‘ডায়মন্ড’ ও ‘দে ধাক্কা’ কিশোরগ্যাং পরিচালনাকারী চক্রের অন্যতম হোতা মো. জুলফিকার আলীসহ ৫ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও বিপুল দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন, জুলফিকার আলী (৩৭), হারুন অর রশিদ (৩৮), শামছুদ্দিন বেপারী (৪৮), কৃষ্ণ চন্দ্র দাস (২৮) ও মো. সুরুজ মিয়া (৩৯)।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-৩ এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগরীর আদাবরের মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
তিনি জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশকিছু কিশোরগ্যাং সক্রিয় রয়েছে। তার মধ্যে জুলফিকারের নেতৃত্বে ‘ডায়মন্ড’ ও ‘দে ধাক্কা’ নামে দুটি কিশোরগ্যাং পরিচালনা করতেন। এলাকার বেশকিছু বেপরোয়া ও মাদকসেবী কিশোরদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরগ্যাং পরিচালনার মাধ্যমে এলাকায় অস্ত্র, মাদক কারবার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি ও ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম করতেন। জুলফিকারের কিশোরগ্যাং পরিচালনা করার জন্য হারুন, শামছুদ্দিন বেপারী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস এবং সুরুজ মিয়া সার্বিক সহযোগিতা করতেন। জুলফিকার মূলত ‘ডায়মন্ড‘ এবং ‘দে ধাক্কা’ গ্রুপের কিশোর গ্যাংদের দেশি-বিদেশি পিস্তল ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করতেন। তারা আধিপত্য বিস্তারের জন্য কিশোর গ্যাংকে অস্ত্র সরবরাহ করে তাদের দিয়ে দলবদ্ধভাবে মোটরসাইকেলের মহড়া দিয়ে এলাকায় ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করতেন।
র্যাব জানিয়েছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরজুড়ে তাদের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা ‘ডায়মন্ড‘ এবং ‘দে ধাক্কা’ দুটি কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতায় প্রতিনিয়ত তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে বিরোধী অন্য গ্যাংসগুলোর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তেন। খুবই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের নির্দেশে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করা হতো। এসব ঘটনায় তারা হরহামেশাই যে কাউকে গুলিবিদ্ধ, কুপিয়ে জখম, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটাতেও দ্বিধাবোধ করতো না তারা। এছাড়াও মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়, চাঁদ উদ্যান, লাউতলা, নবীনগর হাউজিং, বসিলা চল্লিশ ফিট, কাঁটাসুর, তুরাগ হাউজিং, আক্কাস নগর, ঢাকা উদ্যান নদীর পাড়, চন্দ্রিমা হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, বসিলা হাক্কার পাড় ইত্যাদি এলাকাজুড়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের মহড়া দিতো। কিশোরদের দিয়ে এলাকার মাদক কারবার নিয়ন্ত্রণ করা হতো। এছাড়া তারা পথচারীদের মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে টাকা আদায় করতো।
বিজ্ঞাপন
কে এই জুলফিজার ও হারুন?
কিশোর গ্যাংয়ের হোতা জুলফিকার অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পরে তিনি পড়াশোনা বাদ দিয়ে এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে শুরু করেন। কিছুদিন ওয়ার্কশপে কাজ করার পর তিনি নারায়ণগঞ্জে এসে পিকআপে হেলপারি শুরু করতেন। হেলপারি করা অবস্থায় একটি স্বনামধন্য কোম্পানির মালামাল আত্মসাৎ করার দায়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলার পর তিনি পালিয়ে সৌদি চলে যান। সৌদি থেকে ২০২১ সালে দেশে আসার পর গ্রেফতার হয়ে ২ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্ত হন। জেলে থাকা অবস্থায় তার সাথে হারুনের সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। জুলফিকার জামিনে মুক্ত হয়ে হারুনের সাথে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চলে আসেন এবং প্রথমে এই এলাকায় টিউবওয়েলের মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। এ সময়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদক সেবনের আড্ডার মাধ্যমে কৃষ্ণ, শামছুদ্দিন ও সুরুজসহ বেশকিছু মাদক সেবনকারী যুবকের সাথে তার ঘনিষ্টতা তৈরি হয়। তাদের সাথে পরামর্শ করে জুলফিকার তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করে এবং তাদের নিয়ে ২০২২ সালে তিনি ‘ডায়মন্ড’ নামের কিশোরগ্যাং তৈরি করেন। সেই থেকে তিনি বাহিনীটিকে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য দিক নির্দেশনা ও অস্ত্র সরবরাহ প্রদান করতে শুরু করেন আরও একটি কিশোরগ্যাং বাহিনী তৈরি করে সেটার নাম দেয় ‘দে ধাক্কা’ কিশোরগ্যাং বাহিনী। বাহিনী দুটিকে দিকনির্দেশনা দিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন তিনি
অন্যদিকে হারুন ২০২১ সালে আদাবর থানার একটি চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার হয়ে ১ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়। জামিনে মুক্ত হয়ে সে জুলফিকারের সাথে যোগসাজশে কিশোরগ্যাং পরিচালনা করতে শুরু করে। এছাড়াও শামছুদ্দিন বেপারী পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস পেশায় চা-বিক্রেতা এবং সুরুজ মিয়া একজন প্রাইভেটকার চালক। তারা সকলেই মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় বসবাস করেন। এলাকায় মাদক সেবনের আড্ডার মাধ্যমেই মূলত তাদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠে। তাদের দৃশ্যমান পেশার আড়ালে তারা কিশোরগ্যাং পরিচালনার কাজ করে থাকে। জুলফিকার তাদের কিশোরগ্যাং পরিচালনা চক্রটির অন্যতম হোতা। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এমআইকে/এইউ