নাগরিক জীবনে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি এখন অনেক ক্ষেত্রে অপরিহার্য। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে থাকা এই এনআইডি সেবা সহজ করার উপায় নিয়ে ভাবছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে এনআইডি সংশোধন সেবা সহজ করার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে ইসি।
তবে প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সেবা বাধাগ্রস্ত হওয়ার বড় একটি কারণ অযৌক্তিক সংশোধন আবেদন। অনেকে প্রয়োজন ছাড়াও সংশোধনের আবেদন করেন। এতে সংশোধন আবেদনের সংখ্যা শুধু বাড়ছেই। এজন্য অযৌক্তিক আবেদন কীভাবে ঠেকানো যায় সেটা নিয়ে তারা নতুন পরিকল্পনা করছেন।
বিজ্ঞাপন
ইসি সংশ্লিষ্টরা জানান, অযৌক্তিক এনআইডি সংশোধনের আবেদন ঠেকাতে তারা চক্রবৃদ্ধি হারে ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন। একজন নাগরিক যত বেশি বার আবেদন করবেন তার ফি তত বাড়বে। এতে অহেতুক সংশোধন আবেদনের পরিমাণ কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, একজন নাগরিক যখন এনআইডি সংশোধনের আবেদন করেন তখন আমরা তা বিবেচনা করি। কাগজপত্র দেখে যদি মনে হয় সংশোধন করা যাবে তাহলে করে দিই আর না করা গেলে করি না। কিন্তু দেখা যায়, কিছু কিছু আবেদন আছে যেগুলো বারবার প্রত্যাখ্যান হওয়ার পরও আবার করছে। এমনও আছে যে, একেকজনের আবেদনের সংখ্যা ৩৫-৪০টি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আবার দেখা যায় ২০২৫ সালে ভোটার হয়েই সংশোধনের আবেদন করেছে। যুক্তি বিদেশ যাওয়ার জন্য সংশোধন প্রয়োজন। কিন্তু ডাটাবেইজ তার সকল তথ্য কিন্তু রয়েছে। এখন এসব আবেদন বাতিল করা হলে তারা আবার আবেদন করে। এতে আমাদের টেবিলে আবেদনের সংখ্যা না কমে দিন দিন বেড়েই চলেছে। এধরনের অযৌক্তিক আবেদন যাতে নাগরিকরা কম করে সে জন্য আমরা ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। এটি চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। প্রথম আবেদনে এক টাকা লাগলে দ্বিতীয় আবেদনে লাগবে দুই টাকা। এভাবে প্রতি আবেদনে তা বাড়তে থাকবে।
এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমার কাছে কোনো আবেদনই অযৌক্তিক না। যখন কোনো নাগরিক আমার কাছে আবেদন করে তখন ওই আবেদনটা বিবেচনা করা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তবে কিছু কিছু নাগরিক আছেন যারা অকারণেও সংশোধনের আবেদন করেন। এগুলো নিয়ন্ত্রনের জন্য কিছু নিয়ম-কানুন করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’
সংশোধন আবেদন ফি বাড়ানোর পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অযৌক্তিক আবেদন যাতে কমে সেজন্য আমরা আবেদন ফি বাড়ানোর একটা পরিকল্পনা করছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আমরা মিটিং করেছি। ঈদের লম্বা ছুটি শেষ হলে এ বিষয়ে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এনআইডি তথ্য সংশোধনের পদ্ধতিকে জবাবদিহিমূলক ও প্রযুক্তিনির্ভর না করলে এই ধরনের তথ্য বিকৃতি আরও বাড়বে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী, তথ্য-উপাত্তের সংশোধনের প্রয়োজন হলে নাগরিক কর্তৃক প্রদত্ত আবেদনের ভিত্তিতে, নির্ধারিত পদ্ধতিতে ও ফি প্রদান সাপেক্ষে, নিবন্ধক কর্তৃক সেটা সংশোধন করা যাবে। অথবা উক্ত তথ্য-উপাত্ত জাতীয় পরিচয়পত্রে সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ না হলে নাগরিক কর্তৃক প্রদত্ত আবেদনের ভিত্তিতে নিবন্ধক কর্তৃক, কোনো প্রকার ফি প্রদান ব্যতিরেকে, তা সংশোধন করা যাবে।
এই আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী, কোনো নাগরিক জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির লক্ষ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিবৃত তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করলে তাকে ১ বছরের কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সবশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন।
এমএইচএইচ/জেবি