রোববার, ১৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

‘ঈদে গ্রামে যেতে না পারলেও শৈশবের স্মৃতিগুলো মনে ভাসে’

মোস্তফা ইমরুল কায়েস
প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

‘ঈদে গ্রামে যেতে না পারলেও শৈশবের স্মৃতিগুলো মনে ভাসে’
পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ পুলিশের আলোচিত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। নানা কারণে বিভিন্ন সময় তিনি ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন। কখনো কখনো কারও কারও কাছে সমালোচিতও হয়েছেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপির) গোয়েন্দা প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। চৌকস এই পুলিশ কর্মকর্তার শৈশব কেটেছে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম হোসেনপুরে। অথৈ হাওরে সংগ্রাম করে বেড়ে ওঠা হারুন অর রশীদ ঢাকা মেইলের সঙ্গে স্মৃতিচারণ করেছেন ঈদ নিয়ে। সেখানে উঠে এসেছে শৈশব-কৈশোরের ঈদের মজার স্মৃতি। বড় হওয়ার পর ঈদ কেমন কাটে এবং পুলিশের ঈদ উদযাপনের নানা প্রসঙ্গও আলোচিত হয়েছে।

হারুন অর রশীদ কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবদুল হাসেম ও মা জহুরা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স ও এমএসএস করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করেন এলএলবি। বিসিএস দিয়ে তিনি পুলিশে কর্মজীবন শুরু করেন। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের এসপি ছাড়াও বিভিন্ন পদে চাকরি করার পর এখন তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিআইজি) ও ডিবির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।


বিজ্ঞাপন


‘কবে ঈদ আসবে মুখিয়ে থাকতাম’

শৈশবে কীভাবে ঈদ উদযাপন করতেন- প্রশ্ন করতেই হেসে দিলেন ডিবিপ্রধান হারুন। এরপর বলতে লাগলেন- আমি কী এমন হলাম যে, আমার ঈদ স্মৃতি মানুষ জানতে চায়! এরপর বিরতি দিয়ে বললেন, আমার মতে দুই ঈদ ভিন্ন ভিন্নভাবে কাটত।

ঈদ কখন আসবে তার প্রতীক্ষায় থাকতেন জানিয়ে ঈদুল ফিতর সম্পর্কে বলেন, ‘২৯ বা ৩০ দিন রোজা রেখে ঈদ করা তো আনন্দের বিষয়। এর জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষায় থাকতাম। রোজা কবে শেষ হবে। ছোটবেলায় রোজা থাকতাম আবার থাকতামও না। কিন্তু ঈদ আসবে কখন মুখিয়ে থাকতাম। কারণ ঈদ এলে তো একটা নতুন জামা পরা যাবে, সকালে মিষ্টি সেমাই খাওয়া যাবে।’

আরও পড়ুন

‘ছোটবেলার সেই ঈদগুলো খুব মিস করি’

‘এছাড়াও আরেকটা খুশি মনে মনে কাজ করত। আর তা হলো, আমাদের গোষ্ঠীর সবাইকে (ছোট হিসেবে) আমার সালাম করতে হইতো। আমার আব্বা আম্মা শুধু নয়, যদি মুরব্বি একশজন থাকতো তাদেরও সালাম করতে হইতো।’

নৌকায় না চড়লে ঈদের নামাজ হতো না!

দেশের আর দশটা অঞ্চলের মতো ঈদের নামাজ আদায় সেই সময় সহজ ছিল না মিঠামইন উপজেলার গ্রামগুলোতে। তাই যাতায়াতের মাধ্যম নৌকাই ছিল শেষ ভরসা। নৌকায় না চড়লে নামাজ পড়া অসম্ভব ছিল। সেই কষ্টের স্মৃতি বলছিলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

Harun2

হারুন বলেন, ‘আমাদের ওখানে বর্ষাকালে মসজিদে ঈদ করতে হতো। এজন্য হাওরের মাঝে থাকা মসজিদে নামাজ পড়তে নৌকায় করে যেতে হতো। চতুর্দিকে পানি আর পানি। যদি আবার বৃষ্টি হতো তখন কিন্তু আর ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়া হতো না। এছাড়া বন্যার সময় এবং হাওরে পানি বেশি হলে তখনও কিন্তু আমরা ছোটরা ঈদের নামাজ পড়তে পারতাম না। আসলে ঝড়, তুফান, বৃষ্টি, বন্যার মধ্য দিয়ে আমাদের ঈদ করতে হতো। আবার শুকনো মৌসুমে মাঠে নামাজ আদায় করলেও কিন্তু বৃষ্টি শুরু হলে যে যার মতো দৌড়ে বাড়িতে চলে যেতো।’

