শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

সোনার এত দাম কেন?

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০২:৫২ পিএম

শেয়ার করুন:

সোনার এত দাম কেন?

স্বর্ণ বা সোনার প্রতি মানুষের আগ্রহ চিরন্তন। বহু যুগ ধরেই মানুষ সোনা আর সোনার তৈরি নানা জিনিসে মুগ্ধ হয়ে আছে। নিজের সাধ ও সাধ্য অনুযায়ী স্বর্ণ নিজের মালিকানায় রাখতে চান সবাই। হোক তা গয়না কিংবা অন্য কোনো ভাবে। 

দিন দিন বেড়েই চলেছে সোনার দাম। তবু এর প্রতি আকর্ষণ কমতি নেই। এই আকর্ষণের কারণ কী? কেনই বা এই ধাতুটির এত দাম? 


বিজ্ঞাপন


সোনা হলুদ বর্ণের ধাতু। এর রঙকে সাধারণত সোনালি বলা হয়। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ এই ধাতুটির সঙ্গে পরিচিত। এর অপরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য, চকচকে বর্ণ, বিনিময়ের সহজ মাধ্যম, কাঠামোর স্থায়িত্বের কারণেই মূলত একে মূল্যবান ধাতু বলা হয়। স্বর্ণের ক্ষয় নেই। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই সোনা দিয়ে অলঙ্কার তৈরির প্রচলন বা প্রথা রয়েছে। 

gold

ধর্মচর্চায় সোনা 

স্বর্ণ মানুষকে বিমোহিত করে আসছে বহুকাল আগে থেকেই। এর চোখ ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্য, চাকচিক্য, অসাধারণ দীপ্তি মানুষের ভাবনা করেছে প্রসারিত। এসব কারণেই মানুষ এই ধাতুটিকে স্রষ্টা সংশ্লিষ্ট পবিত্র কোনো উপাদান ধরে দিয়েছে। 


বিজ্ঞাপন


অনন্যসাধারণ দীপ্তি, চাকচিক্য ও রঙের তীব্রতা মানুষকে যুগে যুগে অভিভূত করেছে। তার এই ভিন্নধর্মী, অপার্থিব সৌন্দর্যের রহস্যময়তা মানুষকে জুগিয়েছে ভাবনার রসদ। আর তাই মানুষ সোনাকে স্রষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, পবিত্র কোনো উপাদান হিসেবে ধরে নিয়েছে। পুরাণ মতে অ্যাজটেকরা মনে করত সোনা দেবতাদের বিষ্ঠা। আবার ইনকা সভ্যতার বিশ্বাস অনুযায়ী সোনা সূর্যদেবতার ঘাম বা অশ্রু।

gold

এখানেই শেষ নয়। প্রাচীন মিসরে সোনাকে ভাবা হতো দেবতাদের মাংস। তাদের মধ্যে মৃতদেহকে সোনার তৈরি মুখোশ (Burial Mask) পরিয়ে দেওয়ারও চল ছিল। এই কারণেই ফারাওদের কবর থেকে প্রচুর স্বর্ণ মিলত। হিসেব অনুযায়ী, কেবল তুতেনখামেনের কবর থেকে এক টনের বেশি সোনা পাওয়া যায়। 

এছাড়াও সোনার ব্যবহার করা হতো দেবতাদের ছোট আকারের মূর্তি, নৈবেদ্য অর্পণ করার অলংকৃত পাত্র এবং গয়না তৈরির কাজে। তবে সোনার যত ব্যবহার তা ছিল কেবল ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কাজে। দৈনন্দিন জীবনে এর কোনো ব্যবহার ছিল না। 

gold

মুদ্রা হিসেবে সোনা

কেবল ধর্মীয় কাজে নয়, একসময় মুদ্রাতেও ধাতুটির ব্যবহার দেখা যায়। খ্রিস্টপূর্ব ৭০০ সালে লিডিয়ান বণিকগণ প্রথমবারের মতো ধাতব মুদ্রা হিসেবে সোনার ব্যবহার শুরু করেন। এর নাম দেওয়া হয় ইলেক্ট্রাম। খোদাই করা ধাতব পিণ্ড ছিল এগুলো। এতে ৬৩ শতাংশ সোনা এবং ২৭ শতাংশ রূপা ছিল। এই মুদ্রা আবিস্কারের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজ সহজতর হয়ে ওঠে এবং পণ্য বিনিময় প্রথার চর্চা কমে আসে। 

