মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ঈদের ফিরতি যাত্রায় বাড়তি ভাড়ার চাপ, ‘পকেট ফাঁকা’ যাত্রীদের

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ঈদের ফিরতি যাত্রায় বাড়তি ভাড়ার চাপ, ‘পকেট ফাঁকা’ যাত্রীদের

★ একদিকে হাহাকার, অন্যদিকে বাড়তি টাকায় মিলছে টিকিট

★ কোথাও নেওয়া হচ্ছে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া


বিজ্ঞাপন


★ ঢাকায় ঢুকলে পকেট কাটছে সিএনজি চালকরা

★ প্রকাশ্য সব হলেও দেখার কেউ নেই

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি শেষে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ফিরছেন কর্মজীবীরা। কিন্তু বাড়ি যাওয়ার মতো ফেরার সময়েও দুশ্চিন্তার নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে টিকিট। কর্মস্থলে ফেরার জন্য মানুষকে পড়তে হয়েছে টিকিট বিড়ম্বনায়। এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ঘুরেও মিলছে না ‘সোনার হরিণ’ টিকিট। অনলাইনেও সব টিকিট বুকিং দেখাচ্ছে। টিকিটের জন্য এমন হাহাকার অবস্থা দেখা গেলেও অতিরিক্ত টাকায় ঠিকই মিলছে টিকিট। উত্তরের জেলা রংপুরের বাস কাউন্টারে এমন চিত্র দেখা গেছে।

শুধু রংপুর নয়, সারাদেশের চিত্রই এমন। ফলে নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়া মানুষদের পেটের টানে ঢাকায় ফিরতে পড়তে হচ্ছে বাড়তি ভাড়ার চাপে। ঈদের বাড়তি খরচের পর ভাড়া দিতে গিয়ে পকেট ফাঁকা হচ্ছে তাদের। 


বিজ্ঞাপন


এখানেই শেষ নয়! বেশি টাকায় টিকিট কেটে ঢাকায় নামার পর গন্তব্যে পৌঁছাতে যাত্রীদের পকেট কাটছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা। বিশেষ করে রাতে কিংবা খুব সকালে কেউ ঢাকায় নামলে তাকে বাসায় যেতে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ ভাড়া। 

শওকত হায়দার জিকু নামে একজন যাত্রী বরিশাল থেকে লঞ্চে সোমবার সকালে ঢাকায় নেমে সিএনজি অটোরিকশার গলাকাটা দাম নিয়ে ক্ষোভের কথা জানান।

ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় যারা সিএনজি চালায় তাদের অধিকাংশ মুরব্বি টাইপের। কিন্তু এরা টাউট। সুযোগ পেলে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া চাইবে। সদরঘাট থেকে উত্তরা ১২নম্বর ১২শ থেকে ১৩শ টাকা পর্যন্ত ভাড়া চেয়েছে। অথচ সবসময় ৫শ টাকা সর্বোচ্চ ভাড়া। কেউ যেন তাদের থামাবার নেই। বাধ্য হয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে বাসায় যেতে হয়েছে।’

DHAKA-4প্রকাশ্য দিবালোকে ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার বেলায় দেশজুড়ে এমন অনিয়ম চললেও এসব যেন দেখার কেউ নেই। কোথাও স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আনা হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস মিললেও বাস্তবতা ভিন্ন। অনিয়ম করা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বড় কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নজির তেমন চোখে পড়েনি। ফলে ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরা মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, কালোবাজারিদের হাতে টিকিট চলে যাওয়ায় কাঙিক্ষত টিকিট পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। যদিও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে টানা এক সপ্তাহের টিকিট আগাম বিক্রি হওয়ায় এমন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) রংপুরের কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, টিকিটের জন্য মানুষের এক কাউন্টার থেকে অন্য স্থানে ছুটছেন। কিন্তু সব কাউন্টার থেকেই উত্তর আসছে টিকিট নেই। 

জালাল নামে একজন ঢাকায় যাওয়ার জন্য টিকিট খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে টিকিটের খোঁজ করছি। কিন্তু সব কাউন্টারেই বলা হচ্ছে টিকিট নেই। একজন ইঞ্জিন কাভারের সিট দিতে চাইলেও ১২০০ টাকা চাচ্ছে। আরও কম দামে যাওয়া যায় কি না সেজন্য চেষ্টা করছি।’

rangpur-4বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটি চায়ের দোকানে চা পান করার সময় শামছুল নামে একজন বলেন, ‘আজ টিকিট পেতে কষ্ট হবে জানি। কিন্তু বাড়তি টাকা টিকিট মিলবে সেই আশায় এসে অনেক দর কষাকষির পর ১১০০ টাকায় একটি টিকিট কিনেছি।’

যাত্রীরা বলছেন, কাউন্টারগুলোতে টিকিট না পাওয়া গেলেও এর ঠিক বাইরেই বেশি দামে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় একটি কালোবাজারি চক্রসহ বাস মালিক ও শ্রমিকরা।

দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ থেকে মঙ্গলবার ঢাকায় ফেরার জন্য বরগুনা-ঢাকা রুটের ইমরান ট্রাভেলসের টিকিট কাটেন নিজাম উদ্দিন। স্বাভাবিক সময়ে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা নেওয়া হলেও সোমবার তার কাছ থেকে টিকিটের জন্য ১১শ টাকা নেওয়া হয়েছে। এই রুটের কোনো কোনো গাড়িতে ১২শ টাকা পর্যন্তও ভাড়া নেওয়া হয়েছে বলে জানান এই যাত্রী।

আরও পড়ুন

চেনারূপে ফেরেনি ঢাকা, ফাঁকা সড়কে সাঁই সাঁই ছুটছে গাড়ি

ঢাকা মেইলকে নিজাম উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'এটা কোনো সিস্টেম হলো। সাতশ টাকার ভাড়া সর্বোচ্চ একশ টাকা বেশি নিলেও ঈদের সময় মানা যায়। কিন্তু তাই বলে ৪শ টাকা বেশি?' 

বাড়তি ভাড়ার বিষয় নিয়ে মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম টেলিফোনে ঢাকা মেইলকে বলেন, বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাইনি। এটা অবশ্যই অন্যায়। অভিযোগ পেলাম। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হবে। 

এছাড়াও বাড়তি ভাড়া দিয়ে ঢাকায় আসার কথা জানিয়েছেন একাধিক রুটের যাত্রীরা।

DHAKA-1রাজশাহীর ন্যাশনাল পরিবহনে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসা রফিকুল ইসলাম রনি ঢাকা মেইলকে বলেন, স্বাভাবিক ভাড়া ৬০০ টাকা। কিন্তু ঢাকায় আসতে হলো ৯০০ টাকা দিয়ে।

বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, সড়ক পরিবহন যে আইন সংশোধন করা হচ্ছে সেখানে বাড়তি ভাড়া আদায়ের জন্য জরিমানার টাকা অর্ধেক করা হচ্ছে। অর্থাৎ ২০ হাজার টাকার জায়গায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। দ্বিতীয়ত বাড়তি ভাড়া আদায় হচ্ছে কি না সেগুলো দেখার জন্য বিআরটিএ এবং স্থানীয় প্রশাসন খুব বেশি সক্রিয় তেমনটাও দেখা যাচ্ছে না। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে পরিবহন সংশ্লিষ্ট অসাধু লোকজন। কিন্তু যাত্রীরা নিরুপায় হয়ে বাড়তি টাকা দিয়ে গন্তব্যে আসছেন। কোথাও কোথাও তিনগুণ পর্যন্ত বেশি ভাড়া নিচ্ছে। আমাদের কাছে নিয়মিত অভিযোগ আসছে। আমরা শিগগিরই ঈদে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলব।

বিইউ/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর