পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে করা সব মামলা প্রত্যাহারসহ চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, গ্রাম ও শহরের বিদ্যুৎ বৈষম্য দূরীকরণে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিদ্যমান সংকট নিরসনে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দ্বৈতনীতি পরিহার করে দুটি সংস্থাকে একীভূত করতে হবে। পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক, অনিয়মিতদের চাকরি নিয়মিত করা এবং বিগত সময়ের পল্লী বিদ্যুতের দুর্নীতিবাজদের শাস্তির জন্য নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাবেক ওয়্যারিং ইন্সপেক্টর আব্দুস সালাম জাভেদ বলেন, দেশের ৮০ ভাগ অঞ্চলে প্রায় ১৪ কোটি মানুষের বিদ্যুৎ সেবায় নিয়োজিত ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। নিয়ন্ত্রক সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সীমাহীন দুর্নীতি, নিম্নমানের মালামাল ক্রয় ও নন-স্ট্যান্ডার্ড লাইন নির্মাণের কারণে সৃষ্ট গ্রাহক ভোগান্তি, মাঠ পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সকল ধরনের পলিসি প্রণয়নসহ আরইবি-পবিস দ্বৈত ব্যবস্থাপনা নিরসনে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস থেকে অভিন্ন চাকরি বিধি বাস্তবায়ন এবং জরুরি সেবায় নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের ২ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করা হয়। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে স্মারকলিপি প্রেরণ, বিভিন্ন দফায় গ্রাহক সেবা চালু রেখে কর্মবিরতি, লংমার্চ টু আরইবি, সারাদেশে একযোগে মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করা হয়। যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে সরকারের পক্ষ থেকে ২৪ সালের আগস্ট মাসে বিদ্যুৎ বিভাগ, আরইবি এবং পবিসের সমন্বয়ে ০৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে সহযোগিতা না করে বিদ্যমান কাঠামো বহাল রাখার বিষয়ে মতামত দেয় আরইবি। পরবর্তীতে উক্ত কমিটি বিলুপ্ত করে ২৩ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে সরকারের পক্ষ থেকে পুনরায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন মাস অতিবাহিত হলেও কমিটির প্রতিবেদন সম্পন্ন হয়নি।
সালাম জাভেদ বলেন, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে কোন ধরনের কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও আরইবি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে ভুল বার্তা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে গত বছরের ১৬ অক্টোবর আরইবি কর্তৃক পবিসের ১০ জন কর্মকর্তাকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত এবং একই তারিখ দিবাগত রাতে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয়।
উল্লেখ্য, একই ব্যক্তিদের বিগত সরকারের সময়েও ২০২৪ সালের মে মাসে সরকারের উন্নয়ন বিরোধী আখ্যা দিয়ে স্ট্যান্ডরিলিজ এবং ওএসডি করা হয়। পর দিন সকাল থেকে পবিসের কর্মকর্তাদের গ্রেফতার এবং আরও ১৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা এবং যৌথ বাহিনী দ্বারা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেধড়ক মারধর ও ধর পাকড় করা হয়। যার প্রেক্ষিতে পবিসের কর্মীরা আতঙ্কিত এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মতো ঘটনা ঘটে। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য যা ছিলো আরইবির পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। পরবর্তীতে উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত কমিটির ওপর আস্থা রেখে পবিসের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সকল ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
কর্মকর্তা কর্মচারীরা জানান, প্রায় তিন মাস কারাভোগের পর বর্তমানে আমরা জামিনে মুক্ত আছি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এতোবড় ট্রাজেডি ঘটানোর পরও আরইবি থেমে নেই। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্ত, স্ট্যান্ডরিলিজ, ওএসডি এবং নিজ জেলা থেকে গড়ে ৫০০-৬০০ কিলোমিটার দূরে হয়রানিমূলক বদলিসহ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চলমান রেখেছে। যা পরিস্থিতিকে আরও বিশৃঙ্খল করে তুলছে।
গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে এক মাসে প্রায় ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। এছাড়া চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের মধ্যে লাইনক্রু লেভেল-১ এবং বিলিং সহকারীদের চাকরি নিয়মিত করা হলেও মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার এবং লাইন শ্রমিকদের চাকরি নিয়মিত করা হয়নি। মিটার রিডার গণ যদি চুক্তি ভিত্তিতে ৩৬ বছর চাকরি করতে পারে তাহলে তাদের নিয়মিত না করা অযৌক্তিক। বেতন-ভাতা বৃদ্ধি না করেও বিদ্যমান কাঠামোতে তাদের চাকরি নিয়মিত করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া লাইন ম্যানের বিকল্প হিসেবে একই কাজ করা সত্ত্বেও লাইন শ্রমিকদের চাকরি নিয়মিত করা হয়নি। কিছু সংখ্যক নিয়মিত করায় বঞ্চিতদের মধ্যে চরম অসন্তুষ্টি বিরাজ করছে। সর্বশেষ গতকাল সোমবারও পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন বিলিংসহকারীকে ফেসবুক পোস্ট/লাইক/কমেন্টের কারণে বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একটা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কী পরিমাণ কর্মী নিপীড়ন হতে পারে তার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে যাচ্ছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড।
এ সময় সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি দেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেগুলো হলো-
১। মামলা প্রত্যাহারপূর্বক সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা।
২। দ্বৈতনীতি পরিহারপূর্বক আরইবি-পবিস একীভূতকরণ অথবা অন্যান্য বিতরণ সংস্থার ন্যায় পুনর্গঠন করা।
৩। অবশিষ্ট চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিতদের চাকরি নিয়মিতকরণ করা।
৪ আরইবি কর্তৃক পবিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দমন পীড়ন, হয়রানি ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা।
৫। বিগত সময়ে আরইবি'র দুর্নীতিবাজদের শাস্তির জন্য নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করা।
এমআর