রাজধানীর মৌচাক মার্কেটের দোকান থেকে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতারের পর ভয়াবহ তথ্য পেয়েছে সিআইডি। দোকানটিতে স্বর্ণ চুরির জন্যই গ্রেফতার হিমেল কর্মচারী হিসেবে কাজে যোগ দেন। পরে চুরির পরিকল্পনা করেন এবং এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে ৫৯ ভরি স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যান।
এ ঘটনায় দোকানটির কর্মচারী হিমেলসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি চুরি হওয়া স্বর্ণের মধ্যে ৫২ ভরি এবং পাঁচ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- হিমেল মিয়া (২০), ফারজানা আক্তার ইতি (২৭), ইতির বাবা আব্দুর জব্বার (৭০), ইতির স্বামী মাশফিক আলম (২৮)।
রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে সিআইডির সদর দফতরে মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের ডিআইজি এস.এন মো. নজরুল ইসলাম।
সিআইডি কর্মকর্তা জানান, মৌচাক মার্কেটের আসিফ জুয়েলার্সে গত চার বছর ধরে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন হিমেল মিয়া। তিনি প্রথমে দোকানে ক্লিনার হিসেবে কাজ করতেন। তিন বছর কাজের অভিজ্ঞতা ও বিশ্বস্ততার জন্য পরে তাকে সেই দোকানের সেলসম্যান হিসেবে নিযোগ দেওয়া হয়।
হিমেল দোকানের সেলসম্যান হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরই স্বর্ণ চুরির অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেন এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। বিষয়টি নিয়ে হিমেল তার বন্ধুদের সাথেও আলাপ করেন। কিন্তু তারা তাকে নিষেধ করেন।
যেভাবে চুরি করে স্বর্ণ বিক্রি
নজরুল ইসলাম বলেন, গত ৩০ অক্টোবর হিমেলকে স্বর্ণ নিয়ে আসার জন্য কারখানায় পাঠানো হয়। হিমেল কারখানা থেকে আনুমানিক ৫৯ ভরি স্বর্ণ নিয়ে দোকানে না এসে পূর্বপরিকল্পনা মতো পালিয়ে গিয়ে চক্রের অন্যতম সদস্য মাশফিকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে তার পরামর্শেই মাশফিকের বাসায় তার স্ত্রী ইতির কাছে যান এবং এরপর থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেন। অন্যদিকে
আসিফ জুয়েলার্সের মালিক ও ম্যনেজার হিমেলের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। পরে মালিক আলিমুদ্দিন বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি চুরির মামলা করেন। সেই মামলায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, চতুর হিমেল কৌশল অবলম্বন করে ৩৩ ভরি স্বর্ণ নিজের কাছে রেখে দিয়ে চক্রের অন্য সদস্যদের জানান, তিনি ২৫ ভরি স্বর্ণ চুরি করতে সক্ষম হয়েছেন। হিমেল স্বর্ণসহ ইতির বাসায় পৌঁছানোর পর ইতিকে ২৫ ভরি স্বর্ণের বারটি রাখার জন্য দেন। এরপর ইতি হিমেলকে সঙ্গে করে উত্তরায় গিয়ে ময়মনসিংহের উদ্দেশে বাসে উঠিয়ে দেন। বাবা আব্দুর জব্বারকে ফোন করে ইতি বলে দেন- হিমেলকে রিসিভ করে ময়মনসিংহ সদরে তাদের বাসায় রাখতে। ইতোমধ্যেই পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে মাশফিক তার স্ত্রী ইতির কাছে রাখা স্বর্ণের বার নিয়ে ময়মনসিংহ সদরে মাশফিকের শ্বশুর আব্দুর জব্বারের কাছে যান। যাতে তারা ধরা না পড়েন সে জন্য আব্দুল জব্বার, হিমেল ও মাশফিক স্বর্ণের বারটি টুকরো টুকরো করে বিক্রির পরিকল্পনা করেন এবং বারটিকে তিনটি টুকরা করেন। সেখান থেকে একটি টুকরা সাত ভরি নিয়ে মাশফিক ময়মনসিংহের স্থানীয় স্বর্ণের দোকানে বিক্রি করে আট লাখ ১০ হাজার টাকা পান।
ডিপ ফ্রিজ থেকে স্বর্ণ উদ্ধার!
সিআইডি জানায়, গ্রেফতার মাশফিকের দেওয়া তথ্যমতে, তার স্ত্রী ফারজানা আক্তার ইতিকে রামপুরা মৌলভীটেকের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকালে ইতির বাসার ডিপ ফ্রিজের ভেতর থেকে দুটি স্বর্ণের টুকরা (১৯ ভরি) এবং স্বর্ণ বিক্রির চার লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। ইতির দেওয়া তথ্য মতে, পরে ময়মনসিংহে অভিযান চালিয়ে ইতির বাবা আব্দুর জব্বারকে ময়মনসিংহ সদরের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুল জব্বার জানান, হিমেলকে তিনি তার ভাতিজার গৌরীপুরের বাসায় লুকিয়ে রেখেছেন। এরপর গৌরীপুর থেকে হিমেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে ৩৩ ভরির একটি স্বর্ণের বার এবং স্বর্ণ বিক্রির টাকায় কেনা একটি মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়।
এমআইকে/জেবি