-
- বছরে ক্ষতি কমবে ৫ হাজার কোটি টাকার
- খাদ্য নিরাপত্তায় আনবে আমূল পরিবর্তন
- শক্তিশালী হবে কৃষি অর্থনীতি
- দূর হবে কৃষকদের হাহাকার
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের অভাবে বাংলাদেশে প্রতি বছর মোট উৎপাদনের ৩০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়। আর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের হিসাবে, নষ্ট হওয়া পণ্যের মোট ক্ষতির অংক প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে, গত ৫০ বছরে এই ক্ষতির পরিমাণ আড়াই লাখ কোটি টাকা। এই বিশাল ক্ষতি এড়াতে খাদ্য মন্ত্রণালয় চারটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ছয় হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে তিনটি প্রকল্পের কাজ ৮০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। আগামী অর্থবছরে মিলতে পারে সুফল। যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বনির্ভরতায় নবদিগন্তের সূচনা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
খাদ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, এই চারটি প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন দীর্ঘ সময় সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্তের দিকে চলে যাওয়া খাদ্যগুদাম নতুন রূপ পেতে যাচ্ছে, তেমনি নতুন আধুনিক সংরক্ষণাগারও নির্মাণ করা হচ্ছে। যা আগামীর খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নে দেশকে একধাপ এগিয়ে রাখবে।
দফতরটির তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে তিন হাজার ৮৮৮ কোটি ৩২ লাখ টাকায় ‘আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্প’, এক হাজার ৪০০ কোটি ৩৭ লাখ আট হাজার টাকায় ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান শুকানো, সংরক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ আধুনিক ধানের সাইলো নির্মাণ (প্রথম ৩০টি সাইলো নির্মাণ পাইলট প্রকল্প)’। প্রকল্পটি সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে ডিসেম্বর ২০২৪ এ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ বেড়েছে। ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত ৮১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নের ‘দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ’ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই তিন প্রকল্পে ছয় হাজার ১০৩ কোটি ১৯ লাখ আট হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। যেখানে কাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশের বেশি। এছাড়া পুরোনো কারখানা সংস্কারের জন্য আরও ২৫৫ কোটি প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে।

কৃষিবিদ ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির দেশ হিসেবে আমাদের দেশে প্রকল্পগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার চিত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে। এছাড়া বিপুল পরিমাণ খাদ্য নষ্ট ও অপচয় রোধ হবে। যা দেশের কৃষি অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড সিকিউরিটি ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহেল রানা সিদ্দিকী ঢাকা মেইলকে বলেন, খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি সংরক্ষণও খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের দেশে মৌসুমে প্রচুর উৎপাদন হয়। সে সময় কৃষকরা ন্যায্য দাম পান না। এসময় প্রচুর খাদ্য নষ্টও হয়। দেশের খাদ্য সংরক্ষণ প্রক্রিয়া শক্তিশালী হলে খাদ্য নিরাপত্তা শক্তিশালী হবে। কৃষকদের হাহাকার দূর হবে। অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। এক্ষেত্রে এই প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে খাদ্য নিরাপত্তায় আমূল পরিবর্তন যে আসবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগার নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ১৯টি জেলার ৬৩টি উপজেলায় পাঁচ লাখ পারিবারিক সাইলো বিতরণ করা হবে। সারাদেশে ইন্টারনেটভিত্তিক খাদ্য মজুদ, পরিবহন, সংগ্রহ এবং বাজার মনিটরিং কার্যক্রম প্রবর্তন, খাদ্য ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ ও কৌশলগত সমীক্ষা, খাদ্য অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি স্থাপনায় Digital Track Weigh Bridge স্থাপন করা হচ্ছে। এছাড়া খাদ্য অধিদফতরের ছয়টি আঞ্চলিক অফিসে খাদ্যের গুণগতমান পরীক্ষার জন্য ছয়টি আধুনিক Food Testing Laboratory স্থাপন হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান শুকানো, সংরক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ আধুনিক ধানের সাইলো নির্মাণ পাইলট প্রকল্পে কৃষকের থেকে সরাসরি ধান কেনার মাধ্যমে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রদান নিশ্চিত করা হবে। সরকারি খাদ্য ব্যবস্থাপনায় ১.৫০ লাখ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, আধুনিক প্রযুক্তির অভিযোজন, মজুদ ব্যবস্থার মাধ্যমে ২-৩ বছর শস্যের মান নিয়ন্ত্রণ, আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ২৩ বছর শস্যের পুষ্টিমান বজায় রাখাসহ নিরাপদ ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাদ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে।
দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্য গুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্পে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্যের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করাসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন চ্যানেলে খাদ্যশস্য যথাসময়ে পৌঁছানো হবে। এছাড়া ২৫৫ কোটি টাকার প্রকল্পের মাধ্যমে ২৯৩ খাদ্যগুদাম সংস্কার করা হবে।
খাদ্য অধিদফতরের চলাচল, সংরক্ষণ ও সাইলো বিভাগের পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, সরকারের এই প্রকল্পগুলো আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই তার সুফল জনগণ পাবে।
এমআই/জেবি