শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দেখা হওয়ার অভূতপূর্ব সেই দিনটি 

পারুল ইসলাম
প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২২, ০৪:৩৪ পিএম

শেয়ার করুন:

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দেখা হওয়ার অভূতপূর্ব সেই দিনটি 

নব্বইয়ের দশকে আমাদের জেনারেশানের সবাই এক অর্থে হিমু ছিল। না, আমরা সবাই হলুদ পাঞ্জাবী পরে খালি পায়ে চলতাম না। তবে হিমুর মতোই পাগলাটে স্বভাবের ছিলাম, হিমুর জন্মদাতার জন্য। আমাদের শিরা-উপশিরায় বাস করতেন তিনি।আমরা প্রতিটা নিশ্বাসে অনুভব করতাম তাকে। 

আমাদের টার্গেট থাকতো কবে নতুন বই আসবে? কী উপায়ে তা কিনব? টিফিনের টাকা থেকে একটা অংশ পরম যত্নে আলাদা করতাম হুমায়ূন আহমেদের নতুন বই কিনবো বলে। আহা কী সেই উন্মাদনা! কী পাগলামি! 


বিজ্ঞাপন


একবার তিনি রংপুরের ছোট্ট শহর নীলফামারী এলেন একটা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হয়ে। সাথে ছিলেন আসাদুজ্জামান নূর, মোজাম্মেল হক সহ আরও বেশ কিছু তুখোড় অভিনেতা। আমি ডানে-বামে কারো দিকে না তাকিয়ে এক ঘোর লাগা অবাক বিস্ময় নিয়ে এগিয়ে গেলাম তার খোঁজে গ্রিন রুমের দিকে। কেন গেলাম জানি না। তবে এটুকু জানতাম, মঞ্চে আসার আগে নার্ভাসনেস দূর করতে তিনি তার শেষ সিগারেট খাবেন।

humayun

গ্রিন রুমের দরজা অব্দি পৌঁছে আমার হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিল। আমি অনুভব করছিলাম জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে পারি। নিজেকে সংযত করে এক পা দু'পা করে এগিয়ে গেলাম তার কাছে। নিজের অজান্তে ধুপ করে বসে পড়ে তার পা ছুঁয়ে সালাম করলাম।না তিনি খুব একটা অবাক হননি। হয়তো এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে তার সাথে। কারণ তখন দেশের প্রতিটি কোণ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল তার অগণিত ভক্ত। নিজেকে সামলে কোনোভাবে উঠে দাঁড়াতে তিনি জানতে চাইলেন- ‘অটোগ্রাফ চাই?’ মোহাচ্ছন্ন ভাবে জবাব দিলাম- ‘জি চাই’। 

তিনি কাগজ চাইলেন। আমি দিতে পারলাম না। ছোট্ট ওয়ালেটের কোণায় নিজের একটা সাদাকালো পাসপোর্ট সাইজ ছবি পেলাম। তার উল্টো পাশে অটোগ্রাফ চাইলাম। তিনি ছবিটি হাতে নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখলেন এবং সযত্নে তার বুক পকেটে রেখে বললেন- এটা আমার কাছেই থাক। আমি ধন্য হলাম।


বিজ্ঞাপন


parul

আবার মাথা ঝিম ঝিম করতে শুরু করল আমার। আমার চারপাশ ঝাপসা হয়ে আসছিল। আবার তাকে সালাম জানিয়ে নেশাগ্রস্তের মতো হাতড়ে এসে বসলাম দর্শক সারিতে। ততক্ষণে তিনি গ্রিন রুম থেকে তার শেষ সিগারেটের ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন মঞ্চে। 

>> আরও পড়ুন: হুমায়ূন আহমেদ একজনই

কিন্তু আমি তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমার চোখ ঝাপসা। কানে শো শো শব্দ। শরীর মন জুড়ে এক অদ্ভুত শিহরণ। মনে মনে শুধু ভাবছিলাম আমি পাইলাম, তাহার দেখা পাইলাম। আমার স্বপ্ন পুরুষের দেখা পাইলাম। 

parul

এই ঘটনার প্রায় বছর দশেক পর আবার তার সঙ্গে দেখা করার এক সুযোগ হলো নুহাশ পল্লীতে। কিন্তু না সেদিন আমি আর দেখা করিনি। দেখা করার ইচ্ছেও পোষণ করিনি। আমার আগের স্মৃত টুকু আগলে রাখতে চেয়েছি শুধু।

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর