দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কমিটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে তাদের সহযোগিতা চান প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা বলছেন, প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে। সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদেরও যুক্ত করতে হবে। অন্যথায় যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হচ্ছে, তা সম্ভব হবে না।
অন্যদিকে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন- দেশের এনজিওগুলোর প্রতিবন্ধিতা দূর করে অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসবিষয়ক আরও বেশি কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকেও সম্পৃক্ত করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, নবলোক পরিষদ, ডিজএ্যাবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশন ও কারিতাস বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় ‘এস্টাবলিশিং ডিজাস্টার রেজিলিয়েনট কমিউনিটিজ ইন সাতক্ষীরা’ এবং খুলনা জেলার দাকোপ ও কয়রা উপজেলায় বাস্তবায়নাধীন ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’ নামক দুটি প্রকল্পের বিষয়ে অবহিত করার লক্ষ্যে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সহযোগিতা করে সিবিএম গ্লোবাল ডিজএবিলিটি ইনক্লুশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা।
অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মহুয়া পালের সভাপতিত্বে এবং নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিজএ্যাবল চাইল্ড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাসরিন জাহান। এতে অন্যদের মধ্যে কারিতাস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক সেবাষ্টিয়ান রোজারিও এবং নবলোক পরিষদের নির্বাহী পরিচালক কাজী রাজীব ইকবাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান নিজ বক্তব্যে সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গৃহীত নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় দুর্যোগকবলিত এলাকাসমূহে মাল্টিপারপাস অ্যাক্সেসিবল রেসকিউ বোট তৈরির মাধ্যমে প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আইন, নীতিমালা এবং কর্মপরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর কার্যকর বাস্তবায়নে আমাদের আরও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।’
এ ক্ষেত্রে প্রতিমন্ত্রী সভায় আলোচিত বিষয়সমূহের ওপর একটি প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন।
অন্যদের মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় বিশ্বে একটি মডেল। সরকার নতুন সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রতিবন্ধীবান্ধব করে গড়ে তুলেছে। কিন্তু পুরোনো সেন্টারগুলো প্রতিবন্ধীবান্ধব করতে সরকার প্রকল্প গ্রহণ করতে পারে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, এনজিওগুলোর প্রতিবন্ধিতা দূর করে অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসবিষয়ক আরও বেশি কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে এবং তাদের কার্যক্রমের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনকেও সম্পৃক্ত করতে হবে।
অন্যদের মধ্যে সিবিএম গ্লোবাল ডিজএবিলিটি ইনক্লুশন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মুশফিকুল ওয়ারা বলেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সিবিএম এর গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে ‘গাইবান্ধা মডেল’ এবং ‘ইনক্লুসিভ ডিজেস্টার রিস্ক রিডাকশন হ্যান্ডস অন টুল অ্যাপ’ অন্যতম। আগামী দিনে সিবিএম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনদের সঙ্গে নিয়ে এই বিষয়ে আরও বিস্তর পরিসরে কাজ করবে।
এ সময় সিবিএম এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার তাজিন হোসাইন প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
সভায় অন্যদের মধ্যে অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের আলবার্ট মোল্লা বলেন, দুর্যোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে, যা হ্রাস করতে প্রকল্প দুইটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
পাশাপাশি পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক দিলরুবা আক্তার নিজ বক্তব্য বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের কার্যক্রম আরও জোরদার করার জন্য এনজিওগুলোর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি এবং সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গ্রহণের জন্য তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।’
এ দিন অনুষ্ঠানে নবলোক পরিষদের রিয়াদুল করিম এবং কারিতাস বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার সরোজ পি. কোরাইয়া প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করেন।
পরে সভাপতির বক্তব্যে অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মহুয়া পাল বলেন, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সকল কমিটিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনগুলোকে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে সহযোগিতা করা উচিত।
পরবর্তীতে সরকারি প্রতিনিধি ছাড়াও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, এনজিও প্রতিনিধি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের প্রতিনিধি, সাংবাদিকবৃন্দসহ উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রকল্প দুটির সাফল্য কামনা করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন তিনি।
বিইউ/আইএইচ

