ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে জুনের মধ্যে একটি ভোটার তালিকা প্রকাশের পরিকল্পনা হাতে নিলেও আইনের বেড়াজালে এটি ঝুলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, আইন অনুযায়ী ২ মার্চ ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করতে হয়। এজন্য ভোটার তালিকা আইন ও বিধিমালায় সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন, যাতে বছরের যেকোনো সময় খসড়া ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের ক্ষমতা কমিশন হাতে পায়। সংশোধনী অনুমোদিত হলে নতুন ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের পথ সুগম হবে। আইন সংশোধন হলে প্রতি বছর ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা এবং ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের পাশাপাশি বছরের যেকোনো সময়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পাবে সংস্থাটি। তবে ভোটার তালিকা আইন ও বিধিমালায় সংশোধনী আনার প্রক্রিয়াটা দীর্ঘ হচ্ছে, যার ফলে এখন জুনে ভোটার তালিকা করতে পারা যাবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এ ব্যাপারে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমাদের হালনাগাদের সব কার্যক্রম শেষ হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণে আইন-বিধির কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যা নিয়ে কমিশন কাজ করছে। ওটি সমাধান হয়ে গেলেই আমরা পরবর্তী সব কার্যক্রম গ্রহণ করব। আপাতত এখন আর কোনো কার্যক্রম নেই।’
কমিশন সূত্র জানায়, ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এর ৩ ধারার উপধারা (জ) এবং ১১ ধারার ১ উপধারায় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। সংশোধনীতে এমন ভাষা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে নির্বাচন কমিশন প্রয়োজন অনুযায়ী ভোটার যোগ্যতা অর্জনের তারিখ এবং তালিকা সংশোধনের সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে।
প্রস্তাবিত সংশোধনীর মূল বিষয়গুলো
বিজ্ঞাপন
ধারা ৩(জ): ভোটার যোগ্যতা অর্জনের তারিখ হিসেবে ১ জানুয়ারির পরিবর্তে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত অন্য তারিখ নির্ধারণের সুযোগ থাকছে। ধারা ১১(১): ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চ সময়সীমা ছাড়াও কমিশনের বিবেচনায় ‘উপযুক্ত সময়’ উল্লেখ করে নমনীয়তা আনার প্রস্তাব রয়েছে।
ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) অনুবিভাগের পরিচালক মো. আব্দুল মমিন সরকারের সই করা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত মোট ৬৩ লাখ ৪৮ হাজার ২৫৬ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ২৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৮ জন, নারী ভোটার রয়েছে ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৬ জন এবং হিজড়া ভোটার রয়েছে ২১২ জন। তাদের মধ্যে ছবি তুলে ও আঙুলের ছাপ দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ৬১ লাখ ৮৩ হাজার ৭৭৭ জন। এছাড়া মারা যাওয়ায় ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৪৩ জনকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। যার মধ্যে পুরুষ মৃত ভোটার বাদ যাবে ১২ লাখ ৪৮ হাজার ৪৫২ জন, নারী মৃত ভোটার বাদ যাবে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৫৭২ জন এবং হিজড়া মৃত ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে ৩২৫ জন।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন কার্যক্রম গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত চলমান ছিল। এই সময়ে মধ্যে যারা বাদ পড়েছেন তারা অনলাইনে তথ্য পূরণ করে নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়ে ভোটার হয়েছেন। পরবর্তী আর সময় বাড়ানো হবে কি না তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন পর্যন্ত দেশের ৫২২টি থানা/উপজেলার নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এর থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে ছয়বার। ২০০৯-২০১০ সাল, ২০১২-২০১৩ সাল, ২০১৫-২০১৬ সাল, ২০১৭-২০১৮ সাল, ২০১৯-২০২০ ও ২০২২-২০২৩ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করে ইসি।
সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শেষ হলে এতে আরও প্রায় ৬৩ লাখ ভোটার যুক্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইসি আগামী ডিসেম্বরকে টার্গেট করলেও সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অস্পষ্টতা রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যে একাধিকবার বলেছেন, আগামী ডিসেম্বর থেকে নিয়ে পরের বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে সেটা ঠিক কোন মাসে হবে এ ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে সরকারের পক্ষ থেকে আজও বলা হয়নি। তবে নির্বাচন কমিশন চায়, নির্বাচন যখনই হোক তাদের প্রস্তুতির কিছু যেন বাকি না থাকে।
এমএইচএইচ/জেবি