উঠতি যুবক আকাশের স্বপ্ন ছিল সৌদি আরবে যাবেন। বাবা মাকে টাকা পাঠাবেন। সংসারের উন্নতি হবে। বাবার ঘাড়ে সংসারের বোঝা কমবে। সেই জন্য নেত্রকোনার মদন উপজেলার আকাশ গত বছর জুনে পাসপোর্ট করেছিলেন। কথা ছিল আগস্টে সৌদি যাবেন। এজেন্সির সঙ্গে যাবতীয় কথাবার্তাও হয়। কিন্তু আর যেতে পারেননি। গত বছর জুলাইয়ে পুলিশের গুলিতে পা হারিয়ে আকাশ এখন ঘরে বসে থাকেন। চলাফেরায় তেমন সক্ষমতা না থাকায় কোথায় যেতেও পারেন না। এমননি কোনো কাজও করতে পারেন না তিনি।
সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেলে কথা হচ্ছিলে গত বছর জুলাই আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত আকাশের বাবা দুলাল হোসেনের সাথে৷
বিজ্ঞাপন
চার ভাই এক বোনের মধ্যে পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় আকাশকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল সবার। আকাশেরও স্বপ্ন ছিল সৌদি আরবে গিয়ে রেমিট্যান্স যোদ্ধা হয়ে টাকা কামানোর। কিন্তু তা পারলেন না। মাত্র এক ফুট দূরত্বে থেকে পুলিশের করা গুলিতে পা হারিয়ে স্বপ্ন নিভে যায় আকাশের।
তবে আকাশের বাবা কথা বললেও আকাশ কথা বলতে রাজি হননি।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পায়ে গুলি খাওয়ার আগে যাত্রাবাড়ীর বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারের শাখায় কাজ করতেন আকাশ মিয়া। তখন মাসখানেকের মধ্যেই সৌদি যাওয়ার কথা ছিল তার। এজন্য এজেন্সিকে তিন লাখ টাকা দিয়েছিলেন। প্রস্তুত ছিল পাসপোর্টও। শুধু বাকি ছিল বিমানের টিকিট এবং যাওয়ার তারিখ। কিন্তু তার আগেই গুলিতে স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে যায় আকাশের।
আকাশর বাবা দুলাল মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, বিনা অপরাধে পুলিশ আমার ছেলেটারে গুলি কইরা পগু বানায় দিলো! ছেলের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। সামনে কী হবে তাও তিনি জানেন না। কারণ আকাশ এখন পা হারিয়ে এতটাই অক্ষম হয়ে গেছেন যে, বাচ্চাদের থেকেও অধম হয়ে গেছেন বলে তার বাবার কষ্ট।
বিজ্ঞাপন
তার বাবার ভাষায়- ছেলে তো এখন সারাদিন ঘরে থাকে। এমন একটা অবস্থা যে, ছেলে আমার বাচ্চার চেয়েও অধম জীবন যাপন করছে।
কেউ কোনো সহযোগিতা করেছে কি না জানতে চাইলে তার বাবা আক্ষেপ করে বলছিলেন, জেলা প্রশাসন থেকে মাত্র এক লাখ টাকা দিয়েছিল। কিন্তু আমার ছেলের পিছে তো সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আর সরকার যদি ২০ লাখ টাকাও দেয় তা দিয়ে কী করব! আমার ছেলে তো আর পা ফেরত পাবে না।
সেদিন তার সঙ্গে যা ঘটেছিল
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে গত বছরের ২৮ জুলাই পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাওয়া ভুক্তভোগী আকাশ বলেছিলেন, ‘ওইদিন বিকেল পাঁচটা বা সাড়ে পাঁচটার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলি হইতাছিল। আমরা দোকানের শাটার বন্ধ করে বইসা ছিলাম। এমন সময় পুলিশ আইসা শাটার তুলে আমার বুকে বন্দুক তাক করেছিল। আমি হাত দিয়া নামাই দিছি। এরপর যাওয়ার সময় এক ফুট দূরত্ব থেকে আমার পায়ে গুলি কইরা দিল। আমি আর আমার মহাজন কইছি, আমরা কেউ ছাত্রদল-ছাত্রলীগ না। কোটা আন্দোলনকারীও না। মালিক কইছে ওরা আমার স্টাফ। কিন্তু পুলিশ কথা শোনে নাই। আমার পায়ে কাছ থাইকা গুলি কইরা চলে গেছে। ওই পুলিশ সদস্য তো আমার বুকে তাক করছিল মাইরা ফেলার জন্য। কিন্তু আমি হাত দিয়া নামাই দিছি। এখন শুধু জীবনটা আছে।'
ঘটনার সময় দোকানের ভেতর মালিক জাফর আলী, মাসুম এবং আকাশ ছিলেন। যাওয়ার সময় দোকানের থাই গ্লাসে গুলি করলে সেগুলোর তিনটি মালিক জাফরের হাতে লাগে। এতে তিনি আহত হন।
আকাশ জানান, খুব কাছ থেকে গুলি করার কারণে ছররা গুলিগুলো আশপাশে ছড়াতে পারেনি। শতাধিক গুলি তার পায়ে লাগে। ফলে পায়ের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল সেটি আর রাখা যায়নি। কেটেই ফেলতে হয়েছে।
এমআইকে/জেবি

