শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

কাঠামোগত বৈষম্য থেকে মানুষ এখনও মুক্তি পায় নি: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম

শেয়ার করুন:

কাঠামোগত বৈষম্য থেকে মানুষ এখনও মুক্তি পায় নি: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন সরকারের উদ্দেশে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, আমরা সম্প্রতি দেখেছি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন সরকার যে কথা বলে আর বাস্তবতার মধ্যে এখনও পার্থক্য রয়ে গেছে। এ পার্থক্যটার ক্ষেত্রে আমরা দেখছি, যে মানুষগুলো গণতন্ত্রের অভাবের সময় বিপন্ন ছিল, সেই বিপন্নতা এখনও দূর হলো না। কাঠামোগত বৈষম্য থেকে মানুষ এখনও মুক্তি পায়নি।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দফতর, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক একটি সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, আমরা একটি শ্বেতপত্র তৈরি করেছিলাম। সেখানে দেখেছি, উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া মানুষের অংশগ্রহণ নিতান্তই কম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা মারাত্মক। উন্নয়নের এই বৈষম্য দূর করতে হবে। সরকারের পতন হওয়া এবং শাসন পদ্ধতির পরিবর্তন হওয়া এক বিষয় না। এর প্রতিফলনে আমরা যা দেখছি, ড. ইউনূসের মতো ব্যক্তির সরকারও যা বলে, আর বাস্তবতায় যা উঠে আসে, তা এক নয়। কাঠামোগত বৈষম্যের মধ্যে যারা আছে, তারা কিন্তু মুক্তি পায়নি। এ মুক্তির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রচেষ্টা অবিরাম জারি থাকা জরুরি।

রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ সংলাপে অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর সদস্য ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, এখন কেউ কেউ নৈতিক খবরদারির দায়িত্ব নিয়েছেন। তারা সংখ্যায় বড় না, কিন্তু তাদের কণ্ঠস্বর অনেক বড়। তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
সংস্কারের হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের বিষয়ে কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। পরিতাপের ব্যাপার হলো যতগুলো কমিশন গঠন হয়েছে সেখানে পার্বত্য বা সমতলের কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না? তার মধ্যে নারী প্রতিনিধিত্ব ঠিকমতো হয়নি। সবচেয়ে সুবোধ সরকারও তা করতে পারছে না।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর গলা চেপে ধরা হয়েছিল উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, স্বৈরতন্ত্রের বা একনায়কতন্ত্রের কারণে আমাদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর টুঁটি (গলা) চেপে ধরা হয়েছে। অর্থের সমস্যা হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে অনেককে হেনস্থার শিকার করা হয়েছে। কথা বলা যখন খুবই দুর্যোগ ছিল; তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, একা না পারি সবাই মিলে করবো।


বিজ্ঞাপন


সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আমরা বৈষম্যবিরোধীতার কথা বলি। কিন্তু আমরা কি আসলেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলি? কোনো বৈষম্যের কথা বলি, আবার কোনো বৈষম্যের কথা চেপে যাই।

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের এ কর্ণধার বলেন, আপনাদের মনে আছে যখন উন্নয়নের এ বয়ানে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য উপাত্ত ছিল, তখন আমরা পুরো বাংলাদেশ ঘুরে একটি পুস্তিকা রচনা করেছিলাম। সে সময় উন্নয়নের যে ফিরিস্তি চলতো, তার ভেতরে যে ফাঁকফোকর ছিল, তা আমরা সেখানে তুলে ধরেছি।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টচার্য বলেন, তখন দুটি বাস্তবতা ছিল। একটি রাষ্ট্রের, আরেকটি জনগণের। তখন সেটি আমাদের ইতিহাসের অংশ হিসেবে থাকবে। যারা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস লিখবেন, তারা আমাদের প্ল্যাটফর্মের আবেদন যদি মনে না রাখেন। তাহলে হয়তো আমরা ইতিহাসের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবো না। সহকর্মীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন এসডিজি তো সেরকম আকর্ষণীয় বিষয় না। কারণ দেশের ভেতরে বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে কি কারো কোনো আগ্রহ থাকবে?

জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি হুমা খান বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা সমাধানে আরও কৌশলী হতে হবে। আমাদের চিহ্নিত করতে হবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আসলে কারা। কোনো মানুষকে লিঙ্গ, ধর্ম, আয়, ধর্মীয় দিক থেকে পরিচয় দিয়ে বলি এরা হলো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশকে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রয়োজন অনুযায়ী উন্নয়ন হবে তার চেয়ে অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন বেশি প্রয়োজন। তাছাড়া যে কর্তৃত্ব জনগণের কণ্ঠস্বর শোনে না, সে কর্তৃত্ব কোনোভাবেই প্রকৃতভাবে কর্তৃত্ব করতে পারে না।

ইউএনডিপি’র স্টিফেন লিলার বলেন, ভিএনআর হবে আর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বক্তব্য থাকবে না তা হতে পারে না। ভিএনআর প্রতিবেদনটি প্রকৃতপক্ষে পিছিয়ে পড়াদের চিত্র তুলে এনেছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি ও রাজনৈতিকভাবে বৈষম্য বাড়লে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে অবধারিতভাবে। রাষ্ট্রের মূল দায়িত্ব সবচেয়ে দুর্বলতমদের কথা তুলে আনা, তাদের কথাকে গুরুত্ব দেওয়া। এটি হলে অতিদরিদ্র কমে যাবে, অসমতা কমবে, সব ধরনের ব্যক্তি পর্যায়ে সুযোগ নিশ্চিত হবে। আমরা এ মূল্যায়ন করছি একটি পরিবর্তিত সময়ে। বিগত সময়ে আমরা বিভ্রান্তিকর উন্নয়নের বয়ানের মধ্যে গিয়েছি। আমরা দেখেছি, গড়ে কিছু উন্নতি হলেও বেশকিছু পার্থক্য রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিগত সময়ে এ উন্নয়নের ভেতরে সবাই সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। তাদের উন্নয়নে অংশ নিতে হলে নির্ধারিত ছিল তারা সমাজের কোন অংশ থেকে আসে। বাংলাদেশের মানুষ গড়ে ৭৩ বছর বাঁচে, কিন্তু সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো অতদিন বাঁচতে পারে না।

এমআই/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর