শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বছরের ব্যবধানে ভোটার স্থানান্তর বেড়েছে দ্বিগুণ

মো. মেহেদী হাসান হাসিব
প্রকাশিত: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

বছর ব্যবধানে ভোটার স্থানান্তর বেড়েছে দ্বিগুণ 
 

সংসদ নির্বাচনের হাওয়া লেগেছে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত। চায়ের দোকানে কিংবা বন্ধুদের আড্ডা থেকে শুরু করে সবখানে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর হাওয়া লেগেছে ভোটার স্থানান্তরে। এক বছরের ব্যবধানে প্রায় দিগুণ সংখ্যক ভোটার পরিবর্তন করেছে তাদের ভোটার এলাকা। 
 
ইসি সূত্র জানায়, গত বছরে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করেছে প্রায় তিন লাখ ৭১ জন। কিন্তু চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য আবেদন এসেছে সাত লাখের বেশি। এর মধ্যে অনুমোদন হয়ে ছয় লাখ ৬৫ হাজার ৫০০-এর বেশি ভোটারের এলাকা পরিবর্তন হয়েছে। বাকিগুলোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাভাবিকভাবে এতো ভোটার স্থানান্তরের এতো আবেদন আসে না। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর আবেদনের সংখ্যা বেশি। এর একটি কারণ হতে পারে এ বছর তিন দফায়  ভোটার হালনাগাদ কাজ হয়েছে। কারণ যে যে বছর ভোটার হালনাগাদ করা হয় ওই ওই বছর ভোটার স্থানান্তর বেশি হয়। আরেকটি কারণ হলো বিগত তিন নির্বাচনে অনেকে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি, রাজনৈতিক কারণে নিজ এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় ভোটার হয়েছেন। এবারের নির্বাচনটা একটা ভিন্ন পরিস্থিতিতে হতে যাচ্ছে। সবাই ভোট দিতে চায়, এজন্য হয়তো ভোটাররা নিজে এলাকায় গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে চান। এ কারণেও এ সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেতে পারে।
 
ভোটার স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর ঢাকা মেইলকে জানান, নাগরিকরা আমার কাছে ভোটার স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছে। আমরা কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে তা অনুমোদন করেছি। এছাড়া সবার ভোটাধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: 

সাময়িক বন্ধ হচ্ছে এনআইডি সংশোধন কার্যক্রম 

‘ব্যয় বাড়লেও নির্বাচন ও গণভোটের বাজেট নিয়ে চিন্তার কিছু নেই’

 

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সাবেক প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকা মেইলকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ভোটার স্থানান্তরটা দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়েছে- এটাকে নেতিবাচকভাবে নেওয়ার কোনো কারণ নাই। এটা সত্যিই হয়েছে এবং এটা হওয়ার একটা বড় কারণ হতে পারে যে মানুষ আশাবাদী যে ভোট দিতে পারবে। তাই তারা যেখানে ভোট দিলে তাদের ভোটের প্রভাবটা বেশি হবে সেখানেই তারা ভোটার হওয়ার চেষ্টা করছেন হয়তো। 

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অতীতে তো আমাদের ভোটার তালিকা সঠিক ছিল না। এক এলাকা থেকে অনেক সময় অন্য এলাকায় গিয়ে ভোটার হয়েছে। আবার কারো প্রভাবে কোনো জায়গায় গিয়ে ভোটারও হয়েছেন। এগুলো হয়তো সঠিকভাবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এবার হয়তো এগুলো শুদ্ধ করা হয়েছে। 
 
অনেকে আশঙ্কা করছেন এবার যে ভোটার এলাকায় স্থানান্তরটা হচ্ছে এটা অনেকটাই রাজনৈতিক মোটিভ আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদিউল আলম বলেন, রাজনৈতিক মোটিভ তো আছেই, তারা তাদের ভোটটা এমন জায়গায় দেবে যেখানে তাদের ভোটের প্রভাব বেশি পড়বে। এটিও একটি কারণ ভোটার স্থানান্তরের।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন:

পোস্টাল ব্যালটের জন্য ২২ হাজার ৭৫৩ প্রবাসীর নিবন্ধন

ইসলামি দলগুলোর নির্বাচনি ঐক্য–আসন ভাগাভাগি নিয়ে তৎপরতা 

 

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ভোটার স্থানান্তরের আবেদন এসেছে সাত লাখ এক হাজার ৩৩৭ জনের। এর মধ্যে অনুমোদন হয়েছে ছয় লাখ ৬৫ হাজার ৫৬৫ জনের আবেদন। ইসির ১০টি প্রশাসনিক অঞ্চলের মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে এখন পর্যন্ত ভোটার স্থানান্তর হয়েছে ৮৬ হাজার ৮২৫ জন। ফরিদপুর অঞ্চলে হয়েছেন ৩৯ হাজার ৯৫ জন, খুলনা অঞ্চলে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করেছেন ৮১ হাজার ৭২৫ জন। 

ময়মনসিংহ অঞ্চলে হয়েছেন ৭৮ হাজার ৮০৫ জন, রংপুর আঞ্চলে ভোটার স্থানান্তর হয়েছেন ৬৩ হাজার ৮৯৭ জন, সবচেয়ে কম ভোটার এলাকা পরিবর্তন করেছেন সিলেট অঞ্চলে ২৭ হাজার ৫৭৬ জনের, রাজশাহী অঞ্চলে পরিবর্তন করেছেন ৭২ হাজার ৮১৫ জনের, ৮৫ হাজার ৭২০ জন ভোটার এলাকা পরিবর্তন করেছেন বরিশাল অঞ্চলে। চট্টগ্রামে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করেছেন ৩০ হাজার ৮৫ জন ভোটার ও সবচেয়ে বেশি ভোটার স্থানান্তর হয়েছে এক লাখ পাঁচ হাজার ৫৪৩ জন। কিছু আবেদন এখনো যাচাই-বাছাই চলছে, যা অনুমোদন হলে এ সংখ্যা আরও কিছুটা বৃদ্ধি পাবে। 

বিগত চার বছরের ভোটার স্থানান্তরের পরিসংখ্যান 

বিগত চার বছরে ভোটার স্থানান্তর হয়েছে ২১ লাখ ১৫ হাজার ৪৫৮ জন। এর মধ্যে ২০২৪ সালে হয়েছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার ৯১৭ জন, যা চলতি বছরের প্রায় অর্ধেক। ২০২৩ সালে হয়েছেন চার লাখ ৬১ হাজার ৫৫৯ জন। ২০২২ সালে ভোটার স্থানান্তর হয়েছেন সাত লাখ ১৭ হাজার ২০৮ (ভোটার হালনাগাদের বছর)। পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার ৭৭৪ জন ভোটার এলাকা পরিবর্তন করেছেন ২০২১ সালে। 
 
সবশেষে ভোটার হালনাগাদ অনুযায়ী দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ছয় কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭। মহিলা ভোটার ছয় কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার এক হাজার ২৩৪।
 
আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজন করার পরিকল্পনা করছে ভোট আয়োজনকারী সাংবিধানিক এ সংস্থাটি।
 
এমএইচএইচ/ক.ম 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর