ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র এক দিন। ঈদুল আজহা মানেই কোরবানি। গ্রামের মানুষেরা সাধারণত নিজেদের কোরবানি নিজেরা করলেও রাজধানীতে প্রায় সবার কোরবানিতেই সহযোগিতা নেওয়া হয় কসাইয়ের। এজন্য কোরবানি ঈদে কসাইয়ের ব্যাপক চাহিদা থাকে। রাজধানীতে অবস্থান করা কসাইরা সেই চাহিদা পূরণ করতে পারেন না। ফলে দেশের নানা এলাকা থেকে কসাইরা ভিড় করেন ঢাকায়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ঢাকার বাইরে থেকে আসা এসব কসাইয়ের কারণে নগরবাসীর সুবিধা হয়। তবে অনভিজ্ঞ এসব কসাইয়ের দ্বারা পশু জবাই ও মাংস কাটাকাটিতে আছে ঝুঁকিও।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই অনেক শ্রমিক, দিনমজুর ও রিকশাচালক নিজেদের পেশা ছেড়ে রাজধানীর বিভিন্ন পশুর হাটে এসে বেপারীদের সঙ্গে কাজ করছেন। একই সঙ্গে যারা কোরবানির পশু কিনছেন তাদের সঙ্গে চুক্তি করছেন কসাইয়ের কাজের জন্য।
বিজ্ঞাপন
গাবতলী গরুর হাটের পাশে দেখা মিলল সোহেল মিয়ার। তিনি পেশায় রিকশাচালক। তিনি এসেছেন রংপুর থেকে চার দিন আগে। তিনি বলেন, আমি গত ৭-৮ বছর ধরেই কোরবানির ঈদে ঢাকায় আসি গুরু জবাইয়ের কাজ করতে। জেলার তুলনায় ঢাকায় এই কাজের চাহিদা বেশি। তিন দিনে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা ইনকাম হয়।
হাজারীবাগ গরুর হাটে খড় বিক্রি করছেন সুমন মিয়া। তিনি পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। তিনি বলেন, আমি প্রতি কোরবানি ঈদে হাটের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত গরুর খড় বিক্রি করি। এরপর আমাদের ছয়জনের একটি গ্রুপ আছে, সবাই মিলে ঈদের দিন থেকে পরবর্তী তিন দিন কসাইয়ের কাজ করি। ইনকাম ভালোই হয়।
বিজ্ঞাপন
মৌসুমি কসাই আব্দুল জব্বার এসেছেন বরিশাল থেকে। তিনি বলেন, দুই দিন হাটে কাজ করবো। গরু গাড়িতে উঠানোসহ ক্রেতাদের বাড়ি পৌঁছাতে সহযোগিতা করবো। এরপর ঈদের দিন থেকে যাদের সঙ্গে চুক্তি হবে তাদের বাড়ি গিয়ে গরু জবাইয়ের কাজ করবো।
একটি গরু জবাই থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত কত টাকা নিয়ে থাকেন- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের নির্দিষ্ট কোনো রেট নেই। গরুর দামের ওপর নির্ভর করে। গত বছর হাজারে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় কাজ করেছি। এবার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নেওয়ার কথা চিন্তা করছি। তবে কত করে পাবো তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এছাড়া এখন ঢাকাতে কসাইয়ের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। তাই রেট কমও হতে পারে।
ঢাকার স্থানীয় কিছু কসাইয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকায় যে পরিমাণ গরু জবাই হয় এতে স্থানীয় কসাই দিয়ে তা শেষ করা সম্ভব হবে না। এতে মৌসুমি কসাই প্রয়োজন। তারা নিজেরা গ্রাম থেকে লোক নিয়ে আসে। তবে মৌসুমি কসাইয়ের আনাগোনাতে রাজধানীর নিরাপত্তাও ঝুঁকিতে পড়ে বলে তারা উল্লেখ করেন।
ঝিগাতলার কসাই শরিফ ঢাকা মেইলকে বলেন, কোরবানি ঈদে মৌসুমি যে কসাইরা আসে তারা বেশির ভাগই এ পেশার সঙ্গে যুক্ত নয়। ফলে অদক্ষ। কোরবানির মাংস কাটাকাটিতে গাফিলতি হয় এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে বেশি। পশুর চামড়া নষ্ট হয় বেশি। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতিও কিছুটা অবনতি হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমরা কোরবানির সময় পরিচ্ছন্নতা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। পাশাপাশি নিবন্ধিত কসাইদের তালিকা রাখতে চেষ্টা চলছে, যাতে অসচেতন বা অনভিজ্ঞ কেউ বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি না করেন।’
জানা গেছে, ঢাকায় প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগে ১৫-২০ হাজার মৌসুমি কসাই বিভিন্ন জেলা থেকে আসেন। তারা মূলত রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, গাজীপুর, জামালপুর ও বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। তবে সবচেয়ে বেশি লোকজন আসে উত্তরবঙ্গ থেকে। এবারও দলে দলে আসছেন মৌসুমি কসাইরা।
এমএইচএইচ/জেবি