দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে সব ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু এখনো নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধান দুই দলের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে কিনা তা নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে। সংকট কাটাতে সংলাপের জন্য ডাকলেও তাতে সাড়া দেয়নি বিএনপি। ফলে বিএনপিকে নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) মধ্যে কিছুটা আক্ষেপ রয়ে গেছে। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে সিইসির বক্তব্যে এমনটা শোনা গেছে।
বিএনপির নাম উল্লেখ না করে সিইসি বলেছেন, 'আমাদের বিষয়টা হচ্ছে, আন্তরিক যে পরিবেশ সেটা অনুকূল হয়ে উঠুক। এজন্য সবাইকে নিরন্তর আহ্বান করে যাচ্ছি, সংলাপ করেছি। যারা নির্বাচনে আসতে চান না তাদের আমার পক্ষ থেকে আধা সরকারিপত্র দিয়েছি। কিন্তু সাড়া পাইনি।'
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) নির্বাচন কমিশন ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিইসি এসব কথা বলেন। এ সময় সিইসি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ ও সহযোগিতা চান।
একইদিনে লহ্মীপুরে নির্বাচন কমিশন মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘বিএনপিকে চায়ের দাওয়াত দিয়েও, আনতে পারিনি। তারা আমাদের আস্থায় নিচ্ছেন না। আমাদের মানেন না।’
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে আহ্বান জানানো হলেও বিএনপিসহ তাদের রাজনৈতিক মিত্র বেশিরভাগ দল সংলাপে যায়নি। অবশ্য সংলাপে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ দল নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে কথা বলেছে।
গত মার্চে সংলাপ বর্জনকারী বড় দল বিএনপির সঙ্গে মতবিনিময় করতে চিঠি দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ইসির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে ইসির পক্ষ থেকে ওই চিঠিতে বৈঠকের কোনও সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। বিএনপি আলোচনায় সম্মত কিনা জানতে চাওয়া হয়েছে।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এক ডিও লেটার (আধা-সরকারিপত্র) দিয়ে বিএনপি মহাসচিব ও দলের দলের নেতাদের মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বিএনপি চাইলে ওই মতবিনিময়ে সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতারাসহ অংশ নিতে পারে বলেও তাতে বলা হয়।
জানা গেছে, চিঠিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার লিখেছিলেন, ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন করে আসছি। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সংসদ নির্বাচনের কথা অনুধাবন করে আসছে।
ওই চিঠিতে বর্তমান ইসি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থানের কথা তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বর্তমান কমিশনের প্রতি অনাস্থা ব্যক্ত করে প্রত্যাখ্যান করে আসছে। আপনারা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও আপনাদের এমন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও কৌশলের বিষয়ে কমিশনের কোনও মন্তব্য নেই।
চিঠিতে সিইসি বলেন, আপনাদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হলেও কমিশন মনে করে বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক না হোক, অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা বা মতবিনিময় হতে পারে। আপনাদের নির্বাচন কমিশনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সদয় সম্মত হলে দিনক্ষণ আলোচনা করে নির্ধারণ করা যেতে পারে। প্রত্যুত্তর প্রত্যাশা করছি।
অবশ্য নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এদের অবৈধ বলে আসছে বিএনপি নেতারা। এই কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা।
বিইউ/এমআর