শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

৫ টাকার পরোটা এখন ১০

আসাদুজ্জামান লিমন
প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২২, ০৯:৩৬ এএম

শেয়ার করুন:

৫ টাকার পরোটা এখন ১০

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অমর একুশে হলের শিক্ষার্থী রাকিব প্রতিদিন সকালে হোটেলে নাশতা করেন। হল সংলগ্ন আনন্দবাজারের নূরুল ইসলাম হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ তার ভরসা। সকালের নাশতায় তার পছন্দ পরোটা সঙ্গে ডালভাজি। রোজকার রুটিন অনুযায়ী বুধবার হোটেলে নাশতা সেরে বিল দিতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। সবসময় ডালভাজি দিয়ে দুটি পরোটা খেয়ে বিল দেন ২০ টাকা। কিন্তু দোকানি বিল হেঁকে বসেন ৪০ টাকা। ৫ টাকার পরোটা হঠাৎ ১০ টাকা হওয়ার কারণ জানতে চান। 

বিরসবদনে হোটেল ম্যানেজার বলেন, ‘ত্যালের দাম বাড়ছে। আটা-ময়দার দাম তো আগে থেকেই বাড়তি। পরোটা বেচে পোষায় না।’ তাই ঈদের পর থেকে ৫ টাকার পরোটা ১০ টাকা করা হয়েছে। অগত্যা বিল পরিশোধ করে নাখোশ চিত্তে হলের দিকে হাঁটা দেন রাকিব।   

রাকিবের মতো ঢাকা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, কর্মজীবী ও শ্রমজীবীরা পড়েছেন বিপাকে। কেননা, তেল ও আটা-ময়দার দাম বাড়ার কারণে ঈদের পর থেকেই দাম বেড়েছে পরোটার। নাস্তায় উপাদেয় খাবার ডালভাজির দামও বাড়ন্ত। আগে যেখানে এক বাটি ডাল কিংবা ভাজি বিক্রি হতো ১০ টাকায়, সেটা এখন ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

নূরুল ইসলাম হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁর কর্মী সবুজ জানান, বাজারে সব কিছুর দামই বাড়তি। নাস্তার মূল উপকরণ আটা-ময়দার দাম আগে থেকেই বেড়েছিল। ঈদের পর বেড়েছে তেলের দাম। তাই মালিকপক্ষ ৫ টাকার পরোটার দাম ১০ টাকা নির্ধারণ করেছে। 

পরোটার দাম বাড়ার কারণে হোটেলটিতে খেতে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে রোজ বচসা হচ্ছে ম্যানেজারের। তারা পরোটার বাড়তি দাম দিতে নারাজ। কিন্তু হোটেল মালিকপক্ষের সাফ জবাব, তাদের পোষায় না। খেলে খান, না খেলে অন্যত্র যান। 

অমর একুশে হল সংলগ্ন যে কয়টি হোটেল আছে তার সবগুলোতেই পরোটার বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। ডাল ভাজির দামও বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 


বিজ্ঞাপন


ওই হলের শিক্ষার্থী ইকরামুল বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলাম। ঢাকায় ফিরে দেখি পরোটার দাম এক লাফে বেড়েছে দ্বিগুণ। 

ইকরামুল জানান, হলে সকালের নাস্তা হয় না তাই শিক্ষার্থীদের বাইরে নাস্তা সারতে হয়। হঠাৎ করে পরোটা ও ভাজির দাম বাড়ার কারণে তাদের জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে।  

আনন্দবাজারে যে কয়টি হোটেল ও রেস্তোরাঁ আছে তার সবগুলোতেই একই অবস্থা। হোটেল আল মাসুদ নামের আরেকটি হোটেলে ঢুঁ মারলে ম্যানেজার জানান, আগে তারা ৫ টাকায় পরোটা বিক্রি করতেন। রোজার আগে দাম বাড়িয়ে ৬ টাকা করা হয়েছিল। তেলের দাম বাড়ায় এখন সেই একই পরোটা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। যদিও হোটেল মালিকদের দাবি পরোটার আকার বড় করা হয়েছে। 

পুরান ঢাকার রিকশাচালক নিয়ামত উল্লাত আক্ষেপের সুরে বলেন, পুরান ঢাকার প্রায় সব হোটেলে নাশতার খরচ বেড়েছে। পরোটার পাশাপাশি, ডাল, সবজি এবং অন্যান্য তরকারির দাম বেড়েছে। ফলে আগে যেখানে নিয়ামত দুটি পরোটা দিয়ে সকালের নাশতার সারতেন, দাম বাড়ার কারণে এখন একটি পরোটা খেয়েই থাকতে হয়। 

ruti

পরোটার দাম বাড়ানো হয়েছে পুরো ঢাকা শহরেই। মালিবাগ, মৌচাক, মহাখালী, গুলশান, বাড্ডার বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। গুলশানের গুদারাঘাটের বিসমিল্লাহ হোটেলে আগে ৫ টাকায় পরোটা পাওয়া যেতো। রমজানের আগে পরোটার দাম বাড়িয়ে ৮ করা করা হয়েছিল। এখন সেই একই পরোটা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। এই হোটেলে আগে ১০ টাকায় এক বাটি ডাল কিংবা ভাজি ক্রেতাদের পরিবেশন করা হতো। এখন ২০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। 

রাজধানীর পাড়া-মহল্লায়ও একই চিত্র। সবখানে দাম বেড়েছে পরোটার। কদমতলী, শ্যামপুর থানার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বাড়তি দামে পরোটা বিক্রি করতে দেখা গেছে। শ্যামপুর বাজারের তিনটি হোটেলে আগে ৫টাকায় পরোটা বিক্রি হতো। এখন সেখানে পরোটার দাম ১০ টাকা। 

ক্রেতাদের অভিযোগ, আটা-ময়দা কিংবা তেলের দাম বাড়ানোর অজুহাতে অন্যায্যভাবে পরোটার দাম বাড়ানো হয়েছে। এই দেশে একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে আর কমে না। 

কদমতলী থানার আলী বহরের স্থানীয় বাসিন্দা মনির বলেন, আমারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মজীবী। সকালে দ্রুত অফিসে যাওয়ার ব্যস্ততা থাকে। তাই বাসায় নাশতা বানানো হয় না। হোটেল থেকেই নাশতা এনে খেতে হয়। পরোটাও সবজির দাম বাড়ানোয় খরচ বাড়ল। 

এজেড/ একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর