গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। ১৭ জনকে নিয়ে যাত্রা করা এই সরকারের পরিধি নতুন করে বাড়ানো হয়েছে। নতুন যুক্ত হয়েছেন চারজন উপদেষ্টা। এতে প্রধান উপদেষ্টাসহ মোট উপদেষ্টার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১ জনে। নতুন করে যুক্ত হওয়া চারজনের মধ্যে দফতর বণ্টনের পাশাপাশি আগের উপদেষ্টাদের দফতর পুনর্বণ্টন করা হয়েছে। আনা হয়েছে বড় পরিবর্তন। এতে অন্তত সাতজন উপদেষ্টার দায়িত্ব আগের চেয়ে বেড়েছে।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপদেষ্টাদের দফতর বণ্টন ও পুনর্বণ্টন করেন। এর আগে তিনি উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠক করেন।
বিজ্ঞাপন
যাদের দায়িত্ব বেড়েছে
উপদেষ্টাদের মধ্যে সালেহ উদ্দিন আহমেদকে দেওয়া হয়েছিল অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। নতুন করে তাকে অর্থের পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছে। আর পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদকে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় তার হাত থেকে চলে গেলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর।
দায়িত্ব বেড়েছে আলোচিত উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের। আগে তার দায়িত্ব ছিল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এবার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও দুটি মন্ত্রণালয়। সেগুলো হলো প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞাপন
আদিলুর রহমান খানকে আগে দেওয়া হয়েছিল শিল্প মন্ত্রণালয়। এবার এর সঙ্গে যোগ হয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পেয়েছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন নতুন উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাংগীর আলম আলম।
ফারুকী আজমকে আগে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
দায়িত্ব বেড়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত হওয়া দুই উপদেষ্টার। এর মধ্যে নাহিদ ইসলাম আগে পেয়েছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এবার এর সঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও পেয়েছেন।
আর আসিফ মাহমুদ আগে পেয়েছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
আগে শপথ নেওয়া অন্যান্য উপদেষ্টাদের আগের পদ বহাল আছে বলে জানানো হয়েছে।
যে দফতর পেলেন নতুন চার উপদেষ্টা
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নতুন উপদেষ্টাদের মধ্যে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদকে পরিকল্পনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি মন্ত্রণালয়, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাখাওয়াত হোসেনকে সরিয়ে লে. জে. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর আলী ইমাম মজুমদারকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে বঙ্গভবনে নতুন চার উপদেষ্টাকে শপথ পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যান্য উপদেষ্টারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পদ বহাল আছে যাদের
উপদেষ্টাদের মধ্যে মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শারমীন এস মুরশিদ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নুরজাহান বেগম স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বিধান রঞ্জন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে বহাল আছেন।
সবার মধ্যে দফতর বণ্টনের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, খাদ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব রয়েছে।
গত ৮ আগস্ট রাতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় গঠিত হয় ১৭ সদস্যের দেশের বহুল আলোচিত অন্তর্বর্তী সরকার। বঙ্গভবনের দরবার হলে তাদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। নতুন চারজন উপদেষ্টা শপথ নেওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ালো ২১ জনে।
জেবি