ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় ব্যবসার লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ দিতে রাজি না হওয়ায় সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী ও তার ভাইকে জুলাই আন্দোলনে নিহত শহীদের নামে করা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মোর্শেদ আলম ও যুগ্ম আহ্বায়ক বাউন্ডারী শহীদের বিরুদ্ধে এই হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর ভাই। তিনি জানান, চাঁদা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে সেই এলাকায় জুলাই আন্দোলনে মাস্টারবাড়িতে তোফাজ্জল হোসেন নামে একজন নির্মাণ শ্রমিক হত্যা মামলায় তাদেরকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও তাদের নামে অভিযুক্তরা এর আগেও দুটি মামলা দিয়ে হয়রানি করেছিলেন বলে জানান সাইফুল ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীর ভাই আবু সাঈদ সরকার।
ভুক্তভোগী আবু সাঈদ সরকার ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হরিরবাড়ী গ্রামের মৃত আব্দুছ ছালাম সরকারের ছেলে। এই মামলায় আরেক আসামি তারই ছোট ভাই সাইফুল ইসলাম সরকার।
তিনি বলেন, আমার ভাই সাইফুল ইসলাম সরকার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভালুকা উপজেলার নেতা ছিল। এখন ভালুকা যুবদলের স্বক্রিয় নেতা। সাইফুল গেল ২৪ এর ছাত্রজনতার আন্দোলনে জীবন বাজি রেখে অংশগ্রহণ করে। সেই সময় মাষ্টারবাড়ীতে তোফাজ্জল হোসেন নামে একজন নির্মাণ শ্রমিক শহীদ হন। আমরা শহীদ তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে রাজপথ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব ভূমিকা পালন করি। কিন্তু অত্যান্ত দুঃখের বিষয়, তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ২১ মার্চ একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় আমার ছোটভাই যুবদল কর্মীকে ইচ্ছা করেই ফাঁসানো হয়েছে। আর এই কাজটি করেছে ওয়ার্ড যুবদল নেতা শরিফ যে কিনা বাউন্ডারি শহীদ ও মোর্শেদ গ্রুপের ক্যাডার।
তিনি আরও বলেন, আমার ভাই সাইফুল ইসলাম রাইদা কালেকশন লিমিটেডের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছে। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা থেকেই উপজেলা বিএনপি এর ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মোর্শেদ আলম ও যুগ্ম আহ্বায়ক বাউন্ডারী শহীদ ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দাবি করেন। লভ্যাংশ না দিলে তারা ফ্যাক্টরি থেকে কোনো প্রকার মালামাল ও ময়লা পর্যন্ত বের করতে দেবেন না বলে হুমকি দেন। আমার ভাই বখরা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তারা। সেই কারণেই মূলত গত ২১ মার্চ আমার ভাইয়ের নামে মামলা করে।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগী বড় ভাই বলেন, এর আগেও একাধিক ব্যক্তি বাদী হয়ে একাধিক মামলা করেছে এই তোফাজ্জল হত্যা বিষয়ে, যার একটিতেও সাইফুল ইসলামের নাম ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করে সাইফুলের নাম আসায় আমরা অবাক হয়েছি। এমতাবস্থায় আমি আপনাদের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী দলের নীতি নির্ধারক ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানেরন কাছে আকুল প্রার্থনা চাঁদাবাজ ও আধ্যিপত্যের মহানায়ক বাউন্ডারী শহিদ ও মোর্শেদ আলমের রোষানল থেকে যেন সাধারণ কর্মীরা রেহাই পাই ও শহীদ তোফাজ্জল হোসেনের হত্যাকারী প্রকৃত আসামিদের বিচার হয়।
এখন পরিবারসহ চরম কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন জানিয়ে আবু সাঈদ সরকার বলেন, সন্ত্রীদের হামলার ভয়ে নিজের বাড়িতে থাকার সাহস পাচ্ছি না। আমাকে ও আমার ছোট ভাইকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি করা হচ্ছে।
তিনি জানান, গত ১৫ নভেম্বর ফ্যাক্টরি থেকে ময়লার গাড়ি বের করতে গেলে শহীদের লোকজন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায়। তাদের একজনের হাত কেটে ফেলে ও অন্য একজনের মাথায় কুপিয়ে মৃত ভেবে ফেলে যায়। বাউন্ডারী শহীদের সন্ত্রাসীরা ১৫টি মোটরসাইকেল ও একটি দোকান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করে। এরপরও পুনরায় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করতে আসার সময় যৌথ বাহিনী অস্ত্র-সস্ত্রসহ ৯ জনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে যা বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও টেলিভিশনে প্রচার হয়েছে এবং থানায় মামলাও হয়েছে। এছাড়াও গত ১২ ডিসেম্বর ফ্যাক্টরি থেকে ময়লার গাড়ি বের করার পর সন্ত্রাসী বাহিনীদের দিয়ে তারা ছিনিয়ে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শেও রাজনীতি করার কারণে গত ১৬ বছর আমরা নানান নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছি। একাধিক দফায় আমার বাড়িতে হামলা হয়েছে। আমার ছোট ভাই মো. সাইফুল ইসলাম সরকার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভালুকা উপজেলা নেতা ছিল। এখন ভালুকা যুবদলের স্বক্রিয় নেতা। জুলুমবাজ সরকার ভালুকা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নামে একাধিক রাজনৈতিক মামলা দিয়েছিল। সেখানে প্রত্যেকটি মামলায় আমার ভাই সাইফুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। তার নামেও একাধিক রাজনৈতিক মামলা করা হয়।
এমআইকে