বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে সৌদি পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন প্রবাসী ৮ ব্যবসায়ী। আইন অমান্য করায় গত ১৬ আগস্ট থেকে তারা আটক হন। তখন থেকে কারাগারে আছেন তারা। তাদের মুক্তির জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলো।
আটক প্রবাসী বাংলাদেশিরা হচ্ছেন- চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, হাফেজ রহমতুল্লাহ, মো. খলিলুর রহমান, মোহাম্মদ ওমর ফারুক, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার সেলিম উল ইসলাম, মাওলানা ইউসুফ ও বান্দরবান থানার মো. আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলো সম্প্রতি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে। এখনো তাদের মুক্তি না মেলায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পরিবারগুলো।
তাদের পরিবার ও স্বজনরা মনে করছেন, বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টা ব্যতীত আটকদের মুক্তি সম্ভব নয়। তাই এই পরিবারগুলো অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছেন। তারা বিশ্বাস করেন, সবাই মিলে বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা উদ্যোগ নিলে এই বাংলাদেশিদের ফেরত আনা সম্ভব হবে।
জয়নাল আবেদীন গত ২২ বছর ধরে সৌদি আরবে সুনামের সাথে ব্যবসা করে আসছিলেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। গত ১৬ আগস্ট সৌদি আরব প্রবাসীদের নিয়ে তিনিসহ অন্যরা মিলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণে দোয়ার আয়োজন করেন। কিন্তু এই আয়োজন তাদের জীবনে এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই আয়োজন থেকে তাকেসহ সাত প্রবাসী ব্যবসায়ীকে আটক করে নিয়ে যায় সৌদি পুলিশ। সেদিন থেকে তারা এখনো কারাগারে আছেন। এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর। এমন খবর পেয়ে ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
কারাগারে আটক প্রবাসী ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনের ভাগিনা নুরুল কবির রোববার রাতে ঢাকা মেইলকে বলছিলেন, আমার মামা গত ২২ বছর ধরে সৌদি আরবে থাকেন। তার চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার সাথে আরও সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তারা সকলে স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ লোক কাজ করেন। কিন্তু আমরা জানতে পেরেছি তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এমনটি করা হলে দেশ রেমিটেন্স পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে পাশাপাশি তাদের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হলে সেখানে কর্মরত প্রায় হাজার খানেক প্রবাসী বেকার হয়ে যাবেন। এজন্য আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করব দ্রুত যেন বিষয়টি দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি তাদের অপরাধ ক্ষমা করে সেখানে থাকার ব্যবস্থা করে সৌদি সরকার।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, তার মামাসহ আরো সাতজনকে আটক করা হলেও সৌদির আদালতে কোনও সাজা হয়নি। কিন্তু তাদের কারাগারে আপাতত রাখা হয়েছে।
জয়নুল আবেদীনের মেয়ে মিফতাহুল জান্নাত জেসি বলেন, আমার বাবা ১৫ বছর ধরে সৌদি আরবে আছেন। তিনিই আমার পরিবারের একমাত্র উপর্জনাক্ষম ব্যক্তি। আজ অনেকদিন বাবার কোনো খবর পাচ্ছি না। আমাদের প্রতিটি মুহূর্তই কাটছে যন্ত্রণায়।
জয়নুল আবেদীনের স্ত্রী রুবি আক্তার ডেইজি বলেন, তিন মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে আমার এক একটা দিন কাটছে এক একটা বছরের মতো। আমার স্বামীসহ বাকীদের মুক্তির জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কারাগারে আটক থাকা ওমর ফারুকের ভাই রিফাত ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার ভাই সেখানে একটি মসজিদে চাকরি করেন। ঘটনার দিন তিনি শহীদদের স্মরণে একটা দোয়া মাহফিলে অংশ নেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। এরপর সেখান থেকে বাসায় আসে। কিন্তু বাসা থেকে পরে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়। তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে বলে জানি। তবে আমরা এখন পর্যন্ত তার সাথে কোনও যোগাযোগ করতে পারছি না। আমার ভাইসহ সকলের মুক্তির জন্য প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আটক সৌদি প্রবাসীদের স্বজনরা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সৌদি আরবের মাহাইল ও আবাহাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদদের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজক আট বাংলাদেশিকে আটক করে নিয়ে যায় মাহাইল থানার পুলিশ। গত ২৩ দিন ধরে তারা সৌদি আরবের কারাগারে আটক আছেন।
আটককৃত আট বাংলাদেশির মুক্তির জন্য সৌদি আরবের মাহাইল পুলিশ কর্তৃপক্ষের সাথে ভুক্তভোগীর পরিবার ও আত্মীয় স্বজনরা বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ করলেও কোনো সমাধান আসেনি বলে জানান তারা। ফলে এই প্রবাসী বাংলাদেশিদের মুক্তির ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ অনুরোধ করেছে পরিবারগুলো।
এমআইকে/এএস