গ্রামের ঈদ মানেই সেরা ঈদ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘গ্রামের ঈদের একটা আনন্দ হচ্ছে গ্রামের সকল মানুষ একটা ঈদগাহে গিয়ে নামাজ আদায় করে। কিন্তু অনেক সময় বৃষ্টি বাদলের কারণে বন্যা আসে। তখন দেখা যায় মসজিদে যেতে হয়। তখন কিন্তু নৌকা লাগে।’

এখনকার ঈদ তার যেমন কাটে

ডিবিপ্রধান হারুন ছাত্রজীবনে বেশিরভাগ ঈদ গ্রামে করেছেন। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের পর তার গ্রামে ঈদ করতে যাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে। কারণ তিনি চাইলেও ছুটি পান না। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ছুটি হয়।

তিনি বলছিলেন, ‘এখন চাকরি করি। ছুটি চাই কী করে! চাইতেও পারি না। অনেক সময় ঢাকাতেই ঈদ করি। আবার যেহেতু আমার আম্মা গ্রামে থাকে তাই ঈদের দিনই গ্রামে চলে যাই। আসলে চাকরিতে ঢোকার পর গ্রামে ঈদ কমই হয়েছে। গ্রামে কম ঈদ হলেও কিন্তু শৈশবের স্মৃতিগুলো এখনো মনে ভাসে।’

আরও পড়ুন

সেবাতেই যাদের ‘ঈদ আনন্দ’

তার মতে, শহুরে ঈদ মানেই নামাজ পড়ে এসে বাসায় একা একা সময় কাটানো। কিন্তু গ্রামে ঈদের মজাই আলাদা। গ্রামে মাঠে হাজার হাজার মানুষ এক সাথে নামাজ পড়া আবার বাড়িতে এসে দূরদুরান্ত থেকে আসা মানুষের সাথে দেখা করা, মুরব্বিদের সালাম করা এই সুযোগটা কিন্তু শুধু গ্রামে জোটে। সেই সাথে বাড়ির পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আত্মীয়-স্বজনের কবর জেয়ারত করারও একটা সুযোগ তৈরি হয়।’

তিনি বলছিলেন, ‘সব মিলে গ্রামের ঈদটা আসলে আনন্দের। কারণ সেখানে সকল আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা হয়, পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে দেখা হয় এবং কবর জেয়ারত করা হয়।’

Harun3

শৈশবের ঈদের সাথে এখনকার ঈদ মেলে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবার তো ইচ্ছে করে বাবা-মায়ের সাথে ঈদ করতে। কিন্তু সেটাতো চাকরির নিয়মের কারণে পারি না।’ 

‘মানুষকে নিরাপদে রাখাই পুলিশের ঈদ আনন্দ’

প্রতি ঈদে সবাই গ্রামে ছুটলেও পুলিশ সদস্যরা চাইলেও যেতে পারেন না। তারা মানুষের নিরাপত্তা ও গ্রামে যাওয়া নিশ্চিত করতে অক্লান্তভাবে কাজ করেন। তিনি যখন গাজীপুরের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেছেন তখন তিন থেকে চার দিন সড়কেই রাত-দিন কাটত তার। ঈদ কোন দিক দিয়ে চলে আসতো বুঝতেই পারতেন না। উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের মানুষদের বাড়িতে যাওয়া স্বস্তিদায়ক করতে রাত-দিন সমানতালে কাজ করতেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন

পুলিশ সদস্যের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় আইজিপির

পুলিশের ঈদ কেমন কাটে তা তুলে ধরে হারুন বলেন, ‘ঈদের দিন অনেকেই মাঠে নামাজ পড়ে। কিন্তু আমাদের পুলিশ সদস্যরা চাইলেও ঈদের নামাজ পড়তে পারেন না। কারণ তারা তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন। সবাই যখন আনন্দের মধ্য দিয়ে গ্রামে যায় আর আমরা তখন প্রতিটি মানুষকে কীভাবে নিরাপদে যানজট ছাড়া রাস্তা পার করে দিতে পারি এটাই আমাদের কাছে আনন্দের। ঈদের সময় প্রতিটি পুলিশের কাছে এই আনন্দটাই তখন মুখ্য হয়ে যায়।’

এমআইকে/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর