বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রংপুরের ঐতিহ্য: শোলকা, প‍্যালকা, সিঁদল 

ফারদীন হক জ্যোতি
প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২২, ০১:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

রংপুরের ঐতিহ্য: শোলকা, প‍্যালকা, সিঁদল 

এক প্লেট গরম ভাত। সঙ্গে এক বাটি শোলকা আর সিঁদল ভর্তা। রংপুরের বাসিন্দা হলে এতটুকুতে জিভে জল চলে আসবে আপনার। প্রতিটি জেলারই কিছু ঐতিহ্যবাহী খাবার থাকে। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা রংপুরের ঐতিহ্যবাহী তিনটি খাবার হলো শোলকা, প্যালকা আর সিঁদল। কালের বিবর্তনে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসলেও এই খাবারগুলো আগের জৌলুস ছড়িয়ে যাচ্ছে এখনও। 

শোলকা: 


বিজ্ঞাপন


বিভিন্ন রকম শাক দিয়ে তৈরি একটি পদ শোলকা। এটি তৈরির প্রধান উপকরণ পাটশাক ও খাবার সোডা। শুনতে সহজ মনে হলেও এই পদটি রান্নার প্রক্রিয়া ভিন্ন। পাতা কাটা হয় ভিন্নভাবে। পাটশাকের পাতা গুছিয়ে কচু শাকের পাতার ভিতরে দিয়ে হাতের মুঠো ভর্তি করে নিয়ে কুচি কুচি করে কাটতে হয়। পাটশাক কিছুটা তেতো স্বাদের হয় বলে তিতাভাব কাটানোর জন্য লাউশাক, কুমড়াশাক, পুঁইশাক, সজনে পাতা কিংবা নাপাশাকের পছন্দমতো কুচি করে শোলকা রান্নায় দেওয়া যায়। 

sholkaপ্রথমে অল্প পরিমাণে পানি গরম করে তাতে পরিমাণমতো লবণ, কাঁচা মরিচ, রসুন এবং খাবার সোডা দিতে হয়। এই পদটিকে পিচ্ছিল করতেই সোডা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মসলাযুক্ত পানিতে কেটে রাখা শাক দেওয়া হয়। ১০ থেকে ১৫ মিনিট অল্প আঁচে রান্না করলে শোলকা তৈরি হয়ে যায়। কেউ কেউ স্বাদ বাড়াতে এর সঙ্গে কাঁঠালের বিচিও যোগ করে থাকেন। 

সব থেকে আকর্ষণীয় বিষয় হলো শোলকা রান্নায় শুধুমাত্র মরিচ এবং রসুন ব্যবহার করার চল আছে। এই রান্নায় কোনো রকম তেল মসলা বা পেঁয়াজ ব‍্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। পিচ্ছিল হওয়ায় এটি দ্রুত খাওয়া যায়।  

palkaপ্যালকা: 


বিজ্ঞাপন


শোলকার মতনই বিভিন্ন প্রকার শাক দিয়ে তৈরি একটি সুস্বাদু খাবার প্যালকা। তবে এটির প্রধান উপকরণ নাপা শাক। সজনে পাতা, কচু পাতা, পুঁইশাক, কুমড়াশাক, বথুয়া, সলুক, ধনিয়া, রসুন, মরিচ, লবণ ও খাবার সোডা ব্যবহার করে রান্না করা হয় পেলকা বা প্যালকা। এটি এক ধরনের স্যুপ জাতীয় খাবার। এখানেও কোনো প্রকার তেল ব‍্যবহার করা হয় না বলে এটিও বেশ স্বাস্থ্যকর খাবার। শোলকা আর প‍্যালকা শুধুমাত্র খাদ্য হিসেবে যে সুস্বাদু তাই নয় বরং এতে আছে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। তাছাড়াও প্রচুর খাদ্যপযোগী আঁশ ও পাওয়া যায় এই খাবার থেকে।

সিঁদল: 

রংপুরের অত‍্যাধিক জনপ্রিয় একটি খাবার সিঁদল। এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলে জনপ্রিয় তাই নয় বরং পার্শবর্তী দেশ ভারতেও এর ব‍্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। মূলত ছোট মাছের শুকনো শুঁটকি আর কচুর ডাটা দিয়ে তৈরি হয় সিঁদল। পরবর্তীতে এর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আদা, রসুন, হলুদ, সরিষার তেল, খাবার সোডা আর এলাচও মিশিয়ে দিতে হয়।  

shidol

সিঁদল তৈরির পদ্ধতি ও বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ আলাদা ও স্বাদে সুস্বাদু হওয়ার এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে অনেক নারী উদ্যোক্তাও রংপুরের ঐতিহ্যবাহী এই খাবারটি নিয়ে কাজ করছেন। নারী উদ্যোক্তা জেসমিন আক্তার তাদের একজন। তার মতে, ‘রংপুরের ঐতিহ্যবাহী এসব খাবারের চাহিদা ব‍্যাপক। সঠিকভাবে প্রচার করতে পারলে এর চাহিদা আরও বাড়বে।’

গ্রামীণ নারীরা অনলাইনে সিঁদল বিক্রির মাধ্যমে মাসে আট থেকে দশ হাজার টাকা উপার্জন করে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর কথা প্রায় ভুলতে বসেছে সবাই। কিন্তু এই খাবারগুলো যেমন আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে, তেমনি এসব বিক্রির মাধ্যমে অনেকে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পারেন। 

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর