বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫, ঢাকা

গরমে হাঁসফাঁসেও বোরো চাষিদের মুখে চওড়া হাসি!

মাহাবুল ইসলাম
প্রকাশিত: ১১ মে ২০২৫, ১২:২৩ পিএম

শেয়ার করুন:

agriculture
এবার বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি। ছবি: সংগৃহীত

দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি থেকে তীব্র তাপদাহ। প্রচণ্ড খরতাপে যখন জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা তখন বোরো চাষিদের মুখে ফুটছে পুষ্পের হাসি। যদিও প্রচণ্ড গরমে শরীর পুড়ছে তাদেরও। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচণ্ড রোদ, গরম বাতাস ও হিটস্ট্রোকে সাধারণ মানুষ বিপর্যস্ত হলেও এই গরমই বোরো চাষের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে ধরা দিয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

চলতি বোরো মৌসুমে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ধানের উৎপাদনে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। ধান কাটতে গিয়ে পড়তে হয়নি বিড়ম্বনায়। এত ভালো ফলন ও নির্বিঘ্নে ঘরে বোরো আবাদ তুলতে পেরে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে।


বিজ্ঞাপন


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ৫৩ শতাংশ বোরো আবাদ কৃষকের ঘরে উঠেছে। এবার সারাদেশে ৫০ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। অর্থাৎ ২৬ লাখ ৭৪ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমির বোরো আবাদ এখন কৃষকের ঘরে।

আরও পড়ুন

তাপমাত্রা কিছুটা কমবে আজ, কাল কোথাও কোথাও বৃষ্টি

কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বোরো ধানের একটি বড় অংশ আবাদ হয় দেশের হাওরাঞ্চলে। যেখানে ৮০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। চলতি জুন মাস পর্যন্ত ধান কাটার কাজ চললেও মে মাসের মাঝামাঝিতে তা প্রায় শেষ হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, বোরো মৌসুমই দেশের ধান উৎপাদনের প্রধান ভিত্তি। দেশের মোট ধান উৎপাদনের ৫৮ ভাগ আসে এই মৌসুম থেকে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়ায় বিগত বছরগুলোর মতো ক্ষতির সম্মুখীন হননি চাষিরা। 


বিজ্ঞাপন


Agriculture2

২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের বোরো ধানের উৎপাদন ছিল দুই কোটি ১০ লাখ টন, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই কোটি ২৬ লাখ টন। এ বছর সারাদেশে বোরো আবাদ হয়েছে ৫০ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই কোটি ২৬ লাখ টন। দেশের ধানের ১০ ভাগ উৎপাদিত হয় হাওরাঞ্চলে। যেখানে প্রায় ২১ লাখ টন ধান উৎপাদিত হয়। হাওরাঞ্চলের চার লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে অধিকাংশই সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অবস্থিত। সেখানে কম্বাইন্ড হারভেস্টার ব্যবহারে ধান কাটার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

আরও পড়ুন

প্রবল শক্তি নিয়ে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, মূলত আমাদের এলাকার প্রধান আবাদই হলো বোরো ধান। বোরো ধানের মধ্যে আমরা জিরাসাইল ধানের আবাদ সর্বাধিক পরিমাণ জমিতে করে থাকি। কিছু কিছু জমিতে নতুন অন্য জাতের ধানের চাষও করা হয়েছে। এবার শুরু থেকেই আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের আবাদ ভালো হয়েছে।

রাজশাহীর বেরো চাষি আনসার আলী ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার জমি উঁচু। সারা মাস সেচ দিয়ে আবাদ করতে পাগল হওয়ার অবস্থা হয়। অথচ ধান পাকার সময় উজানের ঢল এসে ধান ঠুবানোর একটা ভীতি থাকে। তবে এবার কোনো দুর্ভোগ ছাড়াই আবাদ ঘরে তুলতে পেরেছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন শাখার প্রকল্প পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল ঢাকা মেইলকে বলেন, প্রতি বছরই এ সময়ে বৃষ্টি ও বন্যার ঝুঁকি নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকেন চাষিরা। কিন্তু এখন আকাশে রোদ। যে রোদে মানুষ হাঁসফাঁস করলেও বোরো চাষিরা খুশি। কারণ তারা নির্বিঘ্নে ঘরে ধান তুলতে পারছে। এখন পর্যন্ত বোরো আবাদে দেশের কোনো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানতে পারিনি।

এমআই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর