সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে সান্ডা (Sanda) এখন সবার চেনা। মরুর দেশের গুইসাপ গোত্রীয় প্রাণীটিকে ধরার ভিডিও বর্তমানে ফেসবুকে ভাইরাল। আর তাই সান্ডা নিয়ে পোস্ট, ভিডিও, মিমের ছড়াছড়ি। সান্ডার পাশাপাশি আলোচনায় আসছে একটি পণ্যের নাম। সেটি হলো সান্ডার তেল (Sanda Oil)। বলা হয়, এই তেল নাকি যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আসলেই কি তাই?
সান্ডার তেলের কার্যকারিতা নিয়ে বাস্তব তথ্য এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণ খুবই সীমিত। চলুন এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জেনে নিই-
বিজ্ঞাপন

বাস্তব তথ্য অনুযায়ী:
১. বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই:
এখন পর্যন্ত সান্ডার তেল বা এই জাতীয় হারবাল তেলের কার্যকারিতা প্রমাণ করতে কোনো নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণা পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা প্রমাণ নেই।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন-
২. মার্কেটিং যখন গুজব নির্ভর:
এই তেলগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে যে দাবি করা হয়, তা মূলত প্রচার এবং বিজ্ঞাপন নির্ভর। পণ্য বিক্রির একটি কৌশল বলতে পারেন।

৩. অ্যালার্জির ঝুঁকি থাকে:
এর উপকারিতার কোনো প্রমাণ তো নেই ই বরং কিছু মানুষের ত্বকে এই তেল ব্যবহারের পর অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি ত্বকে জ্বালাপোড়ারও কারণ হতে পারে।
৪. ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ:
কোনো ওষুধ বা তেলই শারীরিক প্রয়োজনে ব্যবহার করলে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত ব্যবহার করা উচিত নয়। সান্ডার তেল ভুলভাবে বা অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হতে পারে।

যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে কি সান্ডার তেল ব্যবহার করা উচিত?
যেহেতু সান্ডার তেলের কার্যকারিতার কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই তাই এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। শারীরিক দুর্বলতা বা অন্য কোনো যৌন সমস্যা থাকলে একজন ইউরোলজিস্ট বা যৌন রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। এটিই স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ পথ।
সান্ডার তেলের বিকল্প উপায়:
যৌন স্বাস্থ্য বা শক্তি বৃদ্ধি করতে জীবনযাপন অনেক বড় প্রভাব রাখে। খাবারদাবার, ঘুম, বিভিন্ন অভ্যাস এর সঙ্গে জড়িত। চলুন এ সম্পর্কে আরও বিষদ জেনে নিই-

১. সুষম খাদ্য ও পুষ্টি:
খাদ্যতালিকায় রাখুন পর্যাপ্ত প্রোটিন, দুধ, বাদাম, ডিম, কলা, খেজুর, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার। এসব খাবার যৌন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। দেহে জিঙ্ক, ভিটামিন ডি এবং ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে যৌন দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
২. ব্যায়াম ও রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি:
যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চার বিকল্প নেই। নিয়মিত ব্যায়াম (বিশেষ করে স্কোয়াট, কেগেল এক্সারসাইজ) দেহের রক্তপ্রবাহ বাড়ায় এবং আত্মবিশ্বাস উন্নত করে। যা যৌন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।

৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ:
স্থূলতা যৌন ক্ষমতা কমাতে পারে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
৪. মানসিক চাপ কমানো:
দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ বা মানসিক চাপ যৌন উত্তেজনা ও যৌন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই চাপমুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন। মেডিটেশন, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করুন।

৫. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া:
যদি দীর্ঘমেয়াদী যৌন দুর্বলতা বা ইরেকশন সমস্যা হয়, তাহলে একজন ইউরোলজিস্ট বা সেক্সোলজিস্টের পরামর্শ জরুরি।
৬. অন্য স্বাস্থ্য সমস্যা:
অনেক সময় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা হরমোনজনিত সমস্যার উপসর্গও হতে পারে এটি।

যৌন স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। লোভনীয় বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে কোনো তেল বা ওষুধ ব্যবহার না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। জীবনযাপনে পরিবর্তন আনুন। পর্যাপ্ত ঘুম আর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করুন।
এনএম

