বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ইমিগ্রেশনের ভোগান্তি পেরিয়ে স্বস্তির বৃষ্টির দেখা

মো. শাহিন রেজা
প্রকাশিত: ০৩ আগস্ট ২০২২, ১০:৩৩ এএম

শেয়ার করুন:

ইমিগ্রেশনের ভোগান্তি পেরিয়ে স্বস্তির বৃষ্টির দেখা

এক সময় বর্ষা মৌসুমে কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হতো। মাঝে মাঝে ঝুম বৃষ্টি আনমনা করে তুলত আমাকে। বৃষ্টি ভালোবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ অন্যরকম ভালোলাগা তৈরি করে। আমাদের টিনের ঘর থাকায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে বৃষ্টির শব্দ উপভোগ করতাম। 

অনেকই বলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃষ্টি পৃথিবীর অন্যতম সেরা বৃষ্টি। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর বিষয়টি অনুধাবন করেছিলাম। সিনিয়র জুনিয়ররা বৃষ্টি আসলেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৃষ্টির ছবি দিয়ে সুন্দর সুন্দর ক্যাপশন লিখে পোস্ট করতেন। কেউবা ফুটবল নিয়ে হলের মাঠে, সেন্ট্রাল ফিল্ডে খেলতে শুরু করতো। 


বিজ্ঞাপন


travelতবে হলের ছাঁদে উঠে ঝুম বৃষ্টিতে ভিজতে যে অদ্ভুত অনুভূতি হয় তা কোনো শব্দ দিয়ে বোঝানো যাবে না। ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত বৃষ্টি নিয়ে আমাদের সবারই রয়েছে নানান সুখের স্মৃতি। তবে এবার আমার স্মৃতির ঝুলিতে যোগ হলো ভিন দেশের বৃষ্টি।  

খুব সকালে বাড়ি থেকে রওনা হলাম বেনাপোল স্থল বন্দরের উদ্দেশ্যে। ইমিগ্রেশন লাইনে আমার সামনে কয়েক শ যাত্রী। বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন শেষ করতে পারলেও ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনে অনেক সময় লেগে যায়। আমার সামনে চার জন শিক্ষার্থী ছিল যারা ভারতের পাঞ্জাবের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছেন।

travelরোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ৮ ঘণ্টার বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ভারতের পেট্রপোলে যখন পৌঁছাই সবাই তখন রীতিমতো ক্লান্ত। বেশ কিছুদিন ধরে বেনাপোল বন্দরে অনেক ভিড় হচ্ছে। ভোরে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকের  ইমিগ্রেশন শেষ করতে রাতও হয়ে যায়। আমারা বর্ডার পার হয়েই একটি চায়ের দোকানে বসে চা খেয়ে একটু ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করলাম। মুদ্রা বিনিময় করে অটো নিয়ে যশোর রোড ধরে রওনা হলাম বনগাঁ রেল স্টেশনের দিকে। যশোর রোড বলতে কলকাতার দমদম থেকে বাংলাদেশের যশোর শহর পর্যন্ত মহাসড়ককে বোঝায়।

অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা শহর যশোরের সাথে তৎকালীন ভারতের রাজধানী কলকাতার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার জন্য এই রাস্তা নির্মাণ করা হয়। বর্তমান সময়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য আমদানি রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই যশোর রোড। গ্রামের মুরব্বিদের মুখে শুনেছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ ভারতে এই পথ দিয়েই পাড়ি জমিয়েছিল। এই সড়ক সম্পর্কে কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ তাঁর বিখ্যাত কবিতা সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড লিখেছিলেন। যশোর সীমান্তে এবং এর আশপাশের অঞ্চলে বসবাসকারী শরণার্থীদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করে এই কবিতাটি তিনি লেখেন। 


বিজ্ঞাপন


travelঅটোতে যাওয়ার পথে সড়কের দুই ধারে শতবর্ষী গাছ দেখতে পেয়েছি। কিছু সময় পরে আমরা বনগাঁ স্টেশনে পৌঁছে যাই। আকাশে তখন প্রচণ্ড মেঘ। টিকিট কেটে ট্রেনে বসতেই গন্তব্যের পথে চলতে শুরু করলো ট্রেন। একটু পরেই ক্লান্ত শরীরে ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শ শিথিলতা দেয়। হঠাৎই জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছটা শরীরে লাগে। এক নিমিষেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। বৃষ্টির মধ্যে দিয়েই ট্রেন ছুটে চলতে থাকে। 

দ্রুত গতির বৈদ্যুতিক ট্রেনের শব্দের সঙ্গে বৃষ্টির শব্দের সংমিশ্রণ মনের মধ্যে ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি করেছিল। বেশ পথ অতিক্রম করার পর বৃষ্টি থেমে গেলেও পরিবেশেটা শীতল ছিল। 

travelমনে মনে ভাবছিলাম আজ বৃষ্টি আমাদের শীতল করলেও অন্যদিন অন্য মানুষের বেশ ভোগান্তি দেয় ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া। বিশেষ করে অনেক সময় ধরে ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে যায়। আমার সামনেই একজনকে অসুস্থ হতে দেখেছি। ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া আরও সহজ ও দ্রুততার সঙ্গে করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। ভোগান্তি কমাতে আমারা এমন প্রত্যাশা করতেই পারি।

লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর