দেশের অন্যতম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম গ্রুপের জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্ত হওয়ায় স্বস্তি মিলেছে। বিশেষ করে জাহাজে থাকা ২৩ নাবিক সুস্থভাবে উদ্ধার হওয়ায় দুশ্চিন্তা কেটেছে। তবে জলদস্যুদের কবল থেকে মাত্র ৩২ দিনে জাহাজটি কীভাবে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তা নিয়ে নানা কৌতূহল দেখা দিয়েছে। কারণ ২০১০ সালে কেএসআরএম গ্রুপের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মণি ছিনতাই করেছিল সোমালিয়ার দস্যুরাই। ওই জাহাজ উদ্ধার করতে ৯৯ দিন সময় লেগেছিল।
অবশ্য কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ বলছে, এমভি জাহাজ মণি উদ্ধারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পাশাপাশি সরকারের সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর তৎপরতা বাড়ায় চাপে পড়ায় দস্যুরাও দ্রুত জাহাজটি ছেড়ে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
যদিও মুক্তিপণের বিনিময়ে জলদস্যুরা জাহাজটি ছেড়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের এমন খবর সরকারের পক্ষ থেকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর দাবি, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে জলদস্যুদের হাত থেকে জাহাজটি মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
অন্যদিকে কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ মুক্তিপণের বিষয়টি নিয়ে লুকোচুরি করছে। তবে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া নাবিকদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে খবর এসেছে পাঁচ বিলিয়ন ডলার (৫০ লাখ) মুক্তিপণ পরিশোধের বিনিময়ে তারা মুক্ত হয়েছেন।
এত দ্রুত সময়ে জাহাজাটি মুক্ত করার বিষয়ে কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত গণমাধ্যমকে বলেন, এমভি আবদুল্লাহ ছিনতাইয়ের পর প্রথম দিন থেকেই আমরা কাজ শুরু করি। নাবিকদের দ্রুত নিরাপদে ফেরানোই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। আগের অভিজ্ঞতা থাকায় দস্যুদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি সমঝোতার প্রক্রিয়াগুলোও আমরা গুছিয়ে এনেছিলাম।
এই কর্মকর্তা বলেন, সোমালিয়ার উপকূলে দস্যুতার প্রবণতা বাড়ার পর আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর তৎপরতা বাড়ায় দস্যুরাও চাপে ছিল। সরকারও নাবিকদের উদ্ধারে আমাদের সব রকমের সহযোগিতা করেছে। এতে খুব দ্রুত উদ্ধার সম্ভব হয়েছে।
গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার দস্যুরা ভারত মহাসাগর থেকে এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করে। মুক্তিপণ দিয়ে জাহাজটি ছাড়া পায় শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৮ মিনিটে। ১৪ এপ্রিল প্রথম প্রহর হিসেবে ৩২ দিন পর জিম্মিদশা থেকে জাহাজটি মুক্তি পায়।
তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের এমভি আবদুল্লাহর আগে সর্বশেষ মুক্তিপণ ছাড়াই বুলগেরিয়ার জাহাজ এমভি রুয়েনকে উদ্ধার করা হয়। এমভি রুয়েন কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ভারতীয় নৌবাহিনী উদ্ধার করে গত ১৬ মার্চ। তিন মাস জিম্মিদশায় ছিল জাহাজটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১০ সালে এমভি জাহান মণির জিম্মির ঘটনার সময় দস্যুদের হাতে অনেকগুলো জাহাজ ছিল। তখন মুক্তিপণ নিয়ে জাহাজ ছাড়ত জলদস্যুরা। জলদস্যুদের কাছে টাকার প্রবাহ থাকায় সমঝোতায় সময় নিত। কিন্তু পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর তৎপরতা বেড়েছে। দস্যুরা দ্রুত নগদ টাকা পাওয়ার চেষ্টায় থাকায় দ্রুত বোঝাপড়া হওয়ায় জাহাজটি দ্রুত ছাড়া পেয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী বলেন, এক দশক আগের চেয়ে এখনকার সোমালিয়ার উপকূলের পরিস্থিতি ভিন্ন। জলদস্যুদের হাতে ছিনতাই হওয়া জাহাজের সংখ্যা ছিল কম। দস্যুদের অর্থের প্রয়োজন ছিল বেশি। আবার জাহাজটির মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপও দ্রুত সমঝোতা করতে চেয়েছিল। ফলে আগের ঘটনাগুলোর চেয়ে কম সময়ে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের নাবিকদের মুক্ত করে আনা সম্ভব হয়।
বিইউ/জেবি