বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

বাড়তি ভাড়ায় ম্লান স্বস্তির ঈদযাত্রা

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৫, ০৪:২৫ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

প্রতি বছর ঈদ এলে ঘুরমুখো মানুষের ঢল নামে সড়ক-মহাসড়কে। রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল থেকে শুরু করে লঞ্চঘাট সব জায়গায় মানুষে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বাস ও ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করে। মানুষ ও গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় সড়কেই লম্বা সময় যায় ঘরমুখো মানুষের।

কিন্তু এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরুর পর থেকেই এবার সড়কে নেই তেমন চাপ। বাস থেকে শুরু করে ট্রেন সব যানবাহনই সময়মতো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। শেষের দিকে যাত্রীচাপ তুলনামূলক বাড়লেও সময়মতো ছাড়ছে গাড়ি। যাত্রাপথে সড়কে ভোগান্তি তেমনটা নেই। সব মিলে এবারের ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তির হলেও তা ম্লান হয়েছে বাড়তি ভাড়ার কারণে।


বিজ্ঞাপন


যদিও শনিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম গাবতলীসহ বিভিন্ন টার্মিনালের বাস কাউন্টার ঘুরে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাননি বলে জানান।

Dhaka-1উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গসহ বিভিন্ন রুটি বাস-যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যান্য রুটের অবস্থাও একই। বিষয়টি নিয়ে বিআরটিএ দেখভাল করলেও বন্ধ করা যাচ্ছে না বাড়তি ভাড়া।

রোববার সকালে মিরপুর থেকে খুলনার কয়রায় যাওয়ার জন্য ফাল্গুনী এসি বাসে উঠেন সাইফুল ইসলাম। বাসে ওঠার আগে তার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের প্রতিবেদকের।

সাইফুল বলেন, ‘আমাদের এই রুটের ভাড়া ৭০০ টাকা হলেও নেওয়া হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। উপায় না পেয়ে বেশি টাকা দিয়েই যেতে হচ্ছে।’


বিজ্ঞাপন


শুধু খুলনা নয়, উত্তরবঙ্গের জেলা রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় জয়পুরহাট, কুড়িগ্রামের রুটের বাসগুলোতেও বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বরিশাল, বাগেরহাট, খুলনা, যশোর ও পটুয়াখালী রুটেও বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বিভিন্ন বাস কাউন্টারগুলো। যদিও বাস টার্মিনালগুলোতে ভিজিলেন্স টিম কাজ করছে।

Dhaka-4

ভিজিলেন্স টিমের কাছে গিয়ে জানতে চাইলে তাদের একটাই উত্তর, কেউ যদি কোন ধরনের অভিযোগ করে আমরা ব্যবস্থা নেব।

গাবতলীতে একটি ভিজিলেন্স টিমের বুথ বসানো হয়েছে কিন্তু সেখানে গত তিন দিনেও কোন অভিযোগ পড়েনি বলে জানা গেছে।

এসি বাসে নৈরাজ্য

উত্তরের জেলাগুলোতে চলাচলকারী এসি বাসগুলোতে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বাড়তি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গাবতলীতে কথা হয় ঠাকুরগাঁওয়ের যাত্রী আসাদের সঙ্গে। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘তার বন্ধুরা এসি বাসের টিকিট কেটেছেন তিন হাজার টাকা দিয়ে। যা অন্যান্য সময় মাত্র ১৫০০-১৮০০ টাকায় পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সেটি তিন হাজারের নিচে বিক্রি হচ্ছে না।” 

রংপুরের বাসিন্দা রাকিব বলেন, ‘আমি নিজে ১৪০০ টাকা টিকিট ২৫০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। স্লিপার বাসগুলোতে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত একটি টিকিট বিক্রি হতে দেখেছি। নন এসি ৯২০ টাকা সরকারি ভাড়া হওয়ার কথা থাকলেও ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরমের কারণে এমনটা করা হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করছেন।

গাবতলী বাস টার্মিনালে কথা হয় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটগামী তিন যাত্রীর সঙ্গে। আবু হুরায়রা, রুশো এবং নাজমুল বলেন, আমাদের দিনাজপুর শহর পর্যন্ত ভাড়া ৯০০ টাকা। কিন্তু আমাদের কাছে আদায় করছে ১২০০ টাকা। ইসলাম পরিবহন নামের একটি কাউন্টার থেকে তারা তিনজন টিকিট কেটেছেন বলে জানান।

Dhaka-2রুবেল সরকার হানিফ বাসে পটুয়াখালী যাওয়ার জন্য গাবতলী বাস কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। তিনিও বাড়তি ভাড়ায় টিকিট কিনেছেন বলে জানান।

পাবনা রুটের যাত্রী রাশেদ সিকদার বলেন, ‘আমরা যারা পাবনা যাই তারা সাধারণত পাটুরিয়া হয়েই যাই। অন্যান্য সময় গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত নিয়মিত ভাড়া ১৮০-২০০ টাকা হলেও আজ নেওয়া হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা।

শুধু গাবতলীই নয়, ঢাকার অন্যান্য টিকিট কাউন্টারগুলোতেও টিকিটে বাড়তি দাম নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উত্তরার হাউজ বিল্ডিং থেকে গাজীপুর মাওনা চৌরাস্তা ভাড়া ১০০ -১২০ টাকা হলেও এখন ৩০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সাভারের নবীনগর থেকে সাতক্ষীরার ভাড়া ৫০০ টাকার হলেও এখন নেওয়া হচ্ছে ১১০০ টাকা।

গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহ শেরপুর জামালপুর রোডে ৪৫০ টাকার ভাড়া ১০০০ টাকায় নেওয়ার অভিযোগ মিলেছে। 

বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে যেসব বাসে

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ-মাগুরা-ফরিদপুর-পদ্মা সেতু-সায়েদাবাদ- আব্দুল্লাহপুরের রুটে চলাচলকারী গোল্ডেন-লাইন পরিবহন, পূর্বাশা পরিবহন, রয়েল এক্সপ্রেস, চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স বাস গুলোতেই বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ৬৫০ টাকার টিকিট ৯০০ টাকা করে আদায় করছেন কেউ কেউ। ঢাকা-মঠবাড়িয়া(বরিশাল) রুটে বিএম লাইন পরিবহন ৬০০ টাকার ভাড়া ১০০০ নিচ্ছে। ঢাকা-শরীয়তপুর রুটে চলাচলকারী বাস সুপার পরিবহনসহ সকল বাস ২৫০ টাকার জায়গায় ৩০০-৪০০ টাকা নিচ্ছে। 

রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলা টু গাবতলী, ফেরি দিয়ে চলাচলকারী গোল্ডেন লাইন, রাবেয়া, লালন, রোজিনা, রাজবাড়ী পরিবহনসহ আরও কিছু বাস ৪৫০ টাকার ভাড়া ৬৫০ নিচ্ছে।

এছাড়াও রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা টু গুলিস্থান, পদ্মা সেতু দিয়ে ৫৫০ টাকার ভাড়া ৮০০ টাকা নিচ্ছে।

ঢাকা টু পাবনা রুটে চলাচলকারী বাংলাস্টার পরিবহনে টিকিটের দাম ৬০০ টাকা হলেও এখন ১৩০০ টাকা নিচ্ছে টেকনিক্যাল কাউন্টারে! ঢাকা থেকে পাইকগাছা (খুলনা) রেগুলার ভাড়া ৪৫০ থেকে ৫০০। কিন্তু এখন প্রতিটি বাস নিচ্ছে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা করে।

Dhaka-3ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে গোপালগঞ্জ-নাজিরপুর-পিরোজপুর-রাজাপুর-ভান্ডারিয়া-মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা) রুটে অন্য সময় ৬০০ টাকা দিয়ে মঠবাড়িয়া যাওয়া যেত। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে ১০০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিচ্ছে।

এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক জানিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিগত দুই দশকে এবারই প্রথম আমরা স্বস্থির যাত্রা লক্ষ্য করলাম। এবারে দীর্ঘ একটি ঈদের ছুটি পড়েছে। এছাড়াও গার্মেন্ট কারখানাগুলো পর্যায়ক্রমে তাদের ছুটি দেয়ায় আমরা এই পরিস্থিতির লক্ষ্য করছি।’

বাড়তি ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে পরিবহন সংকটকে পুঁজি করে কিছু অসাধু পরিবহন শ্রমিকরা যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য যাত্রী সাধারণের মতামত এবং তাদের অংশগ্রহণ, যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধি এবং ভিজিলেন্স টিম মিলে এই অতিরিক্ত বাড়তি ভাড়া বন্ধ করা সম্ভব।’

অতিরিক্ত ভাড়া বন্ধে ভিজিলেন্স টিমে বিআরটিএ, পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও পুলিশকে রাখা হয়। এবারও তাই করা হয়েছে। যদি এই টিমে যাত্রী সাধারণের প্রতিনিধি এবং যাত্রীদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন কাউকে রাখলে আগামীতে বাড়তি ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ হবে বলে মনে করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব।

এমআইকে/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর