ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ৩৯টি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। আসন পুনর্বিন্যাস নিয়ে দাবি-আপত্তির সুযোগ রাখা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৮২টি আসনের ব্যাপারে দাবি-আপত্তি ইসিতে জমা পড়েছে। সব মিলিয়ে এক হাজার ৫৯৬টি আবেদন পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে ইসি।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ইসি সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ৮২টি আসনের বিপরীতে দাবি-আপত্তি নিয়ে এক হাজার ৫৯৬টি আবেদন পড়েছে। কোনো আবেদন সরাসরি ইসির সিনিয়র সচিবের দফতরে জমা হয়ে থাকলে এ আবেদনের সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে বলে জানায় সূত্রটি।
বিজ্ঞাপন
এর আগে, গত ৩০ জুলাই ৩৯টি আসনে পরিবর্তন এনে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ইসির প্রকাশিত সংসদীয় আসন নিয়ে কারো দাবি-আপত্তি থাকলে ১০ আগস্ট পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ দেয় ইসি। এ সময়ের মধ্যে প্রকাশিত খসড়া ৩০০ আসনের মধ্যে ৮২টি আসনের বিপরীতে এক হাজার ৫৯৬টি আবেদন আসে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কী হবে তার জন্য পুরো আগস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
খসড়া প্রকাশের পরদিন থেকে (৩১ জুলাই) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবেদন জানাতে থাকেন সংক্ষুব্ধরা।
এবার গাজীপুর জেলায় একটি আসন বাড়িয়ে বাগেরহাট জেলায় একটি আসন কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাগেরহাট-৪ আসন বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এ নিয়ে তাঁতীদল কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির উপদেষ্টা কাজী মনিরুজ্জামান মনির সিইসির সাথে বৈঠকও করেছেন।
বিজ্ঞাপন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলাকে দুই সংসদীয় আসনে বিভক্ত না করে আগের মতো ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে রাখার দাবি জানিয়ে আবেদন করা হয়েছে ইসির কাছে। সেই আবেদনে বিজয়নগরের ভোটারদের পক্ষে-গোলাম মোস্তফা সুমন, মোজাহিদুজ্জামান চৌধুরী, ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী, এ কে এম গোলাম মুহীত ওসমানি, মো. বায়েজিদ মিয়া, প্রকৌশলী মোহাম্মদ আমিনুল হক চৌধুরী, মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, মো. জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষর করেন।
যেভাবে করা হয়েছে সীমানা পুনঃনির্ধারণ
> পার্বত্য এলাকার তিন জেলার তিনটি আসন অপরিবর্তনীয় রাখা হয়েছে।
> দুই আসনবিশিষ্ট জেলার আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, কারণ ভোটার/জনসংখ্যার অনুপাতে আসন বাড়ালে জেলাভিত্তিক ভোটারের জাতীয় গড়ের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পায়। আবার দুটি আসনকে একটি আসন করলে ভোটার সংখ্যা গড়ের তুলনায় অনেক বেড়ে যায়।
> তিন আসন বিশিষ্ট জেলার আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে, কারণ আসন হ্রাস/বৃদ্ধি করা হলে ভোটার/জনসংখ্যার অনুপাতে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে পড়ে।
> যেসব আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের জন্য কোনো আবেদন দাখিল হয়নি, সে আসনগুলো অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। প্রশাসনিকব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়ে উপজেলা/থানা ইউনিটকে যতদূর সম্ভব অখণ্ড রাখা হয়েছে।
> জেলার মধ্যকার আসনের ভোটার সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ব্যবধানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।

> যতদূর সম্ভব প্রশাসনিক ও নির্বাচনী সুব্যবস্থার বিষয় বিবেচনায় রেখে উপজেলা, সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডের অখণ্ডতা বজায় রাখা হয়েছে।
> ইউনিয়ন, সিটি কপোরেশনের ওয়ার্ড ও পৌরসভার একাধিক সংসদীয় আসনের মধ্যে বিভাজন না করার চেষ্টা হয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকার জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা, প্রশাসনিক পরিধি বিবেচনায় নির্বাচনী এলাকা পুনঃবিন্যাস করা হয়েছে।
> সীমানা পুনঃনির্ধারণকালে সংশ্লিষ্ট জনগণের সেবা বিষয়ক সুবিধা/অসুবিধার বিষয় যতদূর সম্ভব বিবেচনা করা হয়েছে।
> ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য (যেমন নদীর অবস্থান) ও যোগাযোগব্যবস্থার (যেমন রাস্তাঘাট) মতো সুবিধা ও অসুবিধা যতদূর সম্ভব বিবেচনা করা হয়েছে।
> যেসব প্রশাসনিক এলাকা নতুন সৃষ্টি হয়েছে বা সম্প্রসারণ হয়েছে বা বিলুপ্ত হয়েছে তা অন্তর্ভুক্ত/কর্তন করা এবং পরিবর্তিত নাম সংশোধন করা হয়েছে।
সীমানা পুনঃনির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে সরকার বলেন, ‘আমরা ৬৪ জেলার গড় ভোটার নির্ধারণ করেছি ৪ লাখ ২০ হাজার ৫০০। এটা ধরে একটি আসন বাড়ালে তা গাজীপুরে হবে। এ গড়ের কম বাগেরহাটে একটি কমালে সমতা চলে আসে। বাকিগুলোয় আসন কমবেশি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। দুই জেলার আসনই এফেক্টেড হয়েছে। আর কোথাও ঝামেলা নেই। ৩৯টি আসনে অ্যাডজাস্টমেন্ট রয়েছে।’
এমএইচএইচ/জেবি

