শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

কারাগারে কেমন আছেন ভিআইপি বন্দীরা?

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৫ এএম

শেয়ার করুন:

কারাগারে কেমন আছেন ভিআইপি বন্দীরা?

# খাচ্ছেন কারাগারের খাবার
# কম্বল, থালাবাটি এখন তাদের সম্বল
# এখনো অনেকে ডিভিশন পাননি
# মোবাইলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন
# কয়েকটি ভাগে রাখা হয়েছে তাদের

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গণহত্যায় জড়িতসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪০ জনের বেশি ভিআইপি মর্যাদার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের সবাইকে রাখা হয়েছে ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে। এই তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, পুলিশের আইজি, সাবেক ডিএমপি কমিশনার, সম্প্রতি দায়িত্ব পালনকারী কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কারাগারে থাকা এই ব্যক্তিরা কেমন আছেন, কীভাবে কাটছে তাদের দিনকাল আর কী খাচ্ছেন তারা- এসব নিয়ে জনমনে রয়েছে নানা কৌতূহল। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ঢাকা মেইলের পক্ষ থেকে তাদের ব্যাপারে জানার চেষ্টা করা হয়েছে।             
             
কারাগারে যারা আছেন


বিজ্ঞাপন


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক-ই-এলাহী, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, ডিএমপির সদ্য সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিবির লালবাগ জোনের সাবেক ডিসি ডিআইজি মশিউর রহমান, সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন প্রমুখ। সব মিলিয়ে ৪০ জনের বেশি ভিআইপিকে এই কারাগারে রাখা হয়েছে।   

আরও পড়ুন

বিচারিক ক্ষমতা পেল নৌ ও বিমান বাহিনীও

ভাগে ভাগে রাখা হয়েছে ভিআইপি বন্দীদের

কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানিয়েছে, এই ভিআইপি বন্দীদের সাধারণ বন্দীদের সঙ্গে রাখা হয়নি। কারণ সম্প্রতি তাদের কারাগার থেকে আদালতে নেওয়ার সময় তারা জনরোষের শিকার হয়েছে। সেই বিষয়টি আমলে নিয়ে তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে কয়েকটি পৃথক কক্ষে ভাগ করে তাদের রাখা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


একজন কারা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছিলেন, তাদের তো অন্য সেল বা কক্ষে রাখলে কয়েদি ও হাজতিরা পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারে। তখন কিন্তু পুরো দায় আমাদের ওপর আসবে। ফলে এটা তো করতে দেওয়া হয় না। এসব কথা ভেবেই তাদের আলাদা আলাদা কক্ষে রাখা হয়েছে।

এই কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি কক্ষে তারা ১০-১৫ জন করে আছেন। এর বাইরে কেউ কেউ ডিভিশন পেয়েছেন। এখনো অনেকে ডিভিশন পাননি। তাদের বিষয়ে আদালতে সিদ্ধান্ত হবে।  

কী খাচ্ছেন তারা?

সূত্র আরও জানিয়েছে, এসব ভিআইপিরা কারাগারে বেশ বেকায়দায় আছেন। বাধ্য হয়ে তারা কারাগারের খাবার খাচ্ছেন। তাদের কাউকেই বাড়ি বা বাইরে থেকে আনা খাবার খেতে দেওয়া হচ্ছে না। ভিআইপি বন্দী হলেও তারা প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় থাকা খাবারই খাচ্ছেন।

আরও পড়ুন

বিলম্ব না করে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের

সূত্র জানিয়েছে, তাদের খাবারের তালিকায় রয়েছে-রুটি, পাউরুটি, চিনি, গুড়, ডাল, দুধ, জেলি, ডিম, ঘি, মাখন, কলা, চা, ভাত, মাছ বা মাংস, শাক-সবজি ও ডাল। অন্য বন্দীদের মতো সাধারণ খাবারই তারা খাচ্ছেন। এর বাইরে অনেকে কারা ক্যান্টিন থেকে নিজের টাকায় খাবার কিনেও খাচ্ছেন। তবে যাই দেওয়া হচ্ছে তা কয়েদি ও হাজতির খাবারের নিয়ম অনুযাযী তারা পাচ্ছেন। তবে যারা ডিভিশন পেয়েছেন তারা কারা বিধি অনুযায়ী যা যা পাওয়ার সবই পাচ্ছেন।

সম্প্রতি কারাগারে থাকা কয়েকজন হালকা অসুস্থবোধ করলে তাদের চিকিৎসা করানো হয়েছে। এর বাইরে বড় ধরনের কারও কোনো অসুস্থতার খবর পাওয়া যায়নি। 

যেভাবে সময় কাটছে তাদের

কারাগারের আরেক সূত্র জানায়, এই ভিআইপি বন্দীরা একসাথে থাকার কারণে গল্প-গুজব করেই সময় কাটাচ্ছেন। তাদের সেখানে সময় কাটাতে সেখানে দেওয়া হচ্ছে প্রতিদিনের পত্রিকা। তবে এর বাইরেও জেলের নিয়ম অনুযায়ী তারা পরিবারের সাথে মোবাইলে নির্দিষ্ট সময়ে কথা বলতে পারছেন।

তবে এর বাইরে তারা অনেক আবদার করেন বলে জানা গেছে। যদিও নিয়মের বাইরে কিছু তাদের দেওয়া হচ্ছে না। কেউ কেউ গরুর মাংস, ঠান্ডা জাতীয় খাবার ও বেশি তরকারি চান বলে সূত্র জানিয়েছে। কেউ কেউ তাদের বাড়ির খাবারও খেতে চেয়েছেন। কিন্তু নিয়ম না থাকায় তাদের সেই অনুমতি মেলেনি।  

আরও পড়ুন

সরকারের নির্দেশ মেনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে: ডিএমপি ডিবি প্রধান

গেল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এসব ব্যক্তি কারাগারে থাকলেও তাদের পরিবার-পরিজন বা ঘনিষ্ঠজনরা দেখা করতে আপাতত যাচ্ছেন না। কারণ, তাদের অনেকেই এখনো গা ঢাকা দিয়ে আছেন। তবে কারা বিধি অনুযায়ী মোবাইলে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। 

যা বললেন জেল সুপার

কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার ঢাকা মেইলকে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী যারা ডিভিশন পাওয়ার তারা পেয়েছেন। এর বাইরে কয়েকজন ডিভিশন পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। আদালত সিদ্ধান্ত দিলে তারা তা পাবেন।

এই কারা কর্মকর্তা বলেন, কারাগারের যে খাবার তাই খাচ্ছেন ভিআইপি বন্দীরা। এর বাইরে বাড়তি খাবার কেউ নিতে চাইলে তা নিতে পারেন। আর বাহির থেকে তাদের বাসার রান্না করা কোনো খাবার খেতে দেয়া হচ্ছে না।

সুরাইয়া আক্তার জানান, সম্প্রতি গ্রেফতার সবাইকে কয়েকটি ভাগে পৃথক কক্ষে রাখা হয়েছে। কারণ সাধারণ সেলগুলোতে অন্য বন্দীদের সঙ্গে রাখলে তাদের সমস্যা হতে পারে। এছাড়া নিরাপত্তার স্বার্থেও একই জায়গায় তাদের রাখা হয়নি। 

এমআইকে/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর