বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় এনবিআরের আরও ১৪ জন কর কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। তাই বিভাগীয় ব্যবস্থা হিসেবে তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে এনবিআরে সংযুক্ত করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে ইস্যু করা পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপন সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এই আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
বিজ্ঞাপন
বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন— ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের উপপরিচালক (অতিরিক্ত কমিশনার) সিফাত-ই-মরিয়ম; ভ্যাট গোয়েন্দার অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার; কর অঞ্চল-৮, ঢাকার অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা; কর অঞ্চল-২, ঢাকার বিভাগীয় প্রতিনিধি (যুগ্ম কর কমিশনার) মাসুমা খাতুন; কর অঞ্চল-১৫, ঢাকার যুগ্ম কর কমিশনার মুরাদ আহমেদ; কর অঞ্চল, কুষ্টিয়ার যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান; কর অঞ্চল, নোয়াখালীর যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা; কর অঞ্চল, কক্সবাজারের যুগ্ম কর কমিশনার মো. আশরাফুল আলম প্রধান; কর অঞ্চল, খুলনার উপ কর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম; কর অঞ্চল, রংপুরের উপ কর কমিশনার মোসা. নুশরাত জাহান শমী; কর অঞ্চল, কুমিল্লার উপ কর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিল; এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (উপকমিশনার) শাহাদাত জামিল; কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকার (উত্তর) রাজস্ব কর্মকর্তা সবুজ মিয়া এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, খুলনার রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল বশর। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত মাসে এনবিআরে যে আন্দোলন হয়েছে, তারা সবাই ওই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। কেউ কেউ নেতৃত্বও দিয়েছেন।
আদেশ অনুসারে, গত ২২ জুন জারি করা বদলির আদেশ অবজ্ঞাপূর্বক প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাদের এনবিআরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাময়িক বরখাস্তকালে তারা বিধিমোতাবেক খোরপোষ ভাতাপ্রাপ্ত হবেন।
গত ১২ মে সরকার এনবিআর পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে এনবিআর ভেঙে দুটি বিভাগ রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা গঠনের অধ্যাদেশ জারি করে। এতে অসন্তোষ দেখা দিলে কর্মকর্তারা কলমবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন। সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার আশ্বাসের পর আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়। তবে স্বার্থ সংরক্ষণে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে চেয়ারম্যানের পদত্যাগ বা অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যান কর্মকর্তারা।
২২ জুন কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করে আদেশ জারি করে এনবিআর। তাদের ২৪ জুন বা তার আগে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়। তবে সেই বদলি আদেশ প্রত্যাখ্যান করে ২৪ জুন এনবিআর ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে বদলির আদেশ ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান কর্মকর্তারা।
বিজ্ঞাপন
আন্দোলনের কারণে কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমদানি-রফতানি ব্যাহত হয়। এই অবস্থায় ২৯ জুন ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় কোনো সাজা দেওয়া হবে না বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন কর্মকর্তারা।
তবে এরপর এনবিআরের তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
৯ জুলাই আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘চেয়ারম্যান হিসেবে আমার বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছেন, আমি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছি। কিন্তু যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, রাষ্ট্র তাদের ক্ষমা করবে কি না, তা আমি জানি না।’
এমআর/এফএ

