বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

জাহাঙ্গীরনগর ডায়েরি: স্মৃতিতে অমলিন দিনগুলো

মো. শাহিন রেজা
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৪৪ এএম

শেয়ার করুন:

জাহাঙ্গীরনগর ডায়েরি: স্মৃতিতে অমলিন দিনগুলো

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর বুকে নন্দনকানন। প্রতিবছর ১২ জানুয়ারি জাঁকজমকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হয়। ঢাকার অদূরে সাভারে প্রায় ৭০০ একর জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত। সবুজে ঢাকা এই বিশ্ববিদ্যালয় অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ যে কাওকে মুগ্ধ করবে। 

অতিথি পাখি, প্রজাপতি মেলা, পাখি মেলা, বটতলার খাবারের জন্য সারা দেশের মানুষের কাছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বেশ পরিচিত। শিক্ষা, সংস্কৃতি খেলাধুলাসহ সবক্ষেত্রে এগিয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ফলে প্রতিবছর কয়েক লক্ষ ভর্তি পরীক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করার জন্য ফর্ম উঠায়। শিক্ষা ও গবেষণার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে চাকরি করছেন অনেকে। সংস্কৃতি চর্চার তীর্থ ভূমি এটি। গণতান্ত্রিক যেকোনো আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছে। 


বিজ্ঞাপন


ju

কলেজ পড়া অবস্থায় ইংরেজি বিভাগের সুজিত কুমার শিকদার স্যারের কাছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গল্প শুনেছিলাম। স্যার আমাদের পড়ানোর সময় কোনো উদাহরণ দিলেই জাহাঙ্গীরনগরের কথা বলতেন। পরবর্তীতে কলেজের গন্ডি পেরিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সৌভাগ্য হয় আমার। 

আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র। খুব অন্তর্মুখী স্বভাবের ছিলাম। তবে হলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম। মাঝে মাঝে রাতে আমরা রান্না করতাম। বিশেষ করে কারো জন্মদিন থাকলে ধুমধাম করে পালন করতাম। আয়োজনের মূলে আমি আর মামুন থাকলেও কখনো কেও আমাদের জন্মদিন পালন করতে পারেনি!

ju


বিজ্ঞাপন


বার্ষিক পরীক্ষার সময় বন্ধুদের কাছ থেকে নোট সংগ্রহ করা, রাত জেগে পড়া আবার এর মধ্যেই রাতে মুড়ি পার্টি দেওয়াসহ কত-শত স্মৃতি রয়েছে আমাদের। প্রতিদিন সকালে ক্লাস থাকতো আমাদের। দলবেঁধে ক্লাসে যাওয়া, যাওয়ার পথে মাঝে মাঝে বটতলায় নাশতা সারা কিংবা না খেয়ে সারা দিন ক্লাস করা, বিকেলে ব্যবহারিক ক্লাস ও ল্যাব ক্লাস জুড়ে আমাদের আছে সুখের স্মৃতি। 

ব্যবহারিক ক্লাসে খন্দকার হাসান মাহমুদ স্যারের ক্লাস ছিল উপভোগ্য। গ্রুপ ধরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ডাটা সংগ্রহ করা, প্রেজেন্টেশনের সাথে হালকা বিনোদন! আমার ইনভায়রনমেন্ট, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়গুলো পড়তে ভালো লাগতো। আরএসও জিআইএস পরীক্ষার সময় আমার আর মানুনের টেনশনের পারদ চূড়ায় থাকতো। আমাদের ভর্তি হওয়ার আগে ৩ জন শিক্ষক বিভাগে নিয়োগ পান। ইমন স্যার, মেহেদী স্যার ও রনি স্যারের আমরা ছিলাম প্রথম ব্যাচ। ফলে আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত ভালো। 

ju

বিভাগের সুভাষ স্যার আমাদের সমুদ্র বিজ্ঞান পড়াতেন। এখনো স্যারের লেকচারগুলো মনে মধ্যে গেঁথে আছে। এছাড়াও শাহেদ স্যারের ক্লাস ছিল আমাদের কাছে নতুন নতুন ভাবনা তৈরির উৎসাহ। মঞ্জুরুল হক স্যারের নৃবিজ্ঞান পড়ানোর কথা অনেক দিন মনে থাকবে আমাদের। আলম স্যার, নুরুল ইসলাম স্যার, লিথু স্যার, ওবায়দুর রহমান স্যার, মিজান স্যার, রওনক জাহান ম্যাম, উম্মে সাইকা ম্যাম, হাফছা ম্যাম, আনোয়ারুল হক মন্ডল স্যার, আলমগীর স্যার, রেজাউল রাকিব স্যারের ক্লাসগুলো আমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