স্বাস্থ্যে সোনার প্রভাব

প্রাচীনকালের বিশ্বাস অনুযায়ী, সোনা মানুষের দেহে উষ্ণ ও উদ্দীপ্তকারী প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে রূপা হয় শীতল ও বাধাদানকারী। এই ধারণার কারণে হাজার হাজার বছর ধরে আকুপাংচার চিকিৎসায় সোনা ও রূপার তৈরি সূচের ব্যবহার হয়ে এসেছে। যদিও আধুনিককালে এই ধারণা বিলুপ্তপ্রায়। বর্তমানে আকুপাংচার চিকিৎসায় কেবল স্টিলের সূচই ব্যবহার করা হয়।

gold

আবার চীনের আলকেমিস্টরা মনে করতেন, সোনা ভেজানো পানি পান করলে এবং খাওয়ার কাজে সোনার বাসনপত্র ব্যবহার করলে দীর্ঘায়ু পাওয়া যায়। খাবারকে আকর্ষণীয় দেখাতে এবং সোনার স্বাস্থ্যকর গুণাগুণ দ্বারা উপকৃত হতে এখনও বিভিন্ন খাবারে সোনার পাত ব্যবহার করা হয়।

এছাড়াও বিংশ শতাব্দীর আগে সিফিলিস, হৃদরোগ, গুটিবসন্ত প্রভৃতি রোগের চিকিৎসায় সোনা ব্যবহার করা হতো। বলা হয়, যদি খাঁটি (২৪ ক্যারেট) সোনা কোনো সংক্রমণ বা ক্ষতস্থানের ওপর রাখা হয়, তবে এটি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ক্ষত সেরে উঠতে সাহায্য করে। সোনা রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়। ফলে শরীরের সব অংশে অক্সিজেন ভালোভাবে পৌঁছতে পারে, শরীর থাকে সুস্থ ও রোগমুক্ত। 

gold

স্বর্ণ যখন ক্ষমতার চিহ্ন 

আভিজাত্য, উজ্জ্বলতা এবং সময়ের সঙ্গে এর ক্ষয় বা বিবর্ণ না হওয়ার গুণের কারণে যুগের পর যুগ সোনা ক্ষমতার চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সভ্যতার সূচনাকাল থেকেই এই ধাতুকে দেব-দেবী এবং রাজবংশের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে বিবেচনা করা হয়। ক্ষমতা ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক ধরা হয় একে। 

>> আরও পড়ুন: খাঁটি সোনা চেনার উপায়

প্রাচীন রোম এবং মধ্যযুগীয় ইউরোপে উচ্চবংশীয় পরিবারের সদস্য ব্যতীত আর কারও জন্য স্বর্ণ পরিধান করা আইনত অবৈধ ছিল। উচ্চপদস্থ ব্যক্তির পোশাকে সোনা ও রূপার সুতা এবং দামী পাথর ব্যবহার করা হতো। এছাড়াও রাজদরবারের সাজসজ্জা, রাজা-রানীর সিংহাসন, মুকুট, তলোয়ার ও গহনার অলংকরণে সোনার ব্যাপক ব্যবহার চোখে পড়ে।

স্বর্ণকে বিজয়ের প্রতীক বলা হয়। এজন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে স্বর্ণের মেডেল, ট্রফি দেওয়ার চল রয়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবলের ট্রফিটি সম্পূর্ণ সোনার তৈরি। 

gold

সোনার এত দাম কেন? 

আসলে স্বর্ণের মধ্যেই রয়েছে এমন কিছু বস্তুর সংমিশ্রণ যা একে বিরল বৈশিষ্ট্য এবং মুদ্রা হিসেবেও ব্যবহারযোগ্যতা দিয়েছে। মাটির নিচে যেসব খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়, তার সহজলভ্যতা ও আহরণের হিসেবেও স্বর্ণ অত্যন্ত বিরল। প্রতিবছর খুব কম পরিমাণ স্বর্ণ উত্তোলন করা সম্ভব হয়।

>> আরও পড়ুন: হীরার গয়না কত দিন পর পর পরিষ্কার করা উচিত

এছাড়া স্বর্ণ একটি অবিক্রিয়াশীল পদার্থ এবং এটি রূপা বা লোহার মতো অক্সিডাইজ করে না (কালচে হয়ে যাওয়া)। এই কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সোনার ওজন অপরিবর্তিত থাকে। মূলত বিরল সব বৈশিষ্ট্যের কারণে এই ধাতুর এত দাম। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর