শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ফের বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, বেশি আক্রান্ত শিশুরা

সাখাওয়াত হোসাইন
প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

ফের বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শিশুরা
ফের বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শিশুরা।

রাজশাহী নগরের বোয়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা রাশিদা পারভীন হ্যাপি (৪৫) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে মারা গেছেন। বুধবার ভোরে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আবারও বাড়ছে। আক্রান্ত হচ্ছেন তরুণ ও মধ্যবয়সীরা, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে শিশুরা। শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি। পরিস্থিতি বিবেচনায় গত রোববার ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।


বিজ্ঞাপন


বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম বলেন, ক্রমবর্ধমান রোগীর চাপ সামলাতে আমরা রোববার একটি ডেঙ্গু সেল চালু করেছি।

গত মঙ্গলবার রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে পেট ও শরীরে ব্যথা নিয়ে তিনি রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তিন দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। অবস্থার অবনতি হলে বুধবার ভোর ৪টায় আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে সকাল ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৪৫ জন। এ সময়ে নতুন কোনো মৃত্যু হয়নি। ফলে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা অপরিবর্তিত থেকে ১৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে। 

গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৬ জন, ঢাকা বিভাগে ৪০ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১১ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৬৭ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১২ জন।


বিজ্ঞাপন


চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার ২৯ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ হাজার ৯২৭ জন। এর মধ্যে ৬০ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ নারী।

সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু শনাক্তের হার আগস্টের চেয়ে অন্তত দ্বিগুণ। গত ১১ দিনে শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৪৫১ জন, মারা গেছেন ২৩ জন। আগস্টে ভর্তি হয়েছিলেন ১০ হাজার ৪৯৬ জন, মারা যান ৩৯ জন। জুলাইয়ে ভর্তি হয়েছিলেন ১০ হাজার ৬৮৪ জন, মারা যান ৪১ জন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১৮ হাজার ৯৭ জন, মারা যান ৮০ জন।

বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, হাসপাতালে ভর্তি সংখ্যার চেয়ে বাইরে আক্রান্তের সংখ্যা আট থেকে দশগুণ বেশি। অনেকেই পরীক্ষা করান না, ফলে প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ। গ্রামে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম নেই, চিকিৎসক ও নার্সও পর্যাপ্ত নয়। এজন্য কার্যকর ব্যবস্থাপনা ও অর্থ বরাদ্দ জরুরি।

তরুণ-তরুণীরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে

বয়সভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা—প্রায় ৯ হাজার ৫০০ জন। কর্মজীবী ও চলাফেরায় সক্রিয় হওয়ায় তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের বৃষ্টি ও গরম মশার বংশবিস্তারে ভূমিকা রাখছে।

শিশুদের অবস্থা উদ্বেগজনক

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট আক্রান্তের মধ্যে প্রায় ১১ হাজারই শিশু। মারা গেছে প্রায় ৩৫ জন। চিকিৎসকদের মতে, প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. মাহবুবুল হক বলেন, শিশুদের পেট ব্যথা, বমি বা প্রস্রাব বেড়ে গেলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।

সামনে আরও ঝুঁকি

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস ডেঙ্গুর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়। আবহাওয়া ও মশার প্রজনন চক্রের কারণে আক্রান্ত বাড়তে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক হালিমুর রশীদ বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া আক্রান্ত কমানো সম্ভব নয়।

অঞ্চলভিত্তিক ম্যাপিং জরুরি

চলতি বছরে দেশের মোট সংক্রমণের প্রায় ২৫ শতাংশ হয়েছে বরগুনায়। এ পর্যন্ত আক্রান্ত ৬ হাজার ৫২৪ জন। ঢাকার বাইরে আক্রান্তের হার ৭৫ শতাংশ। বরিশাল, পটুয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কক্সবাজারে সংক্রমণ বেশি। জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গুকে জরুরি জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি ঘোষণা করে অঞ্চলভিত্তিক ম্যাপিং জরুরি। সরকারকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এসএইচ/এআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর