্তা অধিকারভিত্তিক এই দুই বেসরকারি সংগঠন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্যাবের সভাপতি ও বাংলাদেশ সরকারের সচিব (পিআরএল) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএসএএফই-এর লিড পরিচালক মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, ‘দেশে খাদ্য নিরাপত্তা এখন জরুরি জাতীয় অগ্রাধিকার। প্রতিবছর প্রায় ৩ কোটি মানুষ খাদ্যবাহিত রোগের ঝুঁকিতে থাকে। বাজারে ভেজাল, বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন, অনিরাপদ পণ্য ও অনলাইন প্রতারণা বাড়ছে। সবজির ৭১ শতাংশে অতিরিক্ত কীটনাশক, তেলে বিপজ্জনক ট্রান্স ফ্যাট এবং দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে।’
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, গত বছর ডিএনসিআরপি-তে জমা পড়া ৮০ হাজারের বেশি অভিযোগ প্রমাণ করে— দেশে ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘন আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। তাই শক্তিশালী ভোক্তা অধিকার ব্যবস্থা গড়ে তোলা, গবেষণা-ভিত্তিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিনির্ভর অভিযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ এখন জরুরি।
সেমিনারে বক্তৃতা করেন কৃষিবিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত পরিচালক কাওছারুল ইসলাম সিকদার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ এনায়েত-ই-রাব্বি, বিএসটিআই-এর উপ-পরিচালক এনামুল হক, কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবীর ভূঁইয়া, ঢাকা জেলা ক্যাব সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সামস এ খান এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য শওকত আলী খান।
বক্তারা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের ইশতেহারে খাদ্য নিরাপত্তা ও ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতের বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার রাখতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয় জোরদার না হলে টেকসই পরিবর্তন সম্ভব নয়। পাশাপাশি শুধুমাত্র ঢাকা কেন্দ্রিক সেমিনার নয়, তৃণমূলে ভোক্তা সুরক্ষা পৌঁছে দিতে ক্যাবের উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলোকে সক্রিয় করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে; তবে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ক্যাব সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আগামী সরকারকে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করতে হবে। নাগরিকের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা রাজনৈতিক দলের অন্যতম দায়িত্ব হওয়া উচিত। কিন্তু এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমন আলোচনা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ক্যাব-বিএসএএফই এর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে।’
সেমিনারে উত্থাপিত মূল ধারণাপত্রে প্রস্তাব করা হয়:
১. সকল অংশীজনদের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব জোরদার করা;
২. খাদ্য বাজারে জবাবদিহিতা বাড়ানো;
৩. ভোক্তা সচেতনতা বৃদ্ধি ও অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করা;
৪. গবেষণা ও প্রমাণভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়ন;
৫. ডিজিটাল মাধ্যমে অভিযোগ জানানো ও প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি করা;
৬. নিরাপদ খাদ্য নীতিমালা প্রণয়ন করা;
৭.ভোক্তা সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সহায়তা করা;
৮. টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু-সংবেদনশীল নীতিমালা অনুশীলন করা।
এমআর/এফএ

