ভারত মহাসাগরে জিম্মি হওয়া বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ও ২৩ নাবিককে নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। জাহাজের মালিক ও বিমাকারী সংস্থাকে আলোচনার কৌশল ঠিক করাসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। তবে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত জাহাজ ও নাবিকদের নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য জাহাজটির ওপর নিবিড় নজরদারি চালিয়ে যেতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও সোমালিয়াসহ ভারত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত বিভিন্ন দেশকে অনুরোধ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এমন সিদ্ধান্ত হয়। সভায় উপস্থিত কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এসব কথা জানিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সভাপতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম সাংবাদিকদের জানান, বিভিন্ন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। জাহাজের বিমাকারী সংস্থা ও সোমালিয়ান পাইরেটস রিপোর্টিং গ্রুপের সঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ রয়েছে।
জাহাজ ও নাবিকদের মুক্তির বিষয়ে জলদস্যুরা গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত কোনো টাকা দাবি করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, জলদস্যুরা ৫০ লাখ ডলার দাবি করেছে বলে যে তথ্য প্রচার রয়েছে, তা সঠিক নয়।
খুরশেদ আলম বলেন, ভারত মহাসাগরের ওই অংশে গত ২৪ বছরে প্রায় ৩০০ জাহাজ অপহৃত হয়। এর মধ্যে অধিকাংশই শান্তিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে আনা গেছে। একই প্রক্রিয়ায় এবার অপহৃত জাহাজটিও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
বিজ্ঞাপন
নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম জানান, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে নোঙর করেছে। জাহাজ ও জাহাজের নাবিকেরা যাতে নিরাপদ থাকেন, সেটাই এখন সরকারের কাছে মূল বিষয়।
আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, জাহাজটি যেহেতু নোঙর করেছে, অপহরণকারীরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কোনো না কোনো সময় যোগাযোগ করবে। তারপর কৌশল ঠিক করা হবে, কীভাবে আলোচনা এগোবে।
এদিকে জাহাজটির মালিকপক্ষও সভায় অংশ নেয়। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জলদস্যুদের সঙ্গে আলোচনায় কখন কী কৌশল নেওয়া হবে, তা গণমাধ্যমে প্রকাশ না করতে সভায় সকলকে বলে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে নাবিকদের স্বজনদের আহাজারিও যতটা সম্ভব প্রকাশ্যে না আনতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরামর্শ দিতে সভায় অনুরোধ করা হয়।
সভায় বলা হয়, আহাজারি বেশি প্রকাশ পেলে ও নিজেদের কৌশল ফাঁস হলে, আলোচনায় জলদস্যুরা কৌশলগতভাবে সুবিধা পেয়ে থাকে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সোমালিয়ার জলদস্যু দ্বারা জাহাজ অপহরণ হওয়ার বিষয়টি দেশটির সরকারকে কূটনৈতিক চ্যানেলে জানানো হয়েছে। তবে জলদস্যুরা সাগরের যে অঞ্চলে বিচরণ করে ও যে স্থানে জাহাজটি নিয়ে গেছে, সেখানে দেশটির সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই।
এমএইচটি