নির্বাচনের বাকি আর এক সপ্তাহের কিছু সময় বেশি। এই সময়ে মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি এবং উপকূলীয় এলাকায় কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) দেশজুড়ে মোতায়েন করা এসব বাহিনীর সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রায় ১৩ দিন ভোটের মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে শুক্রবার থেকে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে প্রথমে সিদ্ধান্ত হলেও পরে তা পেছানো হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে আট দিন সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুসাইন মুহাম্মাদ মাসীহুর রাহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই কথা বলা হয়।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার দেশে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একযোগে তিনশ আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুতে শেষ পর্যন্ত নওগাঁ-২ আসনের ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে আগামী ৭ জানুয়ারি দেশের ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে ব্যালট পেপারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাঠানো শুরু হয়েছে হয়েছে জেলায় জেলায়।
বিজ্ঞাপন
দেশজুড়ে পুরোদমে চলছে ভোটের প্রচার-প্রচারণা। বিএনপিসহ কয়েকটি বিরোধী দল এবারের নির্বাচন বর্জন করায় মাঠ পর্যায়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কমেছে। তবে আওয়ামী লীগ থেকে ব্যাপক হারে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকায় ভোটের মাঠে কিছুটা উত্তাপ বিরাজ করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজনের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী বা জাতীয় পার্টিসহ বিরোধী দলগুলোর প্রার্থীদের সঙ্গে সংঘাতের খবর আসছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন শতাধিক। ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসবে এই উত্তাপ আরও বাড়তে থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো ভোট ঠেকাতে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিযেছে। এজন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় ভোটের মাঠ শান্ত রাখতে নামানো হয়েছে বিভিন্ন বাহিনী।
সারাদেশে র্যাব মোতায়েন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সারাদেশে মোতায়েন করা হয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, র্যাব ফোর্সেস শুক্রবার ২৯ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সকল নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে দেশের নিরাপত্তায় অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র্যাব ফোর্সেস যেসব দায়িত্ব পালন করবে- সেগুলো হচ্ছে- নির্বাচনী এলাকায় সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা প্রদান করবে। এ ছাড়াও ভোটকেন্দ্র ও ভোট গণনার ক্ষেত্রে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিটি আসনে কমপক্ষে দুটি টহল দল মোতায়েন ও প্রতিটি ব্যাটালিয়নে দুটি টহল স্ট্রাইকিং ফোর্স রিজার্ভ থাকবে, র্যাব সদর দফতরে ১৫টি টহল দল সেন্ট্রাল রিজার্ভ হিসেবে প্রস্তুত থাকবে এবং দেশব্যাপী ২৫টি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হবে। এছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে মোতায়েনের জন্য ৫০টি টহল দল প্রস্তুতসহ দেশব্যাপী ৭০০টির অধিক টহল দল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবে, গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং নিজস্ব সুইপিং ও বোম্ব ডিসপোজাল টিম প্রস্তুত থাকবে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ও ডগ স্কোয়াড নিয়োগ করা হবে।
অগ্রগণ্যতার ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ/গুরুত্বপূর্ণ আসন বিবেচনায় মোতায়েনের জন্য বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন থেকে টহলসমূহ গুরুত্বপূর্ণ/ঝুঁকিপূর্ণ আসন বিবেচনায় মোতায়েনের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে, বিশেষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য র্যাব ফোর্সেস সদর দফতরের স্পেশাল ফোর্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে, র্যাব ফোর্সেস সদর দফতরের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সাতটি জোনে বিভক্ত হয়ে মোতায়েনের জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে, র্যাব ডগ স্কোয়াডের ১০টি দল র্যাব ফোর্সেস সদর দফতরে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে।
এছাড়া দেশব্যাপী বিভিন্ন জায়গায় চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশির মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে, নির্বাচন কমিশনের তথ্য ও গোয়েন্দা সূত্রে ঝুঁকিপূর্ণ আসনসমূহে অধিক টহল নিয়োজিত রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
১১৫১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সারাদেশে এক হাজার ১৫১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজিবি কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে ‘ইন এইড টু দ্যা সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর থেকে আগামী ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশের নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিজিবি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করবে।
উপকূলীয় ৪৩টি ইউনিয়নে কোস্টগার্ড মোতায়েন
এদিকে নির্বাচনকালীন শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় উপকূলীয় এলাকায় মোতায়েন হলো বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে কোস্টগার্ড সদর দফতরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি এই তথ্য জানান।
এই কর্মকর্তা বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে উপকূলীয় ৪৩টি ইউনিয়নে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে।
খন্দকার মুনিফ তকি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ কোস্টগার্ড নির্বাচন-পূর্ববর্তী, নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে ‘ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে ১০ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকাসমূহে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
জেবি