দেশজুড়ে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। প্রচণ্ড তাপে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ঘরে কিংবা বাইরে কোথাও নেই একটু স্বস্তি। সবচেয়ে কষ্টে আছেন শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষেরা। এতে অনেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। একটু বৃষ্টির অপেক্ষায় হাহাকার করছে পুরো দেশ।
রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের বেশির ভাগ জেলায় তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছেছে। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাজধানী ঢাকায়ও তাপমাত্রা পৌঁছায় ৪০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এ বছরের ঢাকার সর্বোচ্চ।
বিজ্ঞাপন
তীব্র দাবদাহে কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের জন্য। পদস্থ কর্মকর্তারা শীতাতত নিয়ন্ত্রিত দফতরে অফিস করলেও খেটেখুটে খাওয়া মানুষজন তীব্র রোদ মোকাবেলা করেই কাজ করতে হয়। বিশেষ করে রাস্তার নির্মাণ শ্রমিক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, হকার, ফুটপাতের ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস শ্রমিক থেকে শুরু করে দিনমজুর—প্রত্যেকেই এই গরমে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিক আজাদ মিয়া বলেন, ‘রোদে দাঁড়াইলে মাথা ঘুরে যায়, কিন্তু কাজ তো করতে হবে। না খেয়ে তো বাঁচা যায় না। পানি খাই খাই ক্লান্ত হইয়া যাই।’
গুলিস্তানের রিকশাচালক সুজন খান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘তীব্র গরমে সর্দি ও পেট খারাপ হয়ে দুই দিন রিকশা চালাতে পারিনি। আজ বের হয়েছি রিকশা নিয়ে। অটোরিকশা থাকলে গরমে কষ্টটা একটু কম হয়। বাধ্য হয়ে এই গরমেও প্যাডেল রিকশা চালাতে হচ্ছে। সারা দিন তীব্র গরমের মধ্যে রিকশা চালিয়ে পানি আর শরবত খেতেই অনেক টাকা চলে যায়। এত গরম জীবনেও দেখি নাই।’
এই তীব্র গরমে চাহিদা বেড়েছে ফুটপাতের মুখরোচক নানা শরবতের। অনেকেই এক চুমুক শরবতে একটু ক্লান্তি দূর করছেন। তবে অনেকেই মানছে না স্বাস্থ্যবিধি। খাবারের ব্যাপারে অনেক সচেতন ব্যক্তিও গরমের যন্ত্রণায় সব বিধি মানছেন না।’
মতিঝিল এলাকায় শরবত বিক্রেতা আল আমিন বলেন, ‘বেচাকেনা আগের চেয়ে এখন ভালো। এই গরমে বরফের পানির শরবতের একটু স্বস্তি পান গ্রাহকরা।’
স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে এত নিয়মকানুন মেনে ব্যবসা করা যায় না৷’
রাজধানীর গণপরিবহনের যাত্রীরা ভুগছেন চরম অস্বস্তিতে। এক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে মেট্রোরেল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই গরম স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন ও বিভিন্ন ত্বকজনিত সমস্যাও বাড়ছে।
টানা পাঁচ দিন তীব্র গরম, দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি না হওয়া, দক্ষিণ দিক থেকে জলীয় বাষ্প কম আসা, বাতাসের গতি কমে যাওয়া—এসব কারণে চলমান তাপপ্রবাহ আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর প্রভাবে ডায়রিয়া, হিটস্ট্রোকসহ গরমজনিত রোগবালাই বেড়ে গেছে।

সরকারি হাসপাতালগুলোতে হিটস্ট্রোক ও গরমজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। তবে এখনো পর্যন্ত গরম মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞরা। নইলে সামনে জনজীবন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
তীব্র গরমে পুড়ছে ঢাকাসহ ৮ জেলা
গত কয়েক দিনের মতো আজও তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের আট জেলা। সেই সঙ্গে দেশের অন্যান্য জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর।
আবহাওয়া অফিস জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এছাড়া চুয়াডাঙ্গা, ঢাকা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এমআর/জেবি