তবে রাকিব স্যারের সাথে রিসার্চ ওয়ার্ক করায় আমার সাজু ও অনুর বেশি স্মৃতি রয়েছে। স্যার প্রতিটি কাজ অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে করতেন। ফাঁকিবাজির কোন সুযোগ ছিল না। আমি জলবায়ু পরিবর্তন ও ল্যান্ড প্যাটার্ন চেঞ্জ নিয়ে কাজ করেছিলাম। বিভাগের প্রতিটি বন্ধু সাথে আমার সুসস্পর্ক ছিল। 

ju

আগেই যেমনটা বলছিলাম আমি খুব ইন্ট্রোভার্ট ছিলাম। তবে আমাকে এই সমস্যা দূর করতে ভূগোল ৩০ ব্যাচের ইশরাত শারমিন আপু বেশি ভূমিকা রেখেছেন। আপু বলতেন, আমি তার মেলায় হারিয়ে যাওয়া আপন ছোট ভাই। আমি বরাবরই সিনিয়রদের স্নেহ পেয়েছি। জাবিতে থাকা অবস্থায় নিয়মিত ২৬ ব্যাচের প্রান্ত ভাইয়ের বাসায় দাওয়াত খেতে যেতাম। ঢাকাতে গেলে বেসরকারি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কাওসার ভাই, অগ্রণী ব্যাংকের জিএম মিতা আপু, জনতা ব্যাংকের ডিজিএম আজাদ ভাইয়ের অফিসে সালাম দিতে যেতাম। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর নিয়মিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যাওয়া হতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা ফটোগ্রাফার রাশেদ রানা আমার বন্ধু। এছাড়াও আমি যে শহরেই গেছি জাবিয়ান খুঁজেছি। খুলনা শহরে রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার মহিদ উদ্দিন ভাই, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ওজোপাডিকো'র কোম্পানি সেক্রেটারি আলমগীর কবির ভাই, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মিতা আপু, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সিদ্দিক ভাই, সদরের এসিল্যান্ড খুকু আপুর সাথে দেখা করতাম। 

ju

তারা আমাকে ভীষণ স্নেহ করতেন। এছাড়াও আমার বিভাগের জেরিন আপুকে সবসময় পেয়েছি পরামর্শক হিসেবে। সূর্য আপু, তমা আপু, শাহিন ভাইয়ের সাথে অনেক স্মৃতি আছে আমার। দর্শন বিভাগের নাসরিন ম্যামের অফিসে যেয়ে কতবার যে বিভিন্ন দেশের চা এর স্বাদ নিয়েছি। ম্যাম এখন বিদেশে পড়ালেখা করছেন। আমার পত্রিকাতে লেখালেখি করতে ম্যাম সবসময়ই উৎসাহ দেন।

আরও পড়ুন- 
লজ্জিত নই, সহানুভূতিও নয়

করোনার সময় ব্যাংকার কামরুল ভাইয়ের অফিসে, জাবি সাংবাদিক সমিতির নির্বাচনে বন্ধু শামিমের পক্ষে প্রচারনার স্মৃতি গুলো চোখে ভাসে। এখনো হলে ও বিভাগের বন্ধু, সিনিয়র জুনিয়রদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। আমার এই প্রিতি দেখে আবার অনেকে ঈর্শ্বান্বীত হন!

ju

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ সময়ে পরিচিত হয় ২৭ ব্যাচের রওনক ম্যাম ও ৩৩ ব্যাচের মনিরা আপুর সাথে। ড. রাশেদা রওনক খান এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসেন তিনি। আর মনিরা পারভীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারপার্সন। আপুর কাছ থেকে সবসময় স্নেহ পাই একজন ছোট ভাই হিসেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিগুলো এত অল্প কথায় লিখে শেষ করা যাবে না। আমাদের প্রত্যাশা, শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে পৃথিবী সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হউক আমাদের এই মায়ানগর, স্বর্গীয়ভূমি প্রিয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। 

লেখক: প্রাক্তন শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর