শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ঢাকা

এমপি আনার হত্যা: আওয়ামী লীগের আরও এক নেতা আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২৪, ০৬:৫০ পিএম

শেয়ার করুন:

এমপি আনার হত্যা: আওয়ামী লীগের আরও এক নেতা আটক
সাইদুল করিম মিন্টু| ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের আরও এক নেতাকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তিনি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১১ জুন) বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে তাকে আটক করা হয়।  ডিবি পুলিশের একাধিক সূত্র আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানাতে চাইছেন না কেউ। 


বিজ্ঞাপন


এদিকে বিদেশের মাটিতে এমপি হত্যার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে এখনও পাদপ্রদীপের আলোয় আছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহিন। তবে শুধু শাহিন নন, আড়ালে থেকে হত্যাকাণ্ডে গুটি চালতে পারেন— এমন সন্দেহ থেকে সরছে না তদন্তকারী সংস্থাগুলো। চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে, এমপি আনার হত্যায় রাজনৈতিক যোগসূত্র নিয়ে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে ঝিনাইদহের রাজনৈতিক নেতাদের ওপর। দেখা হচ্ছে— এমপি আনার না থাকায় লাভবান হচ্ছেন কারা। 

এমন পটভূমিতে ঝিনাইদহের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে চোখে চোখে রেখেছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। যাদের সঙ্গে সখ্যতা ছিল যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শাহিনের। তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের নজরদারি থেকে বাদ যাচ্ছেন না; এমপি আনারের সঙ্গে বিরোধ আছে— এমন নেতারাও। যদিও চোরাকারবার কেন্দ্রিক দ্বন্দ্বসহ বেশ কয়েকটি ক্লু সামনে রেখে রহস্য ভেদের চেষ্টা চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। 

অপর দিকে মঙ্গলবার (১১ জুন) বিকেলে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, আনার হত্যাকাণ্ডের পর আসামিরা কার কার কাছে শেয়ার করেছে, তা তদন্ত চলছে। ছবি দিয়ে কেউ আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে কি না, কাদের মাধ্যমে আর্থিক লাভবান হয়েছে— সব বিষয় তদন্ত করে বের করা হচ্ছে। এছাড়া ঝিনাইদহের আরও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

হারুন অর রশীদ বলেন, কিলিং মিশনে যারা অংশ নিয়েছিল কলকাতা থেকে এমপি আনারের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে কার সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে এবং এতে কোনো আর্থিক সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না—সবকিছু তদন্ত চলছে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন
এমপি আনার হত্যায় নতুন মোড়

হারুন বলেন, ‘সব তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে মনে করেছি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন—এ জন্য তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনেছি। তার রিমান্ড চলছে, তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ঘটনা ডিবি ওয়ারী বিভাগ তদন্ত করছে। বাংলাদেশে অপহরণ মামলা হয়েছে; অন্যদিকে ভারতে হত্যা মামলা হয়েছে। দুই দেশের উদ্দেশ্য অভিন্ন।’

ডিবিপ্রধান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে গ্রেফতার আসামি ও ভারতে গ্রেফতার আসামিদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল ঘাতক আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়াসহ অন্যরাও আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডটি ভারতে সংঘটিত হয়েছে এবং সব আসামি বাংলাদেশি। হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় সব আসামি বাংলাদেশে চলে আসে।’

হত্যাকাণ্ডের পর ২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে কি না— এমন প্রশ্নে হারুন বলেন, ‘এগুলো আমরাও শুনেছি, সবকিছু তদন্ত করছি। হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহিন বাংলাদেশ থেকে দিল্লির পর কাঠমান্ডু; এরপর দুবাই থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। তাকে আমরা ধরতে না পারলেও মোটামুটি বাকি সব আসামির বিষয়ে জানতে পেরেছি। আসামিদের অনেককেই গ্রেফতার করেছি, ভারতে জিহাদ গ্রেফতার হয়েছে। এছাড়া কাঠমান্ডু থেকে গ্রেফতার সিয়ামকে ভারতে হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রয়োজন মনে করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যাব।’

হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড আখতারুজ্জামান শাহিনের ব্যবহৃত দুটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

অপর দিকে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে— হত্যার পরপরই ঝিনাইদহের কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার মোবাইলে খুনিরা খুদে বার্তা পাঠায়। ‘মিশন সফল’ এটা তাদের বলা হয়। বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখা হয়েছে। 

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, এমপি আনারকে হত্যার পর ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল গিয়াস আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবুর মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠানো হয়। আসামিরা তার ফোনে আনারের মরদেহের ছবি পাঠায়। একই ধরনের খুদে বার্তা পাঠানো হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর ফোনেও। 

গোয়েন্দা সূত্র বলছে— জেলার সাবেক এক সংসদ সদস্যকে প্রায় একই ধরনের খুদে বার্তা দেওয়া হয়। কেন খুনিরা গিয়াস, মিন্টুসহ অন্যদের এ ধরনের বার্তা পাঠাল; সে বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। হত্যা মিশনে তারা জড়িত ছিল, নাকি ফাঁসানোর জন্য অভিনব কৌশল হিসেবে তাদের খুদে বার্তা দেওয়া হয়; নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। এছাড়া স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে বিরোধের জেরে আজিমকে হত্যা করে ‘এক ঢিলে দুই পাখি মারা’ হলো কি না— নিশ্চিত হতে নজর গোয়েন্দাদের।  

এমআইকে/এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর