মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

পল্লবীতে গুলির নেপথ্যে পারিবারিক দ্বন্দ্ব

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img
পারিবারিক কলহের জেরেই হামলা করা হয়। (প্রতীকী ছবি)

রাজধানী পল্লবীতে গুলির ঘটনার নেপথ্যের কারণ খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। মূলত পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। ছেলের বৌ ও ছেলেকে শায়েস্তা করতেই লোকজনকে দিয়ে হামলা করা হয়। পরে আতঙ্ক ছড়াতে হামলাকারীরা গুলি করে পালিয়ে যান। যারা গুলি করে পালিয়েছেন তাদের কয়েকজনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। যদিও তাদের কাউকে এখনো আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

পুলিশ বলছে, হামলাকারীদের একজন ভুক্তভোগীর মামাতো ভাই। এই মামলায় ভুক্তভোগী তার মা, মামা ও মামাতো ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। হামলাকারীরা একটি অপরাধী চক্রের সদস্য। তাদের নামে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও এলাকাবাসীর নানা অভিযোগও রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


গত বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে পল্লবীর বাউনিয়া বাঁধের ই ব্লকের ২ নম্বর লাইনে থাকা ১৩ নম্বর বাসার সামনে গুলির ঘটনা ঘটে। এতে মামুন হোসন বাপ্পি নামে এক যুবক গুরুতর আহত হন। কয়েকজন যুবক চারটি মোটরসাইকেলে এসে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। পরে তারা পালিয়ে যায়।

সোয়া দুই মিনিটের অপারেশন!

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সেই সময় মোটরসাইকেলে ১০ থেকে ১২ জন যুবক এসেছিল। তারা মাত্র সোয়া দুই মিনিট সেখানে অবস্থান করে। এই সময়ের মধ্যে গুলিতে আতঙ্ক সৃষ্টি করে পালিয়ে যায় তারা। সেই গুলিতে মামুন হোসেন বাপ্পি নামে এক ব্যক্তি আহত হন। বাকি গুলিগুলো পাশের দুটি ঘরের জানালায় লাগে। এতে ওই জানালার গ্লাস ভেঙে যায়। ওই সময় বাসাটিতে ছোট ছোট বাচ্চারা ছিল। ফলে তাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর থেকে হামলাকারীরা গা ঢাকা দিয়েছে। 

এলাকাবাসী বলছে, এ হামলায় হোসেন, সুজন ও  সোহেলসহ ১০ থেকে ১২ জন এসেছিলেন। তারা গুলি ও ভাঙচুর চালান। এতে নারীসহ কয়েকজন আহত হন।


বিজ্ঞাপন


এ ঘটনার পর সেই এলাকার একটি বাসার সামনে থাকা সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ এসেছে ঢাকা মেইলের কাছে। সেই ফুটেজে দেখা গেছে, সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ থেকে ৬টা ৩৬ মিনিট ১৫ সেকেন্ড পর্যন্ত এই অপারেশনে তারা অংশ নেয়। অপারেশন শেষ করে পালিয়ে যায় তারা। পরে পুলিশ গিয়ে সেই বাসা ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি বাসা থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং সেগুলো পরে জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়।

আরও পড়ুন

‘সন্ত্রাসের জনপদ’ পল্লবী: আধিপত্য ধরে রাখতে সক্রিয় বিভিন্ন গ্রুপ

রাতের পূর্বাচল ‘ভয়ঙ্কর’: অপরাধ রোধে বসছে সিসি ক্যামেরা, ডিবির নজরদারি

পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা সিসি ক্যামেরা দেখে হামলাকারীদের কয়েকজনকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। তাছাড়া এই হামলায় কয়েকজন এলাকাবাসীর পূর্ব পরিচিত ছিল। ফলে বাকিদেরও শনাক্ত করতে তেমন বেগ পেতে হবে না বলে মনে করছে পুলিশ। 

ঘটনার নেপথ্যে…

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বাউনিয়া বাঁধের মামুন মীম নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেন। তার ঘরে দুই সন্তান রয়েছে। কিন্তু আট মাস আগে মীমকে তার শাশুড়ি গর্ভাবস্থায় বাসা থেকে বের করে দেন। পরে মামুন তার স্ত্রীকে নিয়ে শাশুড়ির বাসায় ওঠেন। সেখানেই তারা গত আট মাস থেকে ছিলেন। সম্প্রতি আবারও বাসায় ফিরে যান। কিন্তু আবারও কলহ দেখা দেয়। এবার বৌকে নিয়ে বের হয়ে এসে মামা শ্বশুরের বাসায় ওঠেন। সেখানে তারা গত এক মাস ধরে আছেন।

ঈদে মামুনের ছেলেকে দেখার জন্য তার মা মমতাজ আক্তার গত কয়েক দিন থেকে ঘোরাফেরা করছিলেন। মামুনের মামা শ্বশুরের বাসার সামনে এসে তার দুই ছেলেকে ডাকেন। কিন্তু তারা কিছুতেই বের হয়নি। এ নিয়েই মূলত ক্ষোভ সৃষ্টি হয় মমতাজ বেগমের। পরে তিনি এলাকায় ফিরে সেই খবরটি দেন তার ভাইয়ের ছেলে হোসেনকে। পরে হোসেন তার লোকজন নিয়ে আসেন এবং হামলা করেন।

মূলত স্বামীকে শায়েস্তা করতেই তারা এসেছিলেন বলে দাবি করেছেন মামলার বাদী মীম।

এমআইকে/জেবি

 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন


News Hub