দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন সপ্তম। তবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম। বাংলাদেশে গত দুই দশক ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সুস্পষ্ট। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ সব সময়ই দুর্যোগ প্রবণ দেশ, এর পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দুর্যোগের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামেন সেইভ ফিউচার বাংলাদেশ আয়োজিত মানববন্ধনে এসব বিষয় উঠে আসে।
বিজ্ঞাপন
মানবন্ধন থেকে বলা হয়, বিশেষ করে তীব্র তাপদাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদী ভাঙন কিংবা বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। যার প্রভাব বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনে পড়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু সূচক-২০২১ এর প্রতিবেদনে বলা হয় গত ২০ বছরে বাংলাদেশে ১৮৫টি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বড় দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, পাহাড়ধসের মতো দুর্যোগ রয়েছে। এতে ১১ হাজার ৪৫০ জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ৩৭২ কোটি ডলার।
সেইভ ফিউচার বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সমন্বয়ক, পরিবেশ ও জলবায়ু কর্মী নয়ন সরকার বলেন, বিশ্বের তরুণদের মতো আমরা বাংলাদেশের তরুণেরাও বাসযোগ্য পৃথিবীর জন্য আজ রাস্তায় নেমে জলবায়ু ধর্মঘট করছি। বৈশ্বিক তাপমাত্রা দিনকে দিন বাড়ছে; আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির শেষ চাই। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি চাই। উল্লেখযোগ্য যে, আমি নিজে একজন জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সন্তান। যখন আমার বয়স ৩ বছর, ২০০৪ সালে নদী ভাঙনে আমার পরিবার ঘর, জমি, অন্যান্য সম্পদ হারায়। এই গল্প শুধু আমার পরিবারের একার না, বরং আমার ভোলা দ্বীপের লাখও পরিবারের একই গল্প; যারা পরবর্তীতে স্থানান্তরিত হয়ে অন্য স্থানে বসবাস করছে।
তিনি বলেন, আমি আমার দেশের সেসকল জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য জলবায়ু সুবিচার চাই। যারা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশ বৈশ্বিক গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমনের ক্ষেত্রে ০.৪৭ শতাংশ অবদান রাখে। অথচ তীব্র তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং নদী ভাঙনের ফলে বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ভুগছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নই, কিন্তু আমরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। আমরা জলবায়ু ঝুঁকিহীন, নিরাপদ এবং বাসযোগ্য এবং দূষণমুক্ত পৃথিবী ও বাংলাদেশ চাই।
সেইভ ফিউচার বাংলাদেশ এর পরিবেশ ও জলবায়ু কর্মী আতিউল ইসলাম প্রামাণিক বাবু বলেন, বিষাক্ত জীবাশ্ম জ্বালানির অত্যাচারের অবসান ঘটাতে হবে। এখনই সময় জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করার এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করার। টেকসই উন্নয়নের জন্য নবায়নযোগ্য শক্তিই পারে আগামীর পৃথিবীকে বাসযোগ্য করতে। আমরা চাই বিশ্ব নেতারা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি না দিয়ে সময় অপচয় না করে তারা যেনো জলবায়ু পরিবর্তন রোধে পদক্ষেপ নেয়।
বিজ্ঞাপন
সেইভ ফিউচার বাংলাদেশ এর আইটি ও মিডিয়া সমন্বয়ক এবং পরিবেশ ও জলবায়ু কর্মী রাকিবুল ইসলাম তন্ময় বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি আসর হুমকি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, চরম আবহাওয়া এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আমাদের অবিলম্বে মনোযোগের দাবি রাখে। এটা অপরিহার্য যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের নেতাদের কাছে পদক্ষেপ দাবি করছি। একটি জলবায়ু ধর্মঘটের মাধ্যমে, আমরা পরিবর্তনকে অনুঘটক করতে পারি এবং বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করতে পারি। আসুন আমরা একটি টেকসই বাংলাদেশ এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবীর জন্য সংহতি প্রকাশ করি।
ডিএইচডি/এএস

