# আমার পা ফিরিয়ে দিতে পারবেন, প্রশ্ন আকাশের
# আমি তো অপরাধ করিনি, তাহলে কেন গুলি করা হলো
বিজ্ঞাপন
# বিচার চান আকাশের পরিবার
# আমি আওয়ামী লীগ করি আর পুলিশ আমার পোলারে গুলি করল: আকাশের বাবা
দুই বছর ধরে যাত্রাবাড়ীর বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারের শাখায় কাজ করছিলেন আকাশ মিয়া। মাসখানেকের মধ্যেই সৌদি যাওয়ার কথা ছিল নেত্রকোনার মদন থানায় এই বাসিন্দার। এজন্য এজেন্সিকে তিন লাখ টাকা দিয়েছিলেন। প্রস্তুত ছিল পাসপোর্টও। শুধু বাকি ছিল বিমানের টিকিট এবং যাওয়ার তারিখ। কিন্তু তার আগেই গুলিতে স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে যায় আকাশের।
চার ভাই এক বোনের মধ্যে পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় আকাশকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল সবার। আকাশেরও স্বপ্ন ছিল সৌদি আরবে গিয়ে রেমিট্যান্স যোদ্ধা হয়ে টাকা কামানোর। কিন্তু তা পারলেন না। মাত্র এক ফুট দূরত্বে থেকে পুলিশের করা গুলিতে পা হারিয়ে স্বপ্ন নিভে যায় আকাশের।
বিজ্ঞাপন
আকাশ বলেন, ‘আমার সব শেষ কইরা দিল। আমার স্বপ্ন শেষ হইয়া গেল। আর বিদেশ যাবার পারুম না। ভাই কইতে পারেন! আমার এই পা কি ফেরত দিতে পারবেন? জীবনের শুরু তাতেই আমার পা টা নাই হইয়া গেল। এখনো বিয়ে শাদী করি নাই, তার আগেই পা নাই!’
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) ক্যাজুয়ালটি বিভাগের বিছানায় শুয়ে কথাগুলো বলছিলেন আকাশ। গত ২০ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় পুলিশের গুলিতে পা হারাতে হয় তাকে।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আকাশ বলেন, ‘ওইদিন বিকেল পাঁচটা বা সাড়ে পাঁচটার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলি হইতাছিল। আমরা দোকানের শাটার বন্ধ করে বইসা ছিলাম। এমন সময় পুলিশ আইসা শাটার তুলে আমার বুকে বন্দুক তাক করেছিল। আমি হাত দিয়া নামাই দিছি। এরপর যাওয়ার সময় এক ফুট দূরত্ব থেকে আমার পায়ে গুলি কইরা দিল। আমি আর আমার মহাজন কইছি, আমরা কেউ ছাত্রদল-ছাত্রলীগ না। কোটা আন্দোলনকারীও না। মালিক কইছে ওরা আমার স্টাফ। কিন্তু পুলিশ কথা শোনে নাই। আমার পায়ে কাছ থাইকা গুলি কইরা চলে গেছে। ওই পুলিশ সদস্য তো আমার বুকে তাক করছিল মাইরা ফেলার জন্য। কিন্তু আমি হাত দিয়া নামাই দিছি। এখন শুধু জীবনটা আছে।’
ঘটনার সময় দোকানের ভেতর মালিক জাফর আলী, মাসুম এবং আকাশ ছিলেন। যাওয়ার সময় দোকানের থাই গ্লাসে গুলি করলে সেগুলোর তিনটি মালিক জাফরের হাতে লাগে। এতে তিনি আহত হন।
আকাশ জানান, খুব কাছ থেকে গুলি করার কারণে ছররা গুলিগুলো আশপাশে ছড়াতে পারেনি। প্রায় শতাধিক গুলি তার পায়ে লাগে। এ সময় তিনি বিছানার পাশে থাকা ব্যাগে এক্সের প্লেটটি বের করে দেখতে বলেন।
সেটি নিয়ে দেখা যায় হাটুর ঠিক নিচে গুলি করা হয়েছে। পায়ের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল সেটি আর রাখা যায়নি। কেটেই ফেলতে হয়েছে।
আকাশ বলেন, ‘আমার সৌদি যাওয়ার কথা ছিল। মেডিকেল করেছি। এখন শুধু বাকি বিমানের টিকিট। এরপর উড়াল দিতাম। কিন্তু আর হলো না। আমার স্বপ্ন পূরণ হলো না।’
পাশে থাকা আকাশের বাবা দুলাল মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘গরিব কিছু পাইব না। গরিব পাইব শুধু সান্ত্বনা। পোলাটা আমার বড় আছিল। কিছু টাকা দিতো। পোলাপান লইয়া গ্রামে খাইতাম। আমাদের পোলাডারে শেষ করে দিল।’

সেদিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আকাশের বাবা বলেন, ‘আমরা শনিবার রাতে খবর পাইছি। রোববার রাতে একটা অ্যাম্বুলেন্স নিয়া রওনা হইছি। তার আগে আমার পোলারে হাসপাতালে নেবে কে? তাকে যে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে আসবে এমন কেউ আছিল না। তখন তার জ্ঞানই আছিল না।’
আকাশের বাবা বলেন, আমি নিজেও আওয়ামী লীগ করি। দল করার পরও পুলিশ কেন আমার ছেলেকে গুলি করল? কেন আমার পোলাটারে গুলি খাইতে হইলো।
কীভাবে ছেলের চিকিৎসা হবে তা নিয়ে চিন্তিত দুলাল মিয়া। বলেন, ‘বাড়ি থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়ে আইছিলাম সেই টাকা শেষ হইয়া গেছে গা। তার আগে ২ লাখ টাকা খরচ হইছে। এখানে তো সব ওষুধ দেয় না। স্লিপে লেইখা দেয় বাহির থাইকা কিইনা নিয়ে আসি। শুধুমাত্র ডক্টর কেয়ার হাসপাতাল থাইকা নিয়া আইসা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াই ২০ হাজার টাকা দিছি।’
দুলাল মিয়া জানান, পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়ার আগে তার ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেছেন শুধুমাত্র তার পা রক্ষার জন্য। কিন্তু পারেননি। সেদিন শুধুমাত্র এক ঘণ্টার জন্য তাকে ২০ হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিতে হয়েছে বলে জানান।
দুলাল মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলের জীবনটা মাটি হইয়া গেছে। আমার ছেলেটা আন্দোলনে গিয়া গুলি খাইলে কষ্ট আছিলো না, কিন্তু কর্মে থাইকা গুলি খাইলো। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। সঙ্গে আমার ছেলেটার একটা কর্ম চাই।’
এমআইকে/এমআর

