শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

সুপার ফুড কিনোয়ার ৬ উপকারিতা

ফারদীন হক জ্যোতি
প্রকাশিত: ০৪ জুলাই ২০২২, ১১:৩৬ এএম

শেয়ার করুন:

সুপার ফুড কিনোয়ার ৬ উপকারিতা

বাংলাদেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের পছন্দের তালিকায় তাই যুক্ত হচ্ছে পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালার চাষ করা প্রোটিন সমৃদ্ধ শস্যদানা কুইনোয়া অথবা কিনোয়া।  

এটি মূলত ধান বা গমের মতই এক ধরনের বীজ। ভাত বা রুটি খেতে খেতে মুখে যদি অরুচি ধরে যায় তাহলে কিনোয়া হতে পারে উত্তম বিকল্প। এটি একটি সুষম খাদ্য। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি সিক্স, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়ামসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ এবং ফাইবার রয়েছে। প্রায় সকল প্রকার পুষ্টি গুণ আছে বলে কিনোয়া ‘সুপার ফুড’ হিসেবে পরিচিত।


বিজ্ঞাপন


quinoaএই শস্যদানাটির জন্মস্থান দক্ষিণ আমেরিকার পাহাড়ি অঞ্চল হলেও বতর্মানে এটি বাংলাদেশেও উৎপাদন হচ্ছে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছর গবেষণার পর প্রাথমিক পর্যায়ে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও পটুয়াখালী জেলায় কিনোয়া চাষ হয়। এরপর এটি বিস্তার লাভ করে নীলফামারী বগুড়াসহ দেশের অন্যান্য বেশ কয়েকটি জেলাতে উৎপাদন হতে দেখা যাচ্ছে। 

খরাপ্রবণ ও লবণাক্ত উভয় মাটিতেই কিনোয়া চাষ সম্ভব। এটি রোপণের উপযুক্ত সময় মার্চ-এপ্রিল আর চাষের আদর্শ সময় নভেম্বরের মাঝামাঝি। যেহেতু উচ্চ মান সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাদ্য শস্য এবং এর ব্যাপক চাহিদা দেশে ও দেশের বাইরে রয়েছে তাই কিনোয়া চাষে বাংলাদেশের কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে পারলে কৃষকদের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

quinoaএটি চাষ করা যেমন সহজ তেমন এটি রান্না করাও কঠিন কিছু নয়। চাল বা গমের মতন করেই কিনোয়া দিয়ে বিভিন্ন রকম সুস্বাদু খাদ্য প্রস্তুত করা যায়। শরীরের জন্য বেশ উপকারি এটি। কিনোয়ার কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা চলুন জেনে নেওয়া যাক। 

মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে স্বস্তি: অনেকেই মাইগ্রেনের অসহ্য রকম যন্ত্রণা দীর্ঘদিন ধরে সহ্য করে যাচ্ছেন। এর জন্য বহু ওষুধ খেয়েও আশানুরূপ ফল যারা পাচ্ছেন না তারা কিনোয়ার দ্বারস্থ হতে পারেন। এটি মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্ত চলাচলে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্কের নালিগুলোকে শিথিল করে। যার ফলে মাইগ্রেনের ব্যথা কম হয়। তাছাড়াও কিনোয়া ম‍্যাগনেশিয়ামের ভালো উৎস যা মাইগ্রেনের ব্যথা অনেকাংশেই দূর করে।


বিজ্ঞাপন


quinoaডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: সুগারের সমস্যা থাকা রোগীদের অনেক কিছুই খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হয়। তবে তাদের খাদ্যতালিকায় নতুনভাবে যুক্ত হতে পারে কিনোয়া। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়তে দেয় না। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীর সুস্থ রাখে। 

রক্ত স্বল্পতা দূর করা: বিভিন্ন কারণে মানবদেহে রক্তের পরিমাণ কম থাকতে পারে। এই রক্ত স্বল্পতার সমস্যা দূর করতে কিনোয়া বেশ কার্যকর। কারণ এতে রয়েছে আয়রন। তাছাড়াও এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন খনিজ উপাদান মানব দেহে হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সহায়তা করে। এটি রক্তে স্বাভাবিক অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং লোহিত রক্তকণিকা গুলি বৃদ্ধি করে। 

quinoaত্বক ও চুলের সুস্থতায়: আমরা সকলেই জানি চুলের প্রধান উপাদান প্রোটিন। এই প্রোটিনের যোগান অনেকাংশেই পূরণ করতে পারে কিনোয়া। চুল পড়ে যাওয়া, ভেঙে যাওয়া, উঠে যাওয়ার মতন গুরুতর সমস্যা থেকে চুলকে রক্ষা করতে পারে কিনোয়াতে থাকা প্রোটিন। ক্ষতিগ্রস্ত চুল ঠিক করে নতুন চুল গজাতেও এটির ভূমিকা অতুলনীয়। 

বলিরেখা দূর করা: কিনোয়াতে থাকা ভিটামিন বি ত্বকে বলিরেখা পড়তে দেয় না। ফলে চামড়ায় বয়সের ছাপ কম দেখা যায়। ব্রণসহ নানা সমস্যা থেকে এটি ত্বককে রক্ষা করে দীর্ঘদিন সজীব রাখতে সাহায্য করে। 

quinoaওজন কমাতে: এই শস্যদানায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা ধীরে ধীরে হজম হয় এবং শরীরে কোনো খাবারকে জমতে দেয় না। এটি সাধারণত ভাত বা রুটির মতন সহজেই হজম হয়ে যায় না। তাই এটি পেটের ভেতরে গেলে পেটকে অনেকক্ষণ ভর্তি রেখে বাড়তি খাবারের চাহিদা কমাতে পারে। সুতরাং কিনোয়া খাবারের তালিকায় রাখলে কাঙ্ক্ষিত সময়ে ওজন কমিয়ে শরীর সুস্থ থাকা যায়। 

উপকারি কিনোয়ার নানা উপকারিতার কথা তো জানলেন। এখন থেকে তবে খাদ্যতালিকায় রাখুন এটি। 

লেখক পরিচয়: ফিচার লেখক

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর