ড. আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন জানুয়ারির মাঝামাঝিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রস্তাবনা জমা দেবে। সংবিধান বিষয়ে ৫৪ হাজার মতামত ও ১২০টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও সুপারিশ করতে যাচ্ছে কমিশন।
১৯৭২ সালের সংবিধানে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ১৭ বার পরিবর্তন করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কিংবা সামরিক শাসনকে বৈধতা দিতে ব্যবহার করা হয়েছে সংবিধানকে। এসব ঠেকাতে নানা প্রস্তাবনা দিতে যাচ্ছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।
বিজ্ঞাপন
যেসব সুপারিশ করা হবে সেগুলো হলো- রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, টানা দুইবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান এক ব্যক্তি হবেন না, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা, ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে নেওয়ার বিধান, স্পিকারের একক ক্ষমতা নয় ও ২১ বছরেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া উল্লেখযোগ্য।
এ বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘বিভিন্ন পক্ষের প্রস্তাবনা এবং ১২০টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করে প্রস্তুত করা হয়েছে সংস্কার প্রস্তাবনা। পুনর্লিখন না হলেও কার্যকর সংস্কারের মাধ্যমে জন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে অংশীজনদের একটা বড় অংশ কথা বলেছেন। তাদের আকাঙ্ক্ষা ও চিন্তাগুলোকে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি। সেই আলোকেই দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থার প্রবর্তন, দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়াসহ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাবনা আনা হচ্ছে।’
ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘অনেক ধরনের মতের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের একটা ভূমিকা থাকে। তাই এটাকে একটা ইতিবাচক বিষয় হিসেবে আমরা বিবেচনা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর জায়গায় একটা জবাবদিহিতা তৈরি করতে হবে।’
বিজ্ঞাপন
সংস্কার কমিশন প্রধান বলেন, ‘সংসদ সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান বয়স ২৫ আছে। সেটি কমিয়ে ২১ বিবেচনা করেছি। সংবিধান ১৯৭২ সাল থেকে যে ১৭ বার সংশোধন হয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় রেখেছি যে এগুলোর শেষ পর্যন্ত কী লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে।’
এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ আহসানুল করিম বলেন, ‘এসব সংস্কার প্রস্তাবনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও তা কার্যকর হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। এসব বাস্তবায়নে বড় ধরনের রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজন। দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে প্রতিটি দলকে এমনভাবে একমত হতে হবে, যাতে সংস্কারের বিষয়ে পরবর্তী বাংলাদেশে যে সরকারই থাকুক না কেন, তাদের যেন একটা দায়বদ্ধতা থাকে।’
/এফএ