মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ঢাকা

‘পাশ ফিরলেই দেখি বড় বড় মেশিনগান তাক করে রেখেছে’

ঢাকা মেইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৯:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

‘পাশ ফিরলেই দেখি বড় বড় মেশিনগান তাক করে রেখেছে’

ভারত মহাসাগরে জিম্মিকৃত এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি এখন সোমালিয়ার উপকূলে অবস্থান করছে। সেখানে পৌঁছানোর পর জাহাজের ব্রিজ থেকে নাবিকদের কেবিনে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে জলদস্যুরা। তবে ঘুমের সময়ও বড় বড় মেশিনগান তাদের দিকে তাক করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাহাজটির একজন নাবিক। ভাইয়ের কাছে পাঠানো এক ভয়েস মেসেজে তিনি এই তথ্য জানিয়েছেন। খবর ডয়চে ভেলে।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে নাবিকের ছোট ভাই এই ভয়েস মেসেজ পেয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ওই নাবিকের নাম, পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।


বিজ্ঞাপন


ভয়েস মেসেজ নাবিক বলেন, ‘গতকাল একটি নেভি জাহাজ এসেছিল। আজকেও একটি নেভি জাহাজ এসেছিল। মোট দুইটি সুসজ্জিত জাহাজ আমাদের রেসকিউ করতে চেয়েছিল।’

তবে তা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওরা (জলদস্যুরা) আমাদের জিম্মি করে রাখে, আমাদের মাথায় বন্দুক ধরে রাখে। নেভির বড় বড় ফ্রিগেট দেখেই ওরা আমাদের জিম্মি করে। এসব বড় জাহাজ দেখেও ওরা ভয় পায় না।’]

এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা কাউকে আঘাত করেনি বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে, আমি যেখানে ঘুমাই সেখানে পাশ ফিরলেই দেখতে পাই যে আমার দিকে বড় বড় মেশিনগান তাক করে রেখেছে। এই অবস্থায় ঘুম যা হওয়ার হচ্ছে। তারপরও মানসিকভাবে চাপে থাকলেও সুস্থ থাকার চেষ্টা করছি।’


বিজ্ঞাপন


জাহাজে থাকা খাবার তাদের সঙ্গে জলদস্যুরাও খাচ্ছে এবং এর ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এখনো খাবার আছে। কিন্তু, যেহেতু জলদস্যুরাও আমাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছে, আমাদের পানি ব্যবহার করছে, আমাদের খাবার আর কতদিন যাবে সেটা বলতে পারছি না। আর হয়তো ১০-১৫ দিন বড়জোর যেতে পারে। এরপর খাবার শেষ হয়ে গেলে আমরা খুব কষ্টে পড়ে যাব। পানি শেষ হয়ে গেলে খুব কষ্টে পড়ে যাব।’

সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছানোর পর নাবিকদের সঙ্গে জলদস্যুদের ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা সোমালিয়া এলাম। ওদের সঙ্গে আমাদের একটু ভালো রিলেশন হয়েছে। ওদের বলে কয়ে আমরা একটু কেবিনে এলাম। কিন্তু আবার ব্রিজে চলে যেতে হবে।’

সরকার ও জাহাজের মালিকপক্ষ তাদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে এবং গণমাধ্যম নিয়মিত তাদের খবর প্রকাশ করছে বলে খানিকটা আশ্বস্ত রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি শিগগির পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারব। ঈদের আগে যেন পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারি, সেটাই আমরা চাই।’

সোমালিয়ার উপকূলে নোঙর করেছে জাহাজটি

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ সোমালিয়ার উপকূলের কাছাকাছি নোঙ্গর করেছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর এম মাকসুদ আলম।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক মুহাম্মদ মাকসুদ আলম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

এর আগে, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ গারাকাদ বন্দরের কাছে নোঙর করেছে। বৈদেশিক একটি শিপিং কোম্পানির সূত্র থেকে তারা এই খবর পেয়েছেন বলে জানান।

এমভি আবদুল্লাহর মালিকানাধীন সংস্থা কেএসআরএম গ্রুপের গণমাধ্যম বিষয়ক কর্মকর্তা মিজানুল ইসলামও গারাকাদ বন্দরে জাহাজটি নোঙরের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘গতকাল রাত পর্যন্ত আমাদের নাবিকদের সঙ্গে যা কথা হয়েছে, আমরা তাদের কাছ থেকে জেনেছি, তারা নিরাপদ আছেন, সুস্থ আছেন। তবে জলদস্যুদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ আমাদের এখনও স্থাপন হয়নি। আমরা আশা করছি জলদস্যুরা যেহেতু সেফ জোনে পৌঁছে গেছে, অচিরেই তারা হয়তো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমরাও বিভিন্ন থার্ড পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা আছে আমাদের যেসব নাবিক জিম্মি অবস্থায় আছেন, তাদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের তরফ থেকে যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, আমরা সেগুলো নিয়েছি।’

লক্ষ্য রাখছে ইইউ নেভাল ফোর্স

গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নৌ সেনা দফতর জানিয়েছে তাদের একটি নৌযান এমভি আব্দুল্লাহকে অনুসরণ করছিল

বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘আটলান্টা অপারেশনের’ অংশ হিসেবে একটি ইউরোপীয় জাহাজকে তারা নিযুক্ত করেছিল। মঙ্গলবার জাহজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। তাতে ২৩ জন ক্রু সদস্য রয়েছেন। তারা নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছে ইইউ নেভাল ফোর্স।

বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, তাদের ‘অপারেশন আটলান্টা’ এই ব্যাপারে বাংলাদেশ ও সোমালিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এছাড়াও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে ভারতের নৌবাহনীসহ অন্যান্য আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গেও আলাপ চলছে বলে জানানো হয়েছে।

পশ্চিম ভারতীয় মহাসাগর ও লোহিত সাগরে নিরাপত্তা রক্ষায় ইইউ নৌবাহিনীর অভিযানের নাম ‘অপারেশন আটলান্টা’।

জাতিসংঘের হিসেবে ২০১১ সালে সবচেয়ে বেশি ১৬০টি জাহাজে হানা দেয় সোমালিয়ান জলদস্যুরা। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আন্তর্জাতিক জলসীমানায় উপস্থিতি বৃদ্ধির কারণে এই সংখ্যা কমতে থাকে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাদের তৎপরতা আবার বেড়েছে। গত ডিসেম্বরে অন্তত দুইটি জাহাজে জলদস্যুদের হানা দেয়ার খবর মিলেছে।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এমএইচটি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর