সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত গোপালগঞ্জে সরকারের জারিকৃত কারফিউয়ের সময় আরও বাড়ানো হয়েছে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টা পর্যন্ত বহাল থাকবে এই অবস্থা। এরপর তিন ঘণ্টা শিথিল থাকার পর দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত বহাল থাকবে কারফিউ।
শুধু তাই নয়, পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত কারফিউ চলমান থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: ‘গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি এত খারাপ হবে সে তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে ছিল না’
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ শহরে ২২ ঘণ্টার কারফিউ ঘোষণা করে সরকার। এদিন রাত ৮টা থেকে শুরু হয় কারফিউ। চলে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৬টা পর্যন্ত। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার পরই আরও বাড়ানো হলো কারফিউয়ের সময়।

বিজ্ঞাপন
এখন কেমন পরিস্থিতি গোপালগঞ্জের?
এ নিয়ে দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, ‘বর্তমানে গোপালগঞ্জের অবস্থা স্বাভাবিক। কারফিউ জারির পর থেকে আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জের সহিংসতার ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি
ঢাকা মেইল প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদনও তেমনটাই বলছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, কারফিউয়ের কারণে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ভোরের আলো ফোটার পরও শহরে মানুষের কোনো কর্মচাঞ্চল্য দেখা যায়নি। গোটা শহর ছিল একেবারেই শান্ত।

সারাদিনই বন্ধ ছিল গোপালগঞ্জ শহরের বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রাস্তাঘাট ছিল অনেকটাই ফাঁকা। হাট-বাজার ছিল জনমানবহীন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হননি।
পুরো শহরে খুব বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখা যায়নি। তবে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের সামনে নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে এখনো। কারণ, বুধবার বিকেলে এই কারাগারেও হামলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জের সংঘর্ষ নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে আ.লীগ: প্রেস উইং
এদিন সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করে এবং জনসাধারণকে বাড়ির বাইরে না আসার অনুরোধ জানিয়ে মাইকিং করে।
তবে কারফিউর মধ্যেও বৃহস্পতিবার সকালে কিছু দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ কাজের খোঁজে রাস্তায় বের হন। গোপালগঞ্জ শহরে লোকজনের চলাচল ছিল সীমিত, দুই-একটি রিকশা চলাচল করলেও বেশিরভাগ এলাকা ছিল নিস্তব্ধ ও থমথমে।

এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় সরকারের পক্ষ থেকে কারফিউ ঘোষণার জেরে সন্ধ্যার পরই অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায় গোপালগঞ্জ শহর। ঘরে ফেরা কয়েকজন মানুষকে বিচ্ছিন্নভাবে রাস্তায় দেখা গেলেও তাদের চোখেমুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলা, যা বলছে বিএনপি
এদিন রাত থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গোপালগঞ্জ শহরজুড়ে টহল জোরদার করে র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি উপস্থিতির কথাও জানা যায়। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে বাড়তি নজরদারি করা হয়।

বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে ছিল এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি। এদিন দুপুর ২টার পর পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চে কর্মসূচি শুরু হয়। সভা শুরুর আগে সমাবেশের মঞ্চে এক দফা হামলা চালায় সেখানকার আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ।
আরও পড়ুন: কয়েক জেলা থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া এনে এনসিপির নেতাদের ওপর হামলা হয়: রিপন
এই হামলার পরও সমাবেশে যোগ দেন এনসিপির নেতারা। এরপর সমাবেশ শেষ হলে ফের তাদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। ভাঙচুর করা হয় নতুন এ দলটির গাড়িবহর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এগিয়ে গেলে তাদের উপরও হামলা হয়।

এর পরই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের চার কর্মীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। এছাড়া যৌথ অভিযানে আটক হয়েছে ২০ জন।
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে হামলাকারীদের গ্রেফতার চায় জামায়াত
এদিকে বুধবার সংঘর্ষের মাঝেই গোপালগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে আশ্রয় নেন এনসিপির নেতারা। কিছু সময় পর সেনাবাহিনীর পাহারায় সেখান থেকে তারা খুলনার দিকে যাত্রা করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয় চার প্লাটুন বিজিবি।
এএইচ

