হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ নারীদের মধ্যে অনেক সময় পুরুষদের থেকে একেবারে ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। বেশিরভাগ মানুষ বুকে ব্যথাকেই হার্ট অ্যাটাকের মূল লক্ষণ হিসেবে জানে। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় এই উপসর্গ থাকেই না বরং তার বদলে দেখা যায় কিছু সূক্ষ্ম ও বিভ্রান্তিকর লক্ষণ।
যেমন—জ্বর ছাড়া ক্লান্তি, ঘাড় বা চোয়ালের ব্যথা, হালকা বমি ভাব, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট ইত্যাদি। এসব লক্ষণ অনেক সময় হজমের সমস্যা, দুশ্চিন্তা বা অন্য কোনো কারণে ভেবে এড়িয়ে যাওয়া হয়, ফলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না।
বিজ্ঞাপন

নারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের যেসব সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়:
মায়ো ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, নারীরা হার্ট অ্যাটাকের সময় যেসব লক্ষণ অনুভব করেন তা হলো—
১. ঘাড়, চোয়াল, কাঁধ বা পিঠের ওপরের অংশে ব্যথা
২.বমি বমি ভাব বা বমি
৩.মাথা ঘোরা বা দুর্বল লাগা
৪.অস্বাভাবিক ক্লান্তি
৫.এক বা দুই বাহুতে ব্যথা
৬.অতিরিক্ত ঘাম
৭.হজমে সমস্যা বা বুকজ্বালা
বিজ্ঞাপন
এই লক্ষণগুলো অনেক সময় বিশ্রামের সময় বা ঘুমের মধ্যেও দেখা দেয়। বুকে ব্যথা ছাড়াও এগুলো হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের পূর্বাভাস।

নারীদের উপসর্গ আলাদা কেন হয়?
নারী ও পুরুষের হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর গঠনে কিছু পার্থক্য থাকে। নারীরা সাধারণত ‘করোনারি মাইক্রোভাসকুলার রোগ’-এ বেশি আক্রান্ত হন, যেখানে হৃদয়ের ছোট ছোট রক্তনালীগুলো বন্ধ হয়ে যায়—যা সাধারণ পরীক্ষায় ধরা পড়ে না।
আরও পড়ুন: দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে কি ক্ষতি হয়?
এছাড়া, হরমোনের পরিবর্তন, বিশেষ করে মেনোপজের আগে-পরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যাওয়া হৃদরোগের উপসর্গ ও প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।
নারীদের ঝুঁকির কারণ:
১. মানসিক চাপ ও হতাশা
২. ডায়াবেটিস
৩. গর্ভকালীন জটিলতা (যেমন প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া)
৪.অটোইমিউন রোগ (যেমন লুপাস বা স্ক্লেরোডার্মা)
৫.মেনোপজ
বিশেষ করে যেসব নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তারা অনেক সময় নীরব হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন, অর্থাৎ লক্ষণ না দেখেই হার্ট অ্যাটাক হয়।
হৃদরোগে নারীদের চিকিৎসা:
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন অনুযায়ী, নারীরা পুরুষদের তুলনায় হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে কম গুরুত্ব পান। তাদের সঠিক সময়ে টেস্ট, প্রয়োজনীয় ওষুধ (যেমন অ্যাসপিরিন, স্ট্যাটিন), কিংবা হার্ট রিহ্যাবিলিটেশন সুবিধা দেওয়া হয় না। চিকিৎসা ব্যবস্থায় এখনো কিছুটা লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য কাজ করে।

নারীদের জন্য হার্ট ভালো রাখার কিছু টিপস:
১. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
২. মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা সাপোর্ট গ্রুপে অংশ নিন।
৩. রক্তচাপ, ব্লাড সুগার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৪. প্রতিদিন অন্তত ৭–৯ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
নারীদের হৃদরোগের লক্ষণ ভিন্ন হলেও তা কোনো অংশে কম গুরুতর নয়। সচেতনতা, সময়মতো সঠিক চিকিৎসা, এবং জীবনযাপনে পরিবর্তনই পারে এই ভয়াবহ ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

