জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়েছেন, যদি সরকার চায়, তবে জুলাই অভ্যুত্থান সংক্রান্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। বুধবার (৫ মার্চ) জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশনে এই মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত জাতিসংঘের ‘হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন্স অ্যান্ড অ্যাবিউজেস রিলেটেড টু দ্য প্রটেস্টস অব জুলাই অ্যান্ড আগস্ট ২০২৪ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক রিপোর্টটির বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েই এই পরামর্শ দেন ভলকার তুর্ক। তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে সরকার যদি চায়, তবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে (আইসিসি) এই বিষয়ে রেফার করা যেতে পারে। এটি একটি সার্বজনীন বিচারব্যবস্থায় বিচার নিশ্চিত করার একটি উপায় হতে পারে।’
বিজ্ঞাপন
ভলকার তুর্ক তার বক্তব্যে বলেন, জাতিসংঘের তদন্তে কোনো পক্ষপাতিত্ব ছিল না এবং এটি একেবারেই নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ তাদের তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের তদন্ত দল সরকারি কর্মকর্তাদের, নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী এবং তাদের সহায়ক দলের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে।’
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে— জুলাই আন্দোলনে এবং এর পরবর্তী সময়ে সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তারা, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা, এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বেআইনি আটক, শারীরিক নির্যাতন ও অশোভন আচরণের মতো অপরাধ করেছে। এই ধরনের কর্মকাণ্ড খুবই সুসংগঠিত ও পরিকল্পিতভাবে চলেছে। রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে— সাবেক ক্ষমতাসীন নেতাদের নির্দেশে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল বিক্ষোভকারীদের কণ্ঠরোধ করা এবং সাবেক সরকারের ক্ষমতা ধরে রাখা।
ভলকার তুর্ক বলেছেন, ‘আমরা যা তথ্য পেয়েছি, তাতে সুস্পষ্টভাবে অপরাধের আলামত রয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী ও তাদের সহিংস সমর্থকরা এসব অপরাধ করেছে।‘ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হাসপাতাল থেকে আহতদের চিকিৎসা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করেছি, এবং তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
এ সময় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, জুলাই ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহমুদুর রহমান এবং মায়ের ডাকের সানজিদা ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া, হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বাংলাদেশের সরকারকে আহ্বান জানান, আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার নভেম্বরে আন্দোলনের আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাদের অবস্থা খুবই দুঃখজনক ছিল, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সরকারের একটি প্রধান কর্তব্য।’
এদিকে, আসিফ নজরুল এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান, তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এ বিষয়ে সরকারের কাছে পরিসংখ্যান রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার সংস্কার করতে প্রস্তুত।’
ভলকার তুর্ক একপর্যায়ে বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। অতীতের খারাপ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারকে মানবাধিকার সংস্কারের দিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। সরকার যে সহযোগিতা প্রদান করেছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক এবং একটি সফল বাংলাদেশ গঠনের পথে এটি একটি সুযোগ হতে পারে।’
বিশেষভাবে, ভলকার তুর্ক মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান, ‘আমি হাসপাতালে গিয়ে জুলাই আন্দোলনের আহতদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের প্রকৃত অবস্থার কথা শুনেছি। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি।’
এইউ