শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

মাদক পাচারে বাংলাদেশ এখন ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’

একে সালমান
প্রকাশিত: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

drug
সম্প্রতি ধরা পড়ে মাদকের বড় কয়েকটি চালান। ছবি: সংগৃহীত

‎মাদক পাচারকারীরা এখন কৌশল পাল্টে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। আগে সীমান্ত দিয়ে সরাসরি ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা আনা হলেও এখন সিন্ডিকেটগুলো বৈধ বাণিজ্যিক চালান, কুরিয়ার সার্ভিস এবং বিমানবন্দরের লাগেজে বিশেষ কৌশলে লুকিয়ে মাদক প্রবেশ করাচ্ছে।

গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইয়াবা, আফ্রিকার কোকেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের আইস আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ হিসেবে বেছে নিয়েছে চক্রগুলো। একাধিক অভিযানে দেখা গেছে, পণ্যবাহী কনটেইনার, ফলের ঝুড়ি ও প্রসাধনীর চালানে লুকানো মাদক রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।


বিজ্ঞাপন


‎বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ব্যবহার করা হলে শুধু দেশীয় বাজার নয়, বিশ্বব্যাপী মাদক প্রবাহ রোধ করাও কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করা প্রয়োজন।

‎মাদকের আন্তর্জাতিক রুট এখন বাংলাদেশ!

‎গত শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার পাশে টঙ্গী এলাকা থেকে ইতালিতে পাচারের সময় টাওয়ালের মধ্যে পেঁচিয়ে বিশেষ কায়দায় (Chemical Impregnation) লুকায়িত অবস্থায় সাড়ে ৬ কেজি ভয়ংকর মাদক 'কিটামিন' জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)। এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে মাসুদুর রহমান জিলানি (২৮) ও আরিফুর রহমান খোকা (৪৩) নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


Drug3
ভয়ংকর মাদক কিটামিনসহ গ্রেফতার দুইজন। ছবি: সংগৃহীত

‎এ বিষয়ে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, কিটামিন (Ketamine) মূলত একটি ডিসোসিয়েটিভ অ্যানেস্থেটিক ওষুধ। যা অতীতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অপারেশনের সময় অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে এটি ব্যাপকভাবে পার্টি ড্রাগ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিটামিন একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর মাদক। যা স্বল্পমেয়াদে বিভ্রান্তি, হ্যালুসিনেশন ও শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি কিডনি ও মূত্রথলির গুরুতর ক্ষতি, মানসিক সমস্যা এবং আসক্তির দিকে ঠেলে দেয়। নিয়মিত সেবনে সহনশীলতা তৈরি হয়ে ডোজ বাড়ানোর প্রবণতা দেখা দেয়, যা জীবনের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করে।

‎ভয়ংকর এই মাদক ছাড়াও গত ২৬ আগস্ট হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গায়ানার নাগরিক এমএস পেটুলা স্টাফেল নামে একজনের কাছ থেকে ১৩০ কোটি টাকার সাড়ে ৮ কেজির বেশি কোকেন উদ্ধার করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। মাদকের এই চালানকে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কোকেনের চালান বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

ভয়ংকর মাদক ‘কিটামিন’ এর চালান জব্দ

মাদক অধিদফতরে বহাল ‘আওয়ামী চক্র’, পদোন্নতি পেতে মরিয়া

‎মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক'শ কোটি টাকার দেশি বিদেশি মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গত ২৬ আগস্ট এক বিদেশি নাগরিকের কাছে পাওয়া ১৩০ কোটি টাকা মূল্যের কোকেন সবচেয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দেশের বাজারে কোকেনের এত বড় চালান এর আগে কখনো কেউ দেখেনি। এছাড়াও দেশের রুট ব্যবহার করে বিদেশ থেকে নতুন নতুন মাদক বাংলাদেশে ঢুকছে বলে জানান তারা।

‎মাদক বিস্তার রোধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) হাসান মাহমুদ বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। এক্ষেত্রে বাবা-মাকেও ভূমিকা রাখতে হবে। সন্তান কার সঙ্গে মেশে সেই বিষয়টা নজর রাখতে হবে। আমাদের দেশে বিশাল বর্ডার। সে বর্ডার দিয়ে ইয়াবা চলে আসে। এছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা মাদক পাচার চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

Drug2
বিপুল পরিমাণ কোকেনসহ বিদেশি নাগরিক আটক। ছবি: সংগৃহীত

প্রবাসীদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মাদক পাচার চক্রের কোনো সদস্য ঢাকায় অবস্থান করে না। এই মাদকগুলো তারা পাওয়ার পর প্রসেস করে ঢাকায় এসে বুকিং দিয়ে আবারও চলে যায়। এই চক্রের সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সহযোগিতা রয়েছে। যদিও গ্রেফতারকৃতদের কেউই প্রবাসী ছিলেন না। তবে তাদের পরিচিত প্রবাসীদের সহযোগিতায় এই চক্র গড়ে ওঠে।

নতুন মাদক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মাদকটির ব্যবহার আমাদের দেশে তেমন একটা নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে মাদকটি আসে। এরপর প্রসেস হয়ে বিদেশে চলে যায়।

আরও পড়ুন

বছরে মাদকের পিছেই এক লাখ কোটি টাকা!

‘অধিকাংশ অপরাধের নেপথ্যের কারণ হচ্ছে মাদক’

‎ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল‍্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ব্যবহার করা হলে শুধু দেশীয় বাজার নয়, বিশ্বব্যাপী মাদক প্রবাহ রোধ করাও কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করা প্রয়োজন।’

একেএস/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